(ঠ) রাজনীতি নিরপেক্ষতা বা অরাজনৈতিক শরাফত (Political Neutrality)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফ রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত। কোন প্রকার দলীয় রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কর্মকান্ড আবর্তিত হয় না। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সকল কর্মকান্ড আবর্তিত হয় মহান স্রষ্টা কর্তৃক নির্দেশিত এবং নবী করিম (দঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত ও হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর জীবন ধারায় প্রতিফলিত পথে। অছি-এ-গাউসুল আ’যমের জীবনধারায় এ নীতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ছিল।
(ড) জ্ঞান-চর্চা বা শিক্ষামূলক শরাফত (Knowledge and Education)
জ্ঞান-চর্চা মাইজভান্ডারী শরাফতের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। হাদিস শরীফে আছে-
“বিজ্ঞান ও জ্ঞানের তথ্যাদি ঘন্টা-খানেক শ্রবণ করা এক হাজার শহীদের জানাজা থেকেও অধিকতর পূণ্যের, এক হাজার রাত্রিতে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও পূন্যতর”।
নবী করিম (দঃ) বলেছেন,
“জ্ঞান অর্জন করো; জ্ঞান তোমাকে মন্দের মাঝে ভালোর সঙ্গে পরিচিত করে তুলবে। জ্ঞান স্বর্গীয় আনন্দ দেবে। মরুভূমিতে জ্ঞান তোমাদের বন্ধু, নির্জনতায় তোমাদের সঙ্গী, পরিত্যক্ত অবস্থায় সে নির্ভরযোগ্য সহচর। জ্ঞান দুঃখে শান্তনাদাতা, সুখের দিক-নির্দেশক বন্ধু, জন সমাগমে অলংকার ও শত্রুর বিরুদ্ধে বর্ম। সুতরাং দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। কারণ যে জ্ঞান অন্বেষণ করে, তার অতীতের কৃত পাপ মোচন হয়ে যায়”।
মহান আল্লাহতালার নিকট থেকে ওহী মারফত রসূল (দঃ)-এর প্রতি নাযিলকৃত প্রথম বাণী হচ্ছে “পড়ুন” অর্থাৎ শিক্ষা লাভ করুন। ইহা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জ্ঞান চর্চা মানুষের জন্য অপরিহার্য। মার্জিত রুচি, পরিচ্ছন্ন ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, আদর্শ রাষ্ট্র গঠন, অসৎ ও অসামাজিক কার্যাবলী বর্জন, ব্যক্তি চরিত্রের পুনর্গঠন, স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়, দায়িত্ব ও কর্তব্য পরায়ণতা সম্পর্কে সচেতনতা, ইহকালের কল্যাণ ও পরকালে পরিত্রাণ লাভ, চরিত্র গঠন প্রভৃতির জন্য জ্ঞানচর্চা মানুষের অপরিহার্য। ধর্মীয় জ্ঞানহীনতার কারণেই আজ প্রায় অঞ্চলে দুর্ণীতির বন্যা ও চরিত্রহীনতার করাল গ্রাস জনজীবনকে অতীষ্ট করে তুলেছে। সত্যিকার ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে আজ আমরা হারামকে বলি লাভ, ঘুষকে বলি বখশিষ, অন্যায়কে বলি সুবিচার, জুয়াকে বলি লটারী। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত তাই জ্ঞানচর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
অছি-এ-গাউসুল আ’যম ছিলেন জ্ঞানচর্চার অগ্রনায়ক। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের অন্য কোন অলী বা ব্যক্তিত্ব তাঁর মত এত বেশী জ্ঞান চর্চা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি ছিলেন একাধারে গবেষক, সাহিত্যিক সমালোচক ও উঁচুদরের লেখক। তিনিই মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের বিভিন্ন দিক লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করেন এবং পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেন।তার লেখনি সমূহের মাধ্যমে মাইজভান্ডারী ছুফি মতাদর্শ, ইতিহাস ও রীতিনীতি সর্ব প্রথম বাংলা ভাষায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিশীলিত রুপরেখা লাভ করে। ফলত পরবর্তীকালে বিশ্বের নানা প্রান্তে এ তরীকা সংক্রান্ত গবেষণায় তার লেখা সমূহ মৌলিক উপাদান হিসাবে গুরুত্ব পায় কেননা, তদ্বপূর্ব অপরাপর লেখকগণের বেশির ভাগ লেখা সমূহ ছিল আরবী ও উর্দূ ভাষায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাইজভান্ডারী তরীকার স্বরুপ বিশ্লেষনাত্মক কতিপয় গবেষণা গ্রন্থ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে যথাক্রমে বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে অত্র তরীকার ১ কোটি বা ১০ মিলিয়নেরও বেশি প্রত্যক্ষ অনুসারী রয়েছে বলে উল্লেখ করা অষ্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন রিভিউ ট্রাইবিউন্যাল (এমআরটি) এবং রিফিউজি রিভিউ ট্রাইবিউন্যালের
মাইজভান্ডারী দর্শনের বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর এ অবদার চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
(ঢ) কলূষমুক্ত সঙ্গীত বা স্বর্গীয় সুরের শরাফত (Divine Melody)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফে স্বর্গীয়সুরের মূর্চ্ছনায় ও ছন্দের বাজনার তালে তালে আধ্যাত্মিক সঙ্গীত গেয়ে খোদার ভাবে বিভোর হয়ে নৃত্যের মাধ্যমে জিকির করার রেয়াজ আছে। কিন্তু বাদ্যযন্ত্রসহ গান গেয়ে নেচে নেচে জিকির করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইহা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের অপরিহার্য অঙ্গ নয়, প্রয়োজনীয় শর্তও নয়। যুগ সংস্কারক ওলীয়ে কামেলগণ মানবজাতিকে নানা প্রকার হেকমত প্রয়োগে খোদার প্রতি আহবান করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমরা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা যে কোন অবস্থায় খোদাকে স্মরণ করো”। (সুরা ইমরানঃ১০৩)
হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ) আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের বিভিন্ন মজাকীয় বৈজ্ঞানিক রুচি সম্পন্ন বিভিন্ন জাতির ও ধর্মের সমাবেশ ও সংমিশ্রণ স্থলে আবির্ভূত মোজাদ্দেদ ওলী বিধায় তিনি আল্লাহ, রাসুল ও ওলীর শানে গান-বাজনা ও গজল গীতিকে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে জিকিরী উপাদান বা হুজুরী কলব (একাগ্রচিত্ততা)
(ণ) প্রগতিশীলতা বা প্রগতিশীল শরাফত (Progressivenes
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত সকল প্রকার কুসংস্কার এবং গোঁড়ামীর উর্ধ্বে। একজন কামেল ওলীর সত্যিকার খেদমত ও ছোহবত থেকে যারা বঞ্চিত, তারা বেলায়ত সম্বন্ধে অজ্ঞতার দরুণ মনগড়া কাজকর্ম ও কথাবার্তা বলে থাকে। এরূপ শরীয়ত গর্হিত কাজকর্ম ও কথাবর্তা মাইজভান্ডারী শরাফতের সম্পূর্ণ বিরোধী। মহান আল্লাহ বলেন,
“বহু পবিত্র লোকদের পরবর্তী এ রকম লোকও থাকে যারা নামাজ (জাহের ও বাতেন) পড়ে না বা তর্ক করে এবং কামনার বশবর্তী হয়ে অতি শীঘ্র নরকের নিম্নস্তরে পতিত হয়”। (সূরা – মরিয়ম, আয়াত:৫৯) ।
সমাজে কুসংস্কারাচ্ছন্
“আমি কোথায় যাব? যাদেরকে লোকে মুসলমান বলে, মুসলমান ও ইসলাম সেরূপ নহে। ইসলামের সত্যিকার ও মৌলিক সমাজ ব্যবস্থা থাকলে আমি নিশ্চয়ই সে সমাজে যেতাম”।
কুসংস্কার মানুষকে নৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেয় এবং পাপের পথে ঠেলে দেয়।
উদাহরণ স্বরূপ, কোন কোন তথাকথিত মাইজভান্ডারী (নিজেদেরকে মাইজভান্ডার (কঃ)-এর অনুসারী বলে পরিচয় দেয়, অথচ মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর কোন আদর্শ তাদের মধ্যে নেই) কে বলতে শুনা যায়, “মাইজভান্ডারে সত্য, মিথ্যা, আচার, ধর্মের বালাই নেই, বাবার প্রতি ভক্তি রাখলেই মুক্তি নিশ্চিত”। নাউজুবিল্লাহ! এরূপ ভন্ড মাইজভান্ডারী, মাইজভান্ডারী শরাফতের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে মাইজভান্ডারী শরাফত একটি প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। কোরআন-হাদীস-সুন
অছি-এ-গাউসুল আযম ছিলেন সকল প্রকার গোঁড়ামীমুক্ত ও প্রগতিশীল। গণ সভ্যতা ও সমাজ জীবনে ধর্মীয় প্রভাবের প্রকৃতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভের জন্য ভ্রমন করেন ও বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তিনি বেলায়তের মিরাজহীন কোন লোকের মাজার করার বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন। তিনি ভক্তের বাড়ী বাড়ী গিয়ে মুরীদ বানানো ও নজরানা নেয়ার কাজকে ঘৃণা করতেন। তিনি গাউসিয়ত নীতি (তেলাওয়াতে অজুদ,অনর্থ পরিহার ও সন্তোষ বিরুধি যার বর্ণনা মানবসভ্যতা বইয়ে বিস্তর ভাবে উল্লেখ করেছেন) বিরুদ্ধ ছায়র (সফর করে) পীরি (বাইয়াত) করেননি। তিনি বলতেন পরিস্কার হওয়ার জন্য মানুষ পুকুরের কাছে যায়, পুকুর মানুষের নিকট যায় না। তিনি বলতেন, “যে বালি জল শোষণ করে তাতে কোন উদ্ভিদ জন্মে না”। প্রকৃতপক্ষে, অর্থলিপ্সু পীরের নিকট থেকে মুরীদ মুক্তির দিশা পেতে পারে না। অছি-এ-গাউসুল আ’যম ছিলেন রেছালত ও রসুল করিম (দঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসারী এবং গাউসিয়ত নীতির ধারক, বাহক ও পরিপূরক হিসেবে পূর্ণ মানবতা প্রাপ্ত মহান ওলী। তিনি ভূয়া পীরি, মুরীদি ও ফকিরীর বিরুদ্ধে কঠোর ও প্রতিবাদ মুখর ছিলেন। উল্লেখ্য, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের তাঁর পবিত্র মাজার একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এবং মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের আসল স্বরূপ ঘোষণা করছে।
তিনি প্রায়শঃ বলতেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কোন মাজারের বাহ্যিক শোভা যেন তাঁর মুনিবের (অর্থাৎ হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর) মাজারের শোভার চাইতে বেশী না হয়।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সুরক্ষায় খাদেমুল ফোকরার অবদান পর্যালোচনার মাধ্যমে যে সত্যকে জানতে ও বুঝতে পেরেছি তা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে তুলে ধরে সকলকে কুসংস্কার বর্জিত মহাসত্যের দিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তিনি গ্রামে ও গঞ্জে ‘আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউসে মাইজভান্ডারী’ নামে যে সংগঠন ও তৎসংলগ্ন ‘জ্ঞানভান্ডার’ নামে যে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন উহার মাধ্যমে আমরা এ মহান কাজ সমাধা করতে পারি। এ প্রতিষ্ঠানটির বিকাশে ও সুরক্ষায় আমাদের সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সভা, আলাপ, আলোচনা, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, গবেষণা ও তাঁর রচিত কেতাবাদির মাধ্যমে মুক্তিকামী মানব সমাজের দোর গোড়ায় মহান সত্যকে পৌছিয়ে দেয়া সম্ভবপর হবে।এছাড়া তিনি ওয়ারিশ পরিচয় দিয়ে গেছেন, আমার পাচ ছেলে (১) সৈয়দ জিয়াউল হক কঃ,(২) সৈয়দ মুনিরুল হক কঃ,(৩)সৈয়দ এমদাদুল হক মঃ,(৪) সৈয়দ ডাঃ দিদারুল হক মঃ(৫) সৈয়দ সহিদুল হক মঃ-শাহজাদা গনই,গাউসুল আযম শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ কঃ মাইজভাণ্ডারী সাহেবের এবং আমার পুত্র বংশধর আওলাদ,অন্য কেহ নহে।প্রথম পুত্র,জিয়াউল হক কে তাঁহার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদ পুকুরের উত্তরদিকে আমার নিজস্ব বাগান বাড়িতে পাকা-দালান, “স্যানিটারি ল্যাট্রিন” ইত্যাদির সুব্যবস্থা করে এবং তাঁর প্রাপ্য জমি তুল্য অংশে ভাল-বন্টন করে পৃথক বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।এখন তিনি নিজের অবস্থায় প্রতিষ্টিত।বড় মিয়া সৈয়দ জিয়াউল হক এর ধারাবাহিকতায়,’হ