লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য বলাই

হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর ওফাত ও মাহাত্ম্য স্মরণে তদীয় খলিফা মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগীরির ‘ফকির উল্লাস ও ওফাতনামা’ গ্রন্থটি ড. সেলিম জাহাঙ্গীরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির প্রকাশক সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান, গাউসিয়া হক মনজিল, মাইজভাণ্ডার শরীফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। প্রকাশকাল ১০ মাঘ, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯। দি আলোকধারা প্রিন্টার্স থেকে এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট দ্বারা মুদ্রিত। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা।

উৎসর্গ পত্রে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার প্রবর্তক, খাতেমুল অলদ, ফরদুল আফরাদ, গাউসুল আযম শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (১৮২৬-১৯০৬) ফিল ফানার দরওয়াজা ভারি ২ দিতে নারি, তুলনা দিবার/গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী খোদার ভাণ্ডার ॥/ খোদার প্যারা (পেয়ারা) মাইজভাণ্ডারী ২ সারি সারি, নানান দেশে ২/ কামেল সাগ্রিদ বসাইয়াছে মন সুখে ॥/ এস্কের বিশম আশ্চর্য ২ রাজ্য ২ করে শক্তিয়ে ধরে/ বিনা ডোরে গলে ফাঁসি লাগাইয়া টানে ॥/ কত আলেম কত মৌলানা ২ করে বিড়ানা (সর্বস্বান্ত), ইঙ্গিত নয়নে/ কাজীমুক্তি (মুফতি) নাএব নবাব ভ্রমায় স্থানে স্থানে ২ ॥ ‘ফকির উল্লাস কবিতা’। এবং গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর পবিত্র রক্ত ও বেলায়তের উত্তরাধিকারী, এই ত্বরিকার তাত্ত্বিকবিশ্লেষক ও স্বরূপ উন্মোচক, অছিয়ে গাউসুল আযম, ‘খাদেমুল ফোকরা’ শাহসুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (১৮৯৩-১৯৮২) বারে বারে বলিয়াছে গউস মাইজভাণ্ডারী/ সাহা দেলাওর সত্য পাইব ফকিরী ॥/ গাউস ধনের প্রাণধন সাহা দেলাওর/ অধিক করহ øেহ করিয়া আদর ॥/ খোদার দরগায় সবে কর নিবেদন/ সাহা দেলাওর হউক সানি গাউসধর ॥ (‘ওফাতনামা’)।


‘ফকির উল্লাস ও ওফাতনামা’ গ্রন্থে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে লিখেছেন: “মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার প্রবর্তক গাউসুল আযম শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর সময়কালে তাঁকে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ ঘটেছে তাঁরা অবশ্যই সৌভাগ্যবান। এর মধ্যে যাঁরা আধ্যাত্মিক মহিমার অনুরণনে ‘খলিফার’ মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা আরো উচ্চ মাত্রার পরম সৌভাগ্যবান। তাঁদেরই একজন ‘মাইজভাণ্ডারের চারি আমিনের’ অন্যতম, মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগিরী। মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগিরীর আর একটি দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিশেষত্ব হলোঃ তিনি একজন উচ্চ মার্গের গীতিকবি হিসেবে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী, তাঁর পরিবার, তাঁর প্রচারিত ত্বরিকার সামগ্রিক মাহাত্ম্যকে যে মাত্রিকতায় ধারণ লাল ও প্রতিপালন করেছিলন তার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন তাঁর সাহিত্য কর্মে। এর পাশাপাশি তিনি আর একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তা হলো আজ থেকে শতাধিক বছর পূর্বে স্ব উদ্যোগে এগুলোর প্রকাশের ব্যবস্থা। যেমন: (১) ফকির উল্লাস (২) ওফাতনামা। দুটোরই প্রকাশকাল আজ থেকে ১১২ বছর পূর্বে ১৯০৭ সালে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ত্বরিকার প্রচারের সূচনাপূর্বে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী ‘ফকির মৌলভী’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। ‘ফকির উল্লাস’ কবিতায় তাঁর আধ্যাত্মিক মহিমা (রচনাকাল ১৯০৬, প্রকাশকাল ১৯০৭) এবং তাঁর ওফাতকে কেন্দ্র করে রচিত ‘ওফাতনামা’-তে (রচনাকাল ১৯০৬, প্রকাশকাল ১৯০৭) মূলত ওফাতকে (মৃত্যু, মহাপ্রয়াণ) কেন্দ্র করে সমসাময়িক ঘটনাবলীর চালচিত্র ফুটে উঠেছে একান্ত বিশ্বস্ততার সাথে। কালের নিরব সাক্ষী হিসেবে, নিরাভরণ বর্ণনায় মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার প্রথম যুগের মূল্যবান দলিল হিসেবেও এগুলোর মূল্য সতত: প্রণিধানযোগ্য। উল্লেখ্য, ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সমকালের গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনার আকরগ্রন্থ হিসেবে মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার পূর্বাপর ইতিহাসের দলিল হিসেবে বিবেচিত ঐ দুটো প্রকাশনা সুদীর্ঘকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। এমনকি তাঁদের পারিবারিক সংগ্রহেও এ সম্পর্কিত কোন তথ্য সংগৃহীত ছিল না। আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে বাংলা একাডেমিতে মাইজভাণ্ডার বিষয়ে গবেষণা কালে একাডেমির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. সেলিম জাহাঙ্গীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীর ‘দু®প্রাপ্য শাখা’ থেকে এগুলো উদ্ধার করে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর ‘মাইজভাণ্ডার সন্দর্শন’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা আমাদের ‘মাসিক আলোকধারা’ পত্রিকার জানুয়ারি ২০১৬ এবং ফেব্র“য়ারি ২০১৬ সংখ্যায় এগুলো পুনঃমুদ্রণের ব্যবস্থা করেছিলাম। মাইজভাণ্ডারী গবেষক মহলে এগুলোর তত্ত্ব ও তথ্য ভিত্তিক ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা ড. সেলিম জাহাঙ্গীরকে অনুরোধ করেছিলাম মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগিরীর অন্যান্য লেখালেখি এবং জীবন কর্ম ও মর্ম বিষয়ক যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জীবনী গ্রন্থ হিসেবে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করার জন্য। দু®প্রাপ্যতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় বৎসরাধিক সময় ব্যয় করে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তাঁর এই দীর্ঘ সময়, শ্রম ও নিষ্ঠা-সাধ্য আন্তরিক প্রচেষ্টাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগিরীর জীবনীগ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে, কালের সাক্ষী হিসেবে ইতিহাসের নিবারণ, নিরাভরণ দলিলগুলো সুসমন্বিত করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের ট্রাস্টও মাইজভাণ্ডারের পূর্বাপর ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিগণিত হয়ে উঠার সুযোগ পেল। মেধা-মননের জগতে, ইতিহাস সংরক্ষণ ও চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যয় দীপ্ত সুস্পষ্ট প্রতিফলনে আমরা ট্রাস্ট পরিবারও আনন্দিত এবং গর্বিত।” মূল্যবান এই গ্রন্থটি ৫৬ পৃষ্ঠায় রঙিন প্রচ্ছদে ছাপানো। গ্রন্থটিতে জীবনকথা, জীবনী পুনর্গঠন প্রসঙ্গ, লেখকের আত্মকথা, তাঁর শানে আল্লামা শেরে বাংলার শে’র, মাওলানা চরণদ্বীপির জীবনীগ্রন্থের তথ্য, মাওলানা হারবাংগীরির সংক্ষিপ্ত জীবনী, গাউসিয়া হক মনজিলের মুখপত্র মাসিক ‘আলোকধারা’, বাংলা একাডেমীর মাইজভাণ্ডার সন্দর্শন গ্রন্থ, হারবাংগীরি পরিবারের সাক্ষাৎকার, চরণদ্বীপ দরবারের বর্ণনা, ওফাত-সময়কাল নির্ধারণ প্রসঙ্গে। সাহিত্য কর্মে ১৯০৭ সালে প্রকাশিত ওফাতনামা কবিতা, ১৯০৭ সালে প্রকাশিত ফকির উল্লাস কবিতা, ১৯০৭ সালে প্রকাশিত ওফাত নামার প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা, সনাতন যন্ত্রে মুদ্রিত ওফাতনামার লিপি নিদর্শন, বংশ লতিকা, সহায়ক গ্রন্থ, নিবেদন। নতুন সংযোজন মাওলানা হারবাংগীরি স্মরণে, মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী, মাওলানা হারবাংগিরীর সর্বশেষ সংগ্রহ সম্পর্কে পৃথক পৃথক আলোচনা করা হয়েছে। এই বইটি সুফিবাদ ও মরমীবাদী গবেষকদের জন্য গুরুত্ব বহন করবে।

May be an image of textবইটিতে বিনীত নিবেদনে সম্পাদক ড. সেলিম জাহাঙ্গীর লিখেছেন: “মাইজভাণ্ডারীয়া ত্বরিকার প্রবর্তক খাতেমুল অলদ, খাতেমুল আউলিয়া, গাউসুল আযম বিল আছালত হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর (ক.) সুপ্রসিদ্ধ ৪ আমিনের অন্যতম, মাইজভাণ্ডারী সূচনা পর্বের ইতিহাসের অন্যতম রূপকার মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগিরী বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে এ যাবতকালে সংগৃহীত যাবতীয় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ গ্রন্থ রচিত। এ গ্রন্থ পাঠে কোন তত্ত্বগত বিভ্রাট বা তথ্যগত বিভ্রান্তি কিংবা কোথাও কোন অপূর্ণতা বা অসঙ্গতি চোখে পড়লে আমাদের অবহিত করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সাথে শুদ্ধতম তত্ত্ব-উপাত্ত পাঠানোর ব্যবস্থা করলে আমরা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তা সাদরে গ্রহণ করবো এবং একই সাথে তথ্য প্রদেতার কথা স্মরণ করবো একান্ত কৃতজ্ঞতার সাথে। প্রসঙ্গেত উল্লেখ্য, মাইজভাণ্ডারের তত্ত্ব ও তথ্যগত বিষয়াদির শুদ্ধতম সংস্করণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং দায়িত্বশীলতার সাথে তা প্রকাশের নিবেদিত খাদেম হিসেবে আমরা পরিকল্পিত উপায়ে নিরবচ্ছিন্ন ধারায় এ কর্মে নিবেদিত। কিন্তু আমাদের চলমান নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা আপনার দোরগোড়ায় গিয়ে একান্ত সাক্ষাতে এ কথাগুলো বলার সুযোগ হয়ে উঠছে না। এমতাবস্থায় আমাদের সীমাবদ্ধতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তথ্যসমূহ আমাদের ট্রাস্ট কার্যালয়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলে বাধিত করলে বাধিত হবো। আমরা আবারো মাওলানা হারবাংগিরীর অজানিত তথ্য-উপাত্ত বিষয়ে মাওলানা হারবাংগিরীর দরবারের বর্তমান সাজ্জাদানশীন মাওলানা শাহসুফি মোহাম্মদ মিঞা শাহ সহ তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠজন, মাইজভাণ্ডারী আশেক-ভক্ত, বিদ্বৎসমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আশু শুভ দৃষ্টি ও ঐকান্তিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি এবং একই সাথে মাইজভাণ্ডারী দর্শনের তত্ত্ব ও তথ্যের শুদ্ধতম সংস্করণ প্রকাশের নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রয়াসের প্রত্যয়দীপ্ত নিবেদন পেশ করছি বিনীতভাবে।” উল্লেখিত বই আলোচনার মাধ্যমে ‘ফকির উল্লাস ও ওফাতনামা’র সারসংক্ষেপ বিবরণী পাঠক খুঁজে পাবে। এই গ্রন্থটির প্রচার প্রসার ও সফলতা কামনা করছি।

লেখক: মরমী গবেষক, কলামিষ্ট ও প্রাবন্ধিক।

এবি/টিআর ৩০/৬/২০১৯

For The Roots BY Dr. Ashish Kumar Chowdhury (MBBS, PhD)

আত্মশুদ্ধি ছাড়া সিদ্ধি লাভ অসম্ভব

নিদানের বন্ধু : “রমেশ স্মারক-এক”

মাইজভাণ্ডারী বেলায়তের বহুত্ববাদী সমাজতাত্ত্বিক ব্যাকরণ ও হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here