পর্ব ১
মানব মুক্তি ও স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ) কর্তৃক প্রবর্তিত ও তাঁর মহান জীবন ধারায় প্রতিফলিত মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের মহান উল্লেখযোগ্য দিকগুলোকে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়:
(ক) অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ কিংবা তৌহিদী শরাফত (Unchained divine love or total commitment to the oneness of almighty Allah)
(খ) আধ্যাত্মিকতা বা আধ্যাত্মক শরাফত (Spiritualism)
(গ) স্রষ্টার অস্তিত্বে বিলীনতা বা আত্ম সমর্পণের শরাফত (Total surrender to the Almighty Allah)
(ঘ) পীরের অস্তিত্বে বিলীনতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Total Dedication to the spiritual guide)
(ঙ) শরীয়তের প্রতি আস্থাশীলতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Adherence to the Principles of Shariah)
(চ) সপ্ত পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ বা নৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধির শরাফত (Practical Application of the Seven Methods or Moral Control and Self-Purificati on)
(ছ) নির্বিলাস সভ্যতার শরাফত (Simplicity of Life)
(জ) বৈষম্যহীনতা বা বিচার সাম্যের শরাফত (Lack of Discrimination or Judicial Equality)
(ঝ) সার্বজনিনতা বা বিশ্বমানবতার শরাফত (Universality of Global Humanity)
(ঞ) সমাজ সংগঠন বা প্রাতিষ্ঠানিক শরাফত (Social Organization or Institutional Structure)
(ট) সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড বা সামাজিক শরাফত (Social Welfare-Oriente d Activities)
(ঠ) রাজনীতি নিরপেক্ষতা বা অরাজনৈতিক শরাফত (Political Neutrality)
(ড) জ্ঞান-চর্চা বা শিক্ষামূলক শরাফত (Knowledge and Education)
(ঢ) কলূষমুক্ত সঙ্গীত বা স্বর্গীয় সুরের শরাফত (Divine Melody)
(ণ) প্রগতিশীলতা বা প্রগতিশীল শরাফত (Progressivenes s)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের সুরক্ষায় খাদেমুল ফোকরার অবদান
এখন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতের উপরোক্ত দিকগুলোর ক্ষেত্রে অছি-এ- গাউসুল আ’যম মুর্শিদে বরহক খাদেমুল ফোকরা হযরত মাওলানা শাহ সুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ )-এর মহান অবদান সম্পর্কে মূল্যায়ন করার কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা চালাব :
(ক) অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ কিংবা তৌহিদী শরাফত (Unchained divine love or total commitment to the oneness of almighty Allah)
অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ বিশ্বমানবতার জন্য হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী(কঃ )-এর একটি দূর্লভ অবদান। নবী করিম (দঃ)-এর নবুয়তের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছির খোদার একত্ব প্রকাশ করা। প্রভূর একত্বে সম্মিলিত হওয়াই হচ্ছে সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। নবী করিম (দঃ) তাঁর আহমদী বেলায়তী শক্তি বলে মহা প্রভূর একত্বে মিলনের পথ আবিস্কার করেছিলেন এবং সে পথ অর্জনের পন্থা নির্দেশ করেছিলেন। মহা প্রভুর এ একত্বে মিলনের পথ হচ্ছে অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদের পথ। অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের মেরুদন্ড ও সুক্ষ্ম উদ্দেশ্য। কলেমা তৈয়বা ও খোদাতা’য়ালার রহস্য জড়িত আহমদী বেলায়ত পদ্ধতি যা চিরন্তন ও সার্বজনীন। হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ) এর পূর্ববর্তী ওলীগণ ধর্মীয় বিধি-নিষেধের মধ্যস্থতায় সম্প্রদায়গতভাবে উক্ত রহস্য আংশিকভাবে উদঘাটন করতে সক্ষম হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ধর্মীয় বিরোধ পরিহার পূর্বক বাধাহীন মুক্তির দ্বার উদঘাটন করতে সক্ষম হননি। হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ)ই উক্ত বাধাহীন বেলায়তের একমাত্র দ্বার উন্মোচক ও বাধ্যবাধকতার পরিণতিকারী নিরপেক্ষ তৌহিদবাদ তথা সকল ধর্ম ও তরিকতের গন্তব্য স্থানে পৌছাবার একমাত্র সহজতম উপায়। ইহা যগসম্মত খোদার তৌহিদালোক যা নিরপেক্ষ ও সার্বজনীন এবং আহমদী বেলায়তী শক্তির স্বরূপ যা আভ্যন্তরীন ভক্তি-বিশ্বাস ও স্বীকৃতিকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।
অছি-এ- গাউসুল আ’যম এই অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদের সত্যিকার স্বরূপ জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য সুপ্রসিদ্ধ “বেলায়তে মোতলাকা” গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং নিরপেক্ষ তৌহিদের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। সকল মানুষকে নিরপেক্ষ তৌহিদের সামিয়ানা তলে সমবেত হবার জন্য তিনি আহবান জানান।
(খ) আধ্যাত্মিকতা বা আধ্যাত্মক শরাফত (Spiritualism)
খোদার একত্বে মিশতে হলে আধ্যাত্মিক প্রেরণা শক্তির একান্ত প্রয়োজন। ইহা বেলায়ত শক্তি অর্জনের একমাত্র অমূল্য সম্পদ। এ দুর্লভ সম্পদ ও শক্তি অর্জনের জন্য রেয়াজন ও কঠোর সাধনা একান্ত প্রয়োজন। সূফী পরিভাষঅ মতে ইহাকে নেছবতে ছকিনা বা স্থায়ী খোদা-সম্পর্ক নামে আখ্যায়িত করা যায়। এই স্থায়ী খোদা সম্পর্কের অভাবে নাছুত মোকামের পার্থিব স্বভাবপ্রবণ মানুষ স্রষ্টার প্রভুত্ব ভুলতে বাধ্য হয়। খোদা-সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সৎ জ্ঞান ও প্রেরণা শক্তির প্রয়োজন। সৎ জ্ঞান ও প্রেরণা শক্তির অভাবে মানব হুদয়ে খোদার প্রতি বিশ্বাস, অনুরাগ ও ভীতির সঞ্চার হয়না এবং সত্যিকার ইসলাম থেমে মানুষ দূরে সরে পড়ে। এই প্রেম-প্রেরণা ও সৎ জ্ঞানের অভাবে মানুষ বিচার বুদ্ধি হারিয়ে অতি বিলাসী হয়ে উঠে এবং অহঙ্কারী ও অত্যাচারী হয়ে নিজেকে ধ্বংসের পথে টেনে নেয়। তাই হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ) বিশ্ববাসীকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে খোদায়ী প্রেম প্রেরণায় বেলায়তী শক্তি অর্জনপূর্বক খোদার সাথে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রেম-প্রেরণা (হাল ও জজবা) উন্মুক্তভাবে দান করতেন। তাঁর কাছে যে কেউ উপস্থিত হতো, সে তাঁর আধ্যাত্মিক প্রেরণা বা ফয়েজ রহমত থেকে কখনও বঞ্চিত হত না। অনেকের এত্তেহাদী ফয়েজ অর্জনের সাথে সাথে কাশফ ও জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হয়ে যেত এবং খোদার গোপন রহস্য জ্ঞান অর্জনপূর্বক বহু ওলীগণে উৎপত্তি ও বিকাশ সাধিত হয়।
অছি-এ-গাউসুল আ’যম ছিলেন এ জজবাতি প্রেম-প্রেরণার ধারক ও বাহক। তিনি কঠোর সংযম ও রেয়জত সাধনা করতেন এবং জজবাতি প্রেম-প্রেরণায় বিভোর হয়ে গভীর রাতে খোদার জিকিরে মশগুল থাকতেন।
(গ) স্রষ্টার অস্তিত্বে বিলীনতা বা আত্ম সমর্পণের শরাফত (Total surrender to the Almighty Allah)
স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন, চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ এবং সৃষ্টার নৈকট্য অর্জনই হচ্ছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতের প্রধান লক্ষ্য। স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করতে হলে স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় জীবন যাপন করা উচিৎ এবং লাগামহীনভাবে দুনিয়ার প্রতি মোহান্ধ না হয়ে খোদার ইবাদত বন্দেগী করা উচিৎ। বস্তুতঃ পক্ষে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির মিলনই হচ্ছে সৃষ্টির মূল লক্ষ্য। স্রষ্টার ইবাদতের মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব, যেহেতু ইবাদত বা স্রষ্টার আরাধনা হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সংযোগ তথা সেতু বন্ধনের প্রধান চাবিকাঠি। প্রকৃতপক্ষে, পীরের চেহারা মোবারক স্মরণে রেখে অন্তরের মধ্যে সন্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে খোদার ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়া এবং প্রতিনিয়ত খোদা-স্মরণে মশগুল থাকা প্রতিটি ওলী-প্রেমিক জনগণের একান্ত কর্তব্য। মানুষের জীবন সংকীর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং সময়মত স্রষ্টা-প্রেম জাগ্রত না হলে জীবনে সিদ্ধিলাভ করা সম্ভব হয় না। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সাধনা সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় জীবন নদী এক পর্যায়ে স্রোতহীন হয়ে অজস্র শৈবালধামে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
খাদেমুল ফোকরা (গরীবের বন্ধু, সম্বলহীনের খাদেম) অছি-এ-গাউসুল আ’যম হযরত দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) কারও নিকট কোন কিছুর জন্য মুখাপেক্ষী না হয়ে স্রষ্টা প্রদত্ত আত্মশক্তিতে নির্ভর করে নিজ সামর্থ ও বিচারবুদ্ধি মোতাবেক সমস্ত সমস্যার সমাধান করতেন। তিনি খোদার ইচ্ছার নিকট নিজ স্বার্থ ও বুদ্ধিকে নত করে ধৈর্য্যের সাথে সকল ব্যাপারে প্রতীক্ষা করতেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, একবার তাঁর দোকানের জন্য শহর থেকে ক্রয় করা মালামাল নৌকাসহ ডুবে যাওয়ার সংবাদ শুনে তিনি এতটুকু বিচলিত না হয়ে বলেছিলেন, “আল-হামদু-লিল্ল াহ”। সুফী পরিভাষায় এরূপ অভ্যাসকে ফানা আনিল এরাদা বলা হয় এবং এই গুনজ প্রকৃতিকে তছলিম বা রজা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআন পাকের বাণী প্রাধান্যযোগ্য-
“তুমি বল, নিশ্চয় আমার আরাধনা ও আমার উৎসর্গ এবং আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য”। (সুরা-আনয়াম, আয়াত-১৬২)। কোরআন পাকে আরও বলা হয়েছে-“এবং আমরা কেন আল্লাহর প্রতি নির্ভর করব না? এবং নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে আমাদের পথসমূহ প্রদর্শন করেছেন এবং তোমরা আমাদেরকে যে যন্ত্রণা দেবে তা অবশ্যই আমরা সহ্য করব এবং আল্লাহর উপরই নির্ভরশীলগণের নির্ভর করা উচিৎ”।(সূরা-ইবর াহিম, আয়াত-১২)।
(ক) অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ কিংবা তৌহিদী শরাফত (Unchained divine love or total commitment to the oneness of almighty Allah)
(খ) আধ্যাত্মিকতা বা আধ্যাত্মক শরাফত (Spiritualism)
(গ) স্রষ্টার অস্তিত্বে বিলীনতা বা আত্ম সমর্পণের শরাফত (Total surrender to the Almighty Allah)
(ঘ) পীরের অস্তিত্বে বিলীনতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Total Dedication to the spiritual guide)
(ঙ) শরীয়তের প্রতি আস্থাশীলতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Adherence to the Principles of Shariah)
(চ) সপ্ত পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ বা নৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধির শরাফত (Practical Application of the Seven Methods or Moral Control and Self-Purificati
(ছ) নির্বিলাস সভ্যতার শরাফত (Simplicity of Life)
(জ) বৈষম্যহীনতা বা বিচার সাম্যের শরাফত (Lack of Discrimination or Judicial Equality)
(ঝ) সার্বজনিনতা বা বিশ্বমানবতার শরাফত (Universality of Global Humanity)
(ঞ) সমাজ সংগঠন বা প্রাতিষ্ঠানিক শরাফত (Social Organization or Institutional Structure)
(ট) সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড বা সামাজিক শরাফত (Social Welfare-Oriente
(ঠ) রাজনীতি নিরপেক্ষতা বা অরাজনৈতিক শরাফত (Political Neutrality)
(ড) জ্ঞান-চর্চা বা শিক্ষামূলক শরাফত (Knowledge and Education)
(ঢ) কলূষমুক্ত সঙ্গীত বা স্বর্গীয় সুরের শরাফত (Divine Melody)
(ণ) প্রগতিশীলতা বা প্রগতিশীল শরাফত (Progressivenes
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের সুরক্ষায় খাদেমুল ফোকরার অবদান
এখন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতের উপরোক্ত দিকগুলোর ক্ষেত্রে অছি-এ- গাউসুল আ’যম মুর্শিদে বরহক খাদেমুল ফোকরা হযরত মাওলানা শাহ সুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ )-এর মহান অবদান সম্পর্কে মূল্যায়ন করার কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা চালাব :
(ক) অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ কিংবা তৌহিদী শরাফত (Unchained divine love or total commitment to the oneness of almighty Allah)
অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ বিশ্বমানবতার জন্য হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী(কঃ
অছি-এ- গাউসুল আ’যম এই অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদের সত্যিকার স্বরূপ জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য সুপ্রসিদ্ধ “বেলায়তে মোতলাকা” গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং নিরপেক্ষ তৌহিদের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। সকল মানুষকে নিরপেক্ষ তৌহিদের সামিয়ানা তলে সমবেত হবার জন্য তিনি আহবান জানান।
(খ) আধ্যাত্মিকতা বা আধ্যাত্মক শরাফত (Spiritualism)
খোদার একত্বে মিশতে হলে আধ্যাত্মিক প্রেরণা শক্তির একান্ত প্রয়োজন। ইহা বেলায়ত শক্তি অর্জনের একমাত্র অমূল্য সম্পদ। এ দুর্লভ সম্পদ ও শক্তি অর্জনের জন্য রেয়াজন ও কঠোর সাধনা একান্ত প্রয়োজন। সূফী পরিভাষঅ মতে ইহাকে নেছবতে ছকিনা বা স্থায়ী খোদা-সম্পর্ক নামে আখ্যায়িত করা যায়। এই স্থায়ী খোদা সম্পর্কের অভাবে নাছুত মোকামের পার্থিব স্বভাবপ্রবণ মানুষ স্রষ্টার প্রভুত্ব ভুলতে বাধ্য হয়। খোদা-সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সৎ জ্ঞান ও প্রেরণা শক্তির প্রয়োজন। সৎ জ্ঞান ও প্রেরণা শক্তির অভাবে মানব হুদয়ে খোদার প্রতি বিশ্বাস, অনুরাগ ও ভীতির সঞ্চার হয়না এবং সত্যিকার ইসলাম থেমে মানুষ দূরে সরে পড়ে। এই প্রেম-প্রেরণা ও সৎ জ্ঞানের অভাবে মানুষ বিচার বুদ্ধি হারিয়ে অতি বিলাসী হয়ে উঠে এবং অহঙ্কারী ও অত্যাচারী হয়ে নিজেকে ধ্বংসের পথে টেনে নেয়। তাই হযরত গাউসুল আ’যম মাইজভান্ডারী (কঃ) বিশ্ববাসীকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে খোদায়ী প্রেম প্রেরণায় বেলায়তী শক্তি অর্জনপূর্বক খোদার সাথে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রেম-প্রেরণা (হাল ও জজবা) উন্মুক্তভাবে দান করতেন। তাঁর কাছে যে কেউ উপস্থিত হতো, সে তাঁর আধ্যাত্মিক প্রেরণা বা ফয়েজ রহমত থেকে কখনও বঞ্চিত হত না। অনেকের এত্তেহাদী ফয়েজ অর্জনের সাথে সাথে কাশফ ও জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হয়ে যেত এবং খোদার গোপন রহস্য জ্ঞান অর্জনপূর্বক বহু ওলীগণে উৎপত্তি ও বিকাশ সাধিত হয়।
অছি-এ-গাউসুল আ’যম ছিলেন এ জজবাতি প্রেম-প্রেরণার ধারক ও বাহক। তিনি কঠোর সংযম ও রেয়জত সাধনা করতেন এবং জজবাতি প্রেম-প্রেরণায় বিভোর হয়ে গভীর রাতে খোদার জিকিরে মশগুল থাকতেন।
(গ) স্রষ্টার অস্তিত্বে বিলীনতা বা আত্ম সমর্পণের শরাফত (Total surrender to the Almighty Allah)
স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন, চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ এবং সৃষ্টার নৈকট্য অর্জনই হচ্ছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতের প্রধান লক্ষ্য। স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করতে হলে স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় জীবন যাপন করা উচিৎ এবং লাগামহীনভাবে দুনিয়ার প্রতি মোহান্ধ না হয়ে খোদার ইবাদত বন্দেগী করা উচিৎ। বস্তুতঃ পক্ষে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির মিলনই হচ্ছে সৃষ্টির মূল লক্ষ্য। স্রষ্টার ইবাদতের মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব, যেহেতু ইবাদত বা স্রষ্টার আরাধনা হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সংযোগ তথা সেতু বন্ধনের প্রধান চাবিকাঠি। প্রকৃতপক্ষে, পীরের চেহারা মোবারক স্মরণে রেখে অন্তরের মধ্যে সন্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে খোদার ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়া এবং প্রতিনিয়ত খোদা-স্মরণে মশগুল থাকা প্রতিটি ওলী-প্রেমিক জনগণের একান্ত কর্তব্য। মানুষের জীবন সংকীর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং সময়মত স্রষ্টা-প্রেম জাগ্রত না হলে জীবনে সিদ্ধিলাভ করা সম্ভব হয় না। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সাধনা সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় জীবন নদী এক পর্যায়ে স্রোতহীন হয়ে অজস্র শৈবালধামে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
খাদেমুল ফোকরা (গরীবের বন্ধু, সম্বলহীনের খাদেম) অছি-এ-গাউসুল আ’যম হযরত দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) কারও নিকট কোন কিছুর জন্য মুখাপেক্ষী না হয়ে স্রষ্টা প্রদত্ত আত্মশক্তিতে নির্ভর করে নিজ সামর্থ ও বিচারবুদ্ধি মোতাবেক সমস্ত সমস্যার সমাধান করতেন। তিনি খোদার ইচ্ছার নিকট নিজ স্বার্থ ও বুদ্ধিকে নত করে ধৈর্য্যের সাথে সকল ব্যাপারে প্রতীক্ষা করতেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, একবার তাঁর দোকানের জন্য শহর থেকে ক্রয় করা মালামাল নৌকাসহ ডুবে যাওয়ার সংবাদ শুনে তিনি এতটুকু বিচলিত না হয়ে বলেছিলেন, “আল-হামদু-লিল্ল
“তুমি বল, নিশ্চয় আমার আরাধনা ও আমার উৎসর্গ এবং আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য”। (সুরা-আনয়াম, আয়াত-১৬২)। কোরআন পাকে আরও বলা হয়েছে-“এবং আমরা কেন আল্লাহর প্রতি নির্ভর করব না? এবং নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে আমাদের পথসমূহ প্রদর্শন করেছেন এবং তোমরা আমাদেরকে যে যন্ত্রণা দেবে তা অবশ্যই আমরা সহ্য করব এবং আল্লাহর উপরই নির্ভরশীলগণের নির্ভর করা উচিৎ”।(সূরা-ইবর
সৌজন্যে
“মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ “,আতুরার ডিপো হাসেম বাজার শাখা।
অস্থায়ী ঠিকানাঃখালেদা-মাহমুদা ম্যানশন,সঙ্গীত রোড,পাঁচলাইশ,চট্ট্রগ্রাম. আলাপনী-০১৮৩৮৬৩৭৬৯৮।ই-মেইলঃhoqcommity@gmail.com।