মৃত্যুই যেন সব ভুলিয়ে না দেয়
=====================
সেকান্দর আলম বাবর
———————————
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, শিক্ষক নেতা, গোমদন্ডী আলহাজ বদরুচ মেহের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব নূর আহম্মদ। একজন প্রগতিশীল, স্বাধীনচেতা, সাধারণ জীবন চরিতের মানুষ, মানুষ গড়ার কারিগর। অনাড়ম্বর যাপিত জীবনের প্রতি কখনও ঝোঁক ছিল বলে মনে হয় না।
আমি এ নূর ব্লসম স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে এবং বোয়ালখালী প্রধান শিক্ষক ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে স্যারের সাথে মেশার অনেক সুযোগ হয়েছে। তিনি আমাকে সন্তানের মতোই ভালবাসতেন। দেখা সাক্ষাতে সালাম দিলেই, সালাম নিয়ে “কেন আছ?” শব্দটি আমাকে ব্যবহার করতেন। আজ খুব কানে শব্দটি আঁচরে পড়ছে। আর এ শব্দটি তাঁর থেকে আসবে না এটা নিশ্চিত। কারণ আজ সন্ধ্যায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। না ফেরার দেশে। (ইন্না—রাজেউন)। তাঁর সাথে অনেক স্মৃতি হৃদয়ের মানসপটে ভেসে আসছে। সেরকম একটি স্মৃতি আজ রোমন্থনের জন্য লিপিবদ্ধ করলাম।
ছবিটা ২০১৪সালের ২২ডিসেম্বরের। আমরা প্রধান শিক্ষক ফোরাম থেকে সফরে গেলাম পূর্ণ্যভূমি সিলেটে। সারারাত জার্নি। সকালে পৌঁছেই হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার জেয়ারত করালাম। শহ পরান (রহঃ) এর মাজার জেয়ারত করে বাসায় ফিরলাম, আমার বাড়ি থেকে কল গেলো-জরুরি কাজে আগামীকাল বাড়িই থাকতে হবে। বিষয়টি আমি স্যারদের জানালাম। আধ ঘন্টা পর নূর আহম্মদ স্যার বলল, বাড়ি থেকে ফোন আসছে-মায়ের খুব অসুখ। বাড়ি যেতে হবে। সবাই একটু অস্বস্থিই বোধ করল। তিন দিনের সফর, একদিনেই চলে যেতে হবে আমরা দু’জনকে। উপায় নেই- সকলকে ছাড়তেই হলো। সকল শিক্ষক আস্বস্থ হলো-যাক্, যাওয়ার সময় দু’জনই আছেে। এরই ফাঁকে দেদারছে অনেক জায়গা বেড়ালাম। রাত ৯টায় খেয়ে ধেয়ে দু’জনই বাসে উঠলাম। দু’জনই পাশাপাশি বসলাম। সিলেট থেকে চট্টগ্রাম-পুরো সময় জুড়েই স্যার নিজের জীবনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, আনন্দ বেদনা, সুখ দুঃখের গল্প করল।কখন ঘুম গেলো-কখনো গল্পের পরের এপিসোডটা বলল। জীবন সংগ্রামের অনেক কথা-পেশাজীবনের নানান সমস্যা-সম্ভাবনা। লিখতে গেলে হয়তো মহাভারত রচিত হবে। যাক্, পাশাপাশি বসে যাত্রার সময় পার করতে গিয়ে বুঝলাম, তিনি একজন সাদাসিধে মানুষ। তাঁর চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি, চেতনা, দায়িত্ববোধ, মাতৃভক্তি আমাকে প্রীতই করেনি-তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর থেকে ভালবাসার ঢালিটা তাঁর জন্য ছিল সবসময় উম্মুক্ত। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তাঁর মৃত্যুই যেন সব ভুলিয়ে না দেয় আমাদের, আমরা যেন তার রেখে যাওয়া সংগ্রামের পথ অনুসরণ করে শিক্ষক আন্দোলন বেগবান করতে পারি। আমিন।
————————————————————————–
তারিখ : ২৬.০৪.২০, রাত ১১.৪৫টা।