এম.মনজুর আলম
বৈশ্বিক মহামারি “করোনা” সারাদেশের মত আঁচড়ে দিচ্ছে বোয়ালখালীকেও। প্রতিদিনই হু-হু করে বাড়ছে এর ভয়াবহতা। যাকেই টেষ্ট করা হচ্ছে তার কাছেই পাওয়া যাচ্ছে পজিটিভ রেজাল্ট। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সঠিকভাবে পরীক্ষা হলে বোয়ালখালীর দু-তৃতীয়াংশ মানুষের শরীরের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসবে। আমরা খাচ্ছি,ঘুমাচ্ছি,হাটছি-ফিরছি নির্দ্বিধায় বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছি কিন্ত এ ভাইরাসটি যে আমরা সাথে বয়ে বেড়াচ্ছি এবং ভাইরাসটি আমাদের শরীরে যে নীরবে খুঁটি গেড়ে যাচ্ছে তার দিকে আমাদের কারো কোন খেয়াল আছে বলে মনে হয়না । সাম্প্রতিক এখানকার বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে আমরা সহজেই তার উত্তর পেয়ে যেতে পারি ।আমরা খবর নিয়ে জেনেছি মৃত্যুর পূর্বে এদের মধ্য করোনা’র কোন লক্ষনই ছিল না অথচ মৃত্যুর পর রেজাল্ট পজটিভ। আমরা খবর রাখি না বা রাখলেও তা মানার গরজ মনে করছি না বলে বোয়ালখালীর করোনা পরিস্হিতি এখন খুবই অবনতির দিকে।
আমাদের অনুমানে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ও নিহতের সংখ্যা দু’ডজনের অধিক হলেও গতকাল পর্যন্ত সরকারী খাতায় ১৬০ জন পজিটিভ ও নিহতের সংখ্যা ২ আটকে আছে। শুনে অবাক হই, শুধু করোনা পরিস্হিতি নয় অন্যান্য সময় ও বাকীসব উপজেলাগুলোর চেয়ে আমাদের এ উপজেলাটির জন্য বরাদ্দ থাকে সব সময় কম। করোনা পরিস্হিতি মোকাবেলায় এখানকার প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবী করে আসলেও আমি জানিনা কিসের উপর ভিত্তি করে তাদের এ দাবী। একটু এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের অভাবে যেখানে রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ধুকতে হয় , স্ট্রেচারের অভাবে মৃতের লাশ যেখানে মাটিতে পড়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা সেখানে করোনা রোগীর সেবা? আমার মাথায় আসে না। অন্যান্য উপজেলায় যেখানে “আইসোলেশন” তৈরির কাজ শেষ সেখানে আমাদের এখানে মাত্র আশ্বাস।আবার যারাই করবেন তাঁরা সবাই এখন আক্রান্ত।এলাকার এমপি সাহেব চিকিৎসা নিতে স্বপরিবারে ঢাকায়, উপজেলা চেয়ারম্যান আগে থেকেই অসুস্হ হয়ে গৃহে, করোনা প্রতিরোধ কমিটির প্রধান ইউ এন ও মহোদয় হোম আইসোলেশনে, সদস্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্হ্য কর্মকর্তা সহ অধিকাংশ ডাক্তারের ও একই অবস্হা, মেয়র সাহেবকে রাখা হয়েছে দূরে সরিয়ে, থানার সেকেন্ড অফিসার’সহ ২৪/২৫ পুলিশ ও হাসপাতালের বেডে, পৌর প্যানেল মেয়র শাহজাদা মিজান ও সেল্ফ কোয়েরেন্টাইনে,আমরা আমাদের এসব আপনজনদের দ্রুত সুস্হতা কামনা করি। তবে বোয়ালখালীর করোনা যুদ্ধের মাঠে এখন এসব সহযোদ্ধাদের অনুপস্থিতি ও করোনা উপসর্গ নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা এখন খুবই ব্যথিত, দিশেহারা -পথহারা। তাইতো বিদ্রোহী কবির ভাষায়- ছিঁড়িয়াছে পাল,কে ধরিবে হাল-আছে কার হিস্মৎ? কে আছ জোয়ান- হও আগুয়ান,হাঁকিছে ভবিষ্যত। এ তুফান ভারী- দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।। শেষ পর্যন্ত আমাদের এ বোয়ালখালবাসীর তরী পাড়ে এখন আপনিই একমাত্র ভরসা। হাল বোধহয় আপনাকেই ধরতে হবে। সুতরাং এগিয়ে যান-শুরু থেকেই যেভাবে এগিয়ে আসছিলেন। ঠিক সেভাবেই,বোয়ালখালীবাসী আপনাকে আজীবন স্মরণে রাখবে।