বিপ্লব ঘোষ

“কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিলো কি সু- মধুৃর, আকুল হইলো প্রাণ, নাচিলো ধ্বমনি। কি মধুর আযানের ধ্বণি।” সেই অমর “আযান” কবিতার রচয়িতা মহাকবি কায়কোবাদের ৬৮তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। মহাকবি কবি কায়কোবাদ ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই বার্ধক্য জনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি পুরাতন আজিমপুর কবরস্থানে ঘুমিয়ে আছেন। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কবি ছিলেন খাঁটি বাঙালি এবং মুসলমান।জীবনের সুদীর্ঘ ৮২ বছরই তিনি বাংলা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেছেন। অসাম্প্রদায়িক আধুনিক শুদ্ধ বাংলায় গীতিকাব্য, কাহিনী কাব্য, কাব্য উপন্যাস রচনা করে গেছেন তিনি। কবির যে সকল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়ে ছিল তার মধ্যে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশিত হয় ১৮৭০ সালে মাত্র ১২ বৎসর বয়সে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কুসুম কাননে’ প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। এ দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর পরই তিনি কবি হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং প্রশংসা পেতে থাকেন। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অশ্রুমালা’। এ অশ্রুমালা প্রকাশের পর থেকেই কায়কোবাদ সাহিত্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত হন। কবি নবীণ চন্দ্র সেন, সম্পাদক বঙ্গবাসী, ঢাকা গেজেট ও কলকাতা গেজেট অশ্রুমালায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। এরপর ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয় কবির অমর কাব্য মহাকাব্যগ্রন্থ ‘মহাশ্মশান’। যা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত। যা তার শ্রেষ্ঠ রচনায় মহাকাব্য মহাশ্মশান। এ কাব্যগ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে কবি তাঁর অসাধারণ, নিষ্ঠা, সাধনা ও বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। পানি পথের এ যুদ্ধে মারাঠা শক্তি যদিও মুসলমানদের হাতে পরাজয় ঘটে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ভারতে হিন্দু-মুসলিম উভয় শক্তি দু’টিই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ভারত বর্ষে ইংরেজদের আগমন ও আধিপত্য বিস্তার হয়। পুনঃরায় কিভাবে ভারতের স্বাধীনতা ফিরে আসতে পারে তারই বৈশিষ্ট বহন করে কবির মহাকাব্য মহাশ্বশ্মানে। এরপর তিনি শিব মন্দির, অমিয় ধারা, মহরম শরীফ বা আত্ম বিসর্জন কাব্য, শ্মশান ভষ্ম তাঁর জীবদ্দশায় এ সকল গ্রন্থ প্রকাশ হয়ে থাকে। কবির মৃত্যুর পর প্রকাশ হয় প্রেমের ফুল, প্রেমের রানী, প্রেম পারিজাত, মন্দাকিনি ধারা ও গাউছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ। এমনিভাবে কবির মোট ১৩টি কাব্যগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে উপহার রেখে গেছেন। কথিত আছে, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর কবির বেশ কিছু পা-ুলিপি তার বংশধরদের মধ্য থেকে হাতছাড়া হয়ে যায়। তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফিরে পাওয়া গেলে হয়তোবা বাংলা সাহিত্যের জন্য বাংলা ভাষাভাষী বাঙালী জাতির জন্য অনেক উপকারে আসত। কবিকে স্মরণ করতে আজ ২১ জুলাই রোববার সকালে কবির গ্রাম আগলা পূর্বপাড়া মাঝপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দোয়ার মাহফিল, আলোচনা সভা ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী পালন করবে মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদ ও এলাকাবাসী। এছাড়াও কবিকে স্মরণ করতে আগামী ২৪ জুলাই মহাকবি কায়কোবাদ সাহিত্য সংঘ উপজেলা সদর উদয়ন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলাদা কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here