যাঁদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল, সেই তিন তারকা মেসি-হলান্ড-এমবাপ্পের কেউই ছিলেন না পরশু ফিফা দ্য বেস্ট অনুষ্ঠানে। তবে লন্ডনের লালগালিচা আর মঞ্চে আলো ছড়িয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের অনেক সাবেক ও বর্তমান তারকা। মঞ্চের এই ছবিতে আছেন বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কারজয়ীরা। ছবি: এএফপি
আর্লিং হলান্ডের কি একটু রাগ হচ্ছে?
হলে সেটা কার ওপর? কিলিয়ান এমবাপ্পে, মো সালাহ, হ্যারি কেইন, লুকা মদরিচ, ভার্জিল ফন ডাইক, রবার্ট লেভানডফস্কিসহ বিশ্বের ১০৭ জন অধিনায়কের যে কারও ওপর রাগ করতে পারেন ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। কিংবা সবার ওপরই। তাঁদের ভোটের কারণেই যে শেষ পর্যন্ত ২০২৩ ফিফা দ্য বেস্টে বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড় হতে পারলেন না হলান্ড। হয়ে গেলেন লিওনেল মেসি!
সেরা তিনে মেসি ও হলান্ড ছাড়াও ছিলেন এমবাপ্পে। তবে ফিফা দ্য বেস্টে এবার পুরুষ বিভাগের পুরস্কারের জন্য যে সময়টা (১৯ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ২০ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত) বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, সেই সময়কালের পারফরম্যান্স ও অর্জনে বাকি দুজনের চেয়ে হলান্ড এত এগিয়ে যে আসলে মেসি-এমবাপ্পের মধ্যে কে দ্বিতীয় বা তৃতীয় হন, সেটা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে সন্দেহই থাকার কথা ছিল না।
কিন্তু ওই যে অধিনায়কদের ভোট, তাতেই কপাল পুড়ল হলান্ডের। সেরা বেছে নিতে গিয়ে প্রাথমিক তালিকার ১২ জনকে ভোট দিয়েছেন ফিফার সদস্য সব দলের কোচ ও অধিনায়ক, প্রতিটি দেশ থেকে একজন ফুটবল সাংবাদিক ও সারা বিশ্বের ফুটবল সমর্থকেরা। ভোটের চার বিভাগের প্রতিটিতে সেরা পেয়েছেন ১৩ পয়েন্ট করে। দ্বিতীয় সেরা ১১ পয়েন্ট ও তৃতীয় সেরা ৯। এরপর যথাক্রমে ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১, ০ পয়েন্ট। এই চার বিভাগের পয়েন্ট যোগ করেই চূড়ান্ত হিসাব করা হয়েছে। তাতে মেসি ও হলান্ড দুজনের পয়েন্টই ৪৮, এমবাপ্পের ৩৫। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, সেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে মোট পয়েন্ট সমান হলে জাতীয় দলের অধিনায়কদের প্রথম পছন্দের ভোট বা ৫ পয়েন্টের ভোট যিনি বেশি পাবেন, তিনি ওপরে থাকবেন। সেই হিসাবেই হলান্ডের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে ২০২৩ সালের বর্ষসেরা হয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। ১০৭ জন অধিনায়ক বছরের সেরা খেলোয়াড়ের ভোট দিয়েছেন মেসিকে। হলান্ডকে সেরা ভেবেছেন ৬৪ জন।
গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড ৩৬ গোল, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫২ গোল ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ট্রেবল জিতেছেন হলান্ড। এমন পারফরম্যান্স ও অর্জন শুধু গত মৌসুমেরই নয়, ফুটবল ইতিহাসেও একক কোনো মৌসুমে অন্যতম সেরা। কিন্তু এরপরও হলান্ডের চেয়ে পিএসজির হয়ে লিগ আঁ ও ইন্টার মায়ামির হয়ে লিগস কাপ জেতা মেসিকে কোন ১০৭ জন অধিনায়ক এগিয়ে রেখেছেন, তাঁদের কয়েকজনের নাম তো শুরুতেই পড়েছেন। কোন যুক্তিতে তাঁদের এমন ভোট, সেটা একটা রহস্যই বৈকি!
তবে অধিনায়কদের ভোটে টাইব্রেক না করে কোচদের বা সংবাদমাধ্যমের ভোট হিসাব করলে মেসি নন, সেরা পুরুষ খেলোয়াড় হয়ে যেতেন হলান্ড। কোচদের বিভাগে মোট ৫৪১ পয়েন্ট পেয়েছেন সিটি তারকা। মেসি পেয়েছেন ৪৭৬ পয়েন্ট। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভোটে হলান্ডের পয়েন্ট ৭২৯, মেসির ৩১৫।
যেকোনো সেরার পুরস্কার নিয়েই মতভেদ থাকতে পারে, হতে পারে বিতর্কও। কিন্তু মেসির এবার ফিফার সেরা হওয়াটা সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসেই সবচেয়ে বিতর্কিত পুরস্কার হয়ে থাকবে। কোনো সন্দেহ নেই, আগামী কয়েক দিন এ নিয়ে ফুটবলে আরও অনেক তর্কবিতর্ক হবে। বিশ্বকাপজয়ী জার্মান অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউস তো এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ‘সে (মেসি) কিছুতেই এবারের বিজয়ী হতে পারে না। আমি মনে করি, সে গত ২০ বছরের সেরা খেলোয়াড়।কিন্তু প্যারিস ও মায়ামিতে গিয়ে সে শুধু উন্মাদনাই তৈরি করেছে, বড় কিছু জেতেনি।’
মেসি অবশ্য বলতে পারেন, এতে আমার দায় কী! লোকে ভালোবেসে আমাকেই সেরা বানিয়ে দিলে আমি কী করব! তিনি নিজে অবশ্য ভোট দিয়েছেন বেশ বুঝেশুনেই, হলান্ডকে এক নম্বরে রেখে দুই ও তিনে রেখেছেন যথাক্রমে এমবাপ্পে ও হুলিয়ান আলভারেজকে। এ থেকে অবশ্য তিনি নিজেকে এবারের সেরা মনে করেন কি না, তা বোঝার উপায় নেই। কারণ, নিজেই নিজেকে ভোট দেওয়ার নিয়মই নেই এখানে।
পুরস্কার নিতে মেসি গত পরশু লন্ডনে যাননি। যাননি হলান্ড কিংবা এমবাপ্পেও। কে জানে, বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতেই কি না!
সেরা পুরুষ খেলোয়াড় ছাড়া অন্য সব বিভাগে পুরস্কারজয়ীদের নিয়ে অবশ্য খুব বেশি বিতর্কের সুযোগ নেই। সিটিকে ট্রেবল জেতানো পেপ গার্দিওলা সেরা কোচ হবেন, এ নিয়ে যেমন কোনো সন্দেহ ছিল না, তেমনি চমক নয় তাঁর দলের এদেরসনের সেরা গোলকিপার হওয়াও।
মেয়েদের ফুটবলের বর্ষসেরা হয়েছেন স্পেন ও বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আইতানা বোনমাতি। স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি যিনি জিতেছিলেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলও। বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও সুপার কাপ। নারী দলের বর্ষসেরা কোচ হয়েছেন বিশ্বকাপের রানার্সআপ ইংল্যান্ড দলের ডাচ কোচ সারিনা ভাইগমান।