রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর (৪০) ফিরে আসার প্রহর গুনছেন তার সাড়ে তিন বছরের মেয়ে তুবা।
শনিবার (২০ জুলাই) সকালে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন তিনি। ৫ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে রেনু ছিলেন সবার ছোট।
আসছে বছর স্কুলে ভর্তি হবে তুবা। আধো আধো কন্ঠে বলতে পারে কয়েকটি কবিতা। তাই মেয়েকে ভালো স্কুলে ভর্তি করার জন্য খোঁজখবব নিতে এ স্কুল থেকে ওই স্কুলে ঘুরে বেরান মা রেনু।
তাসলিমা বেগম রেনু লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন মাঝি বাড়ির মৃত আবদুল মান্নানের মেয়ে। ঢাকায় আড়ং নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন তাসলিমা বেগম রেনু।
নিহত রেনুর এক প্রতিবেশী জানান, সকাল সাড়ে ৬টা বাজে রেনু বের হচ্ছে। আমি বললাম কোথায় যাচ্ছো। রেনু বললো ভাবি আমার মেয়েটাকে ভর্তি করাবো। আরও আগে থেকেই বলে আমার মেয়েকে ভর্তি করাবো। আমি বললাম এটুকু একটা মেয়েকে তুমি ভর্তি করবা ও কি কিছু পড়তে পাড়বে।
রেনুর বোন সেলিনা আক্তার জানান, তাসলিমা ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে ঢাকায় বাস করতেন। তিনি ডিগ্রি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ১৪-১৫ বছর পূর্বে উত্তর বাড্ডা এলাকার তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গত দুই বছর আগে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল শনিবার (২০ জুলাই) তাসলিমার সন্তান তুবা তাসনিমকে (৩) স্কুলে ভর্তি করার জন্য খোঁজ নিতে উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সে সময় স্থানীয়রা তাকে মিথ্যা অভিযোগে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেন।’
তসলিমার সন্তানদের কি হবে, কোথায় পাবে তারা তাদের মাকে। কাকে তারা আম্মু বলে ডাকবে, কাকেই বা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে।- কথাগুলো বলেই কান্নায় জড়িয়ে পড়েন বোন সেলিনা। তাসলিমার চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদ বলেন, তাসলিমা শিক্ষিত মেয়ে। সে শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এত অল্প বয়সে সে দুনিয়া থেকে চলে যাবে, তা ভাবতে পারি না। তাসলিমাকে মিথ্যা অজুহাতে যারা মেরে ফেলেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেন ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিন। প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে রেনু তার মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলে যান। কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারণে তার আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। এজন্য স্কুলের অনেকেই তাকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করছিল।
প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে কথা বলার জন্য রুমে নিয়ে যান। কিন্তু স্কুল প্রাঙ্গণে তার অস্বাভাবিকতা দেখে অনেকেই বের করে মারধর করতে চাইছিলেন। প্রধান শিক্ষক রেনুকে বাইরে বের না করলে, স্কুলের কিছু অভিভাবক ও বাইরে থেকে আসা উৎসুক জনতা রুমের গেট ভেঙে তাকে ‘ছেলেধরা’ বলে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেকে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেনুকে মৃত ঘোষণা করেন।