যাকাত ইসলামের পাঁচটি ফরযের একটি। কালিমায়ে শাহাদাত ও সালাতের পর যাকাতর স্থান। যাকাতর ব্যাপারে যে কৃপণতা করল অথবা কম আদায় করল সে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত ও আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত।ইসলামের চেতনা হল, দরিদ্র ব্যক্তিকে এই পরিমাণ যাকাতর অর্থ দেয়া যাতে দ্বিতীয়বার তাকে আর যাকাতর জন্য হাত পাততে না হয়। কারণ হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা অসহায়দের যাকাত দেবে তখন তাকে ধনী বানিয়ে দেবে।’

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত’। সূরা আলে-ইমরান: (১৮০)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার যাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপ সৃষ্টি করা হবে, যার দুটি চোঁয়াল থাকবে, যা দ্বারা সে তাকে কিয়ামতের দিন পেঁচিয়ে ধরবে, অতঃপর তার দু’চোয়াল পাকড়ে বলবে: আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধন’। (সহীহ বুখারি)

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর‘। সূরা আত-তওবা: ৩৪-৩৫।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘হালাল উপার্জন থেকে যে খেজুর পরিমাণ সদকা করল, আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত গ্রহণ করেন না, আল্লাহ তা ডান হাতে গ্রহণ করেন, অতঃপর সদকাকারীর জন্য তা বৃদ্ধি করতে থাকেন, যেমন তোমরা অশ্বশাবক লালন কর অতঃপর পাহাড়ের ন্যায় পরিণত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

যাকাত দ্বারা আল্লাহ পাপসমূহ দূরীভূত করেন, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সদকা পাপ মোচন করে দেয়, যেমন পানি আগুন নির্বাপিত করে দেয়।’ (সুনানে তিরমিযি)

যাকাত নিদিষ্ট সম্পদের উপর ওয়াজিব হয়, যেমন- স্বর্ণ ও রূপা। শর্ত হচ্ছে, এর নিসাব পূর্ণ হতে হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, আর রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ অর্থের মালিক হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ ও রূপা অলংকার বা যে অবস্থাতে থাক, তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। অতএব নারীর পরিধেয় অলংকারের উপর যাকাত ওয়াজিব যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়, সে নিজে পরিধান করুক বা অন্যকে পরিধান করতে দিক।

যাদের ওপর যাকাত ফরজ : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর মালিকানায় নগদ আদায়যোগ্য ঋণের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে পূর্ণ এক চন্দ্রবছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার ওপর যাকাত আদায় করা ফরজ হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার)

যাদের যাকাত দেয়া যাবে : পবিত্র কোরআনে যাকাতর খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এসব খাত ছাড়া অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। ইরশাদ হয়েছে- যাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাতর কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এটি আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবা : ৬০)

১. ফকির অর্থাৎ যাদের নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন সমাধা করার মত সম্বল নেই অথবা যাদের নিকট যাকাত ফেতরা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই। ২. মিসকিন অর্থাৎ যারা সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত অথবা যাদের জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই। ৩.ইসলামী রাষ্ট্র হলে তার জাকাত তহবিলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। ৪. যাদের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে। ৫. যারা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত। ৬. মুসাফির ব্যক্তি ( বাড়ীতে সম্পদশালী হলেও) সফরে রিক্তহস্ত হয়ে পরলে। ৭.জাকাত দাতার ভাই-বোন, ভাতিজা- ভাতিজী, ভগ্নিপতি, ভাগ্না- ভাগ্নী, চাচা-চাচী, খালা-খালু, ফুফা-ফুফী, মামা-মামী, স্বাশুড়ী, জামাই, সৎ বাপ ও সৎ মা ইত্যাদি (যদি এরা গরীব হয়)। ৮. নিজের গরিব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে দেওয়া যায়। তবে এটা বেতন বাবদ কর্তন করা যাবে না।

যাদেরকে যাকাত দেওয়া উত্তম : ১.দ্বীনি এলেম পড়নে ওয়ালা এবং পড়ানে ওয়ালা যদি যাকাতর হকদার হয়, তাহলে এরূপ লোককে যাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। ২. তারপর যাকাত পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা। ৩.তারপর বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা। ৪. তারপর যাকাতর অন্যান্য প্রকার হকদারগণ।

সূত্র- অনলাইন থেকে
এবি/টিআর ২৯/৫/২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here