সকালের সোনা রোদের কারণে শীত ছিল বসন্তের আগমনী বার্তা। তবে এ বছর স্বমহিমায় আবির্ভূত শীত। পৌষের শুরু থেকেই হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা নেমেছে সারাদেশে। বাদ পড়েনি রাজধানী ঢাকাও। নিম্ন তাপমাত্রা, শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশায় রাজধানীবাসীকে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে পৌষের শুরু থেকেই। মাঘ মাসেও সে পরিস্থিতি থেকে দেশবাসীর নিস্তার নেই বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের আশঙ্কা, সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়াতে পারে এ বছর।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জিতে মাঘ মাসের প্রথম দিন। পৌষের শেষ ক’দিন ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই মাঘের শুরুতেও। আকাশ কুয়াশার দখলে চলে যাওয়ার ফলে দিনের বেশিরভাগ সময়েই সূর্য থেকে যাচ্ছে আড়ালে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তুরে হিমেল হাওয়ার কারণে এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়, আবহাওয়া অধিদফতর আশঙ্কা করছে, মাঘ মাসে এবার শীতের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ মাসেই কমপক্ষে দু’টি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর যেকোনো একটিতে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেও নামতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এবার হেমন্ত ঋতুতেই শীত আসায় ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এছাড়াও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি আসা এবং বিকেল থেকে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শীত বাড়ছে। এ কারণে মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এবারের শীত শুরুতেই তীব্র আকার ধারণ করেছে, যেটি গত কয়েক বছরের শীতের চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মাঘ মাসের শীত এমনিতেই প্রবল হয়, এর ধারবাহিকতা বিবেচনা করলে শীত বাড়বে— এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এছাড়া আমাদের মেঘ-মানচিত্রও চলতি মাসে তীব্র শীত নামার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী সপ্তাহে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি অথবা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি বা তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এখানে বলে রাখা ভালো, ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

সামছুদ্দিন আহমেদ তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরের প্রথম ১৫ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর একই সময়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অক্টোবরেই আমরা দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে শীতের তীব্রতার ইঙ্গিত দিয়েছিলাম।

তিনি জানান, পৌষ মাসে হওয়া বৃষ্টি এবারের শীতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মাঘ মাসেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

উত্তুরে হিমেল হাওয়া প্রসঙ্গে শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশ থেকে বিদায় নিলে উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা ও তিব্বত থেকে বাতাস বাহিত হতে শুরু করে। এ কারণে এই বাতাস বেশ এমন হিম ঠাণ্ডার অনুভূতি দেয়। এই বাতাসই ডিসেম্বরের শেষ দিকে তীব্রভাবে প্রবাহিত হয়। এটিই ধীরে ধীরে শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়।

এসব শৈত্যপ্রবাহের কারণেই ভাটির বাংলা জনপদে মাঘ মাসে হাড়কাঁপানো শীতের দেখা মেলে। এবারের মাঘে তা আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here