অভিনেতা, নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ী ১৮৮৯ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার রামরাজাতলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবাসী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ও বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল। প্রথম অভিনয় ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ নাটকে। ১৯২১ সালে পেশাদার অভিনেতা হিসেবে ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে তাদের সঙ্গে মতানৈক্য হলে মঞ্চ ছেড়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। শরত্চন্দ্রের ‘আঁধারে আলো’ ও ‘চন্দ্রনাথে’র চিত্রায়ণে একই সঙ্গে পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকায় কাজ করেন। একটি নাট্যদল গঠন করে ১৯২৩ সালে শিশিরকুমার নাট্যমঞ্চে ফিরে আসেন। দ্বিজেন্দ্রলালের সীতা নাটকে রামচন্দ্রের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন। তাঁর অভিনয়ে অভিভূত হয়ে অমৃতলাল বসু তাঁকে থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। এ নাটকে তিনি কনসার্টের বদলে রোশনচৌকি, আসনব্যবস্থায় বাংলা অক্ষর, প্রবেশপথে আলপনা ও পূর্ণকলস, প্রেক্ষাগৃহে চন্দন-অগরু-ধূপের গন্ধ, পাদপ্রদীপের পরিবর্তে আলোক-সম্পাত এবং সিনের পরিবর্তে বক্সসেট প্রয়োগ করেন। শিশিরকুমার অভিনীত বিখ্যাত চরিত্রগুলো হলো : রঘুপতি ও জয়সিংহ (বিসর্জন), যোগেশ (প্রফুল্ল), জীবানন্দ (ষোড়শী), নাদির শাহ (দিগ্বিজয়ী), নিমচাঁদ (সধবার একাদশী) ও চন্দ্রবাবু (চিরকুমার সভা)। তিনি ১৯৪২ সালে ‘শ্রীরঙ্গম’ নামে একটি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে ‘বিশ্বরূপা থিয়েটার’ নামে পরিচিত। রঙ্গমঞ্চের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার বহু যুবককে পেশাদার নাট্যাভিনয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর কথা ছিল এর চেয়ে একটি জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করা ভালো। এ বছরেরই ৩০ জুন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।