আকবর খান (এস এম আকবর) :
৫ সেপ্টেম্বর মাস্টারদার সহযোদ্ধা বিপ্লবী কামাল উদ্দিন খাঁ’র ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই বিপ্লবীর জন্ম ১৯০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি। মৃত্যুবরণ করেছেন ২০০৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জন্মস্থান চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা গ্রাম। প্রান্তিক জায়গা। শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর। সেখানেই তিনি বিপ্লবী মন্ত্রে জাগ্রত হয়েছেন। পরাধিনতার গ্লানি থেকে ভারতবাসীকে উদ্ধার করার মন্ত্র নিয়েছেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি বিপ্লবী জীবন ধারণ করে গেছেন। এলাকায় বিপ্লবী ও কমিউনিস্ট হিসেবে পরিচিত।
পরনে লুঙ্গি, গায়ে সাদা পান্জাবী, হাতে ছাতা বা লাঠি ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র “একতা” ও মাসিক “মুক্তির দিগন্ত” মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ফেরী করে বিক্রি করতেন। তিনি কখনো এই কর্মটিকে অসম্মান মনে করেননি। আমি তখন ছোট ছিলাম আমার কাছে ঐ পত্রিকা সমুহ নিয়ে প্রায় কয়েকদিন পর পর চলে আসতেন। আমরা ঘুম থেকে না উঠার আগেই তিনি আমাদের লাঠির হালকা বারি দিয়ে ঘুম থেকে তুলতেন।
এলাকায় ছোট বড় সবাই সম্মান করতেন। ধনী গরীব সবার সাথে তাঁর সখ্যতা ছিল। অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও কামাল খাঁকে সম্মানের সাথে দেখতেন। নিরহংকার এই মানুষটিকে কে সম্মান না করবে। তিনি এলাকায় কামাল দা নামে পরিচিত ছিলেন। হিন্দু মুসলমান কোন ভাগাভাগী ছিলনা। প্রচন্ড অসাম্প্রদায়িক। কি হিন্দু কি বৌদ্ধ সব বাড়িতে তাঁর খাবার রেডি থাকতো। স্কুল কলেজের সব ছাত্র কে স্নেহ করতেন নিজ সন্তানের মত। কোথায় খাওয়া কোথায় শোয়া নির্দিষ্ট কোন জায়গা ছিলনা। যেখানে রাত সেখানে কাইত। এ যেন এক বিপ্লবের মহানায়ক।
সমাজকে চেয়েছিলেন প্রগতি ও অসাম্প্রদায়িক ভাবে এগিয়ে নিতে। কতটুকু পেরেছেন সেটা ইতিহাস বলবে। তিনি মনে করতেন সমাজতন্ত্রই একমাত্র মুক্তির পথ। সমাজতন্ত্রেই হিন্দু মুসলমান ভাগাভাগি হয়না। এখন কিছু ভূঁইফোড় আওয়ামী হাইব্রিড রাজনৈতিক তাঁর ভিটে মাটি দখল করে নিয়েছে।
তাঁর দুই সন্তান জালাল ও তাহের ভাই উনার পার্টির সভ্য। ভিটেমাটি দখলের সময় জালাল ভাইকে ছুরি মেরে একটা চোখ পর্যন্ত নষ্ট করে দিয়েছে চিরদিনের জন্য।
এই কামাল খাঁ কোন দিন নিজের সম্পত্তির দিকে তাকাননি। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে ভেবেছেন। এমন দেশপ্রেমিক মানুষটি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি পাননি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ফকির ও ভিখিরী সেজে রাজাকারদের আস্তানার খোঁজ নিতেন। অথচ লোকটির মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পর্যন্ত নেই। আদর্শের প্রশ্নে আপোষ ছিলনা।সোভিয়েত বিপর্যয়েও তিনি পার্টি ছাড়েননি।
শেষ জীবনে অর্থকষ্ট ছিল তবুও কারও কাছে মাথা নোয়াননি। মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন।
মাস্টার দা যখন কড়লডেঙ্গা পাহাড়ের মেধসমুনি আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন তখন এই কামাল খাঁ গোলার ধান বিক্রি করে মাস্টারদাকে খাওয়াতেন। আমাদের বাড়ির খড়ের গাদা মধ্যে নাকি উনার দলের অস্ত্র-আনুসাঙ্গিক লুকিয়ে রাখতেন। রাজনৈতিক ভাবে উনি পশ্চিম বঙ্গের জ্যেতিবসুর ৩ বৎসরের (১৯১৮ ও ১৯২১) সিনিয়র ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে মাসিক ৩,০০০/টাকা ভাতা ও ৫ কাঠা জমি দেওয়ার কথা বললেও দেশ প্রেমের জন্য স্বদেশ ত্যাগ করেননি। স্বাধীনতার পরবর্তী উনার বাড়ির পাশ্ববর্তী একটি রাস্তা উনার একক প্রচেষ্টায় হয়েছিল- যা করতে এলাকার কতিপয় লোক দ্বারা উনি ভয়াণক অপদস্ত হয়েছিল। আমার মামা কামাল খাঁর মৃত্যুদিনে জানাচ্ছি বিপ্লবী অভিবাদন।