
মশাদেরকে হালকা ভাবে নেবেন না। সারা পৃথিবীতেই এখন মশাদের বাড়বাড়ন্ত। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ, যেমন, ডেঙ্গি, চিকনগানিয়া, ম্যালেরিয়া, জিকা, ইত্যাদির প্রকোপ [Mosquito-borne diseases, World Health Organization]। এর মূল কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন। পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে [Impact of warmer and wetter climates, Effects of global warming on human health, Wikipedia]।
এসময় স্থায়িভাবে মশা নিবারণের উপায় কী হতে পারতো জানেন? হতে পারতো, সরকারি উদ্যোগে বড়ো আকারে অভিযান চালিয়ে মশাদের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ। হতে পারতো, পরিবেশে ব্যাপকভাবে মশাখেকো ব্যাঙ, বাদুর, চামচিকে, পাখি, মাছ, মাকড়সাদের সংরক্ষণ।
কিন্তু মশক নিয়ন্ত্রণ কবে হবে সেই ভরসায় বসে থাকবেন না। আপাতত মশার হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে নিয়ে নিজেই সতর্ক হোন। কেবল একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন। মশা তাড়াতে গিয়ে আপনি নিজেই যেন আবার বিষাক্ত রাসায়নিক জনিত দূষণের শিকার না হয়ে যান। মশার তাড়ানোর অনেক উপকরণ, বিশেষ করে অনেক মশা তাড়ানোর ধূপই কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক [how safe are mosquito coils?-Worldofchemicals.com]। আমরা এখানে যে ৮টি মশা নিবারণের উপায় দিচ্ছি সেগুলো এদিক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ।
মশার হাত থেকে বাঁচার উপায় : কাজের অথচ নিরাপদ
উপায়-১
আপনার ঘামের গন্ধ, আপনার ত্বকে বেড়ে ওঠা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি অনুজীবের গন্ধ মশাদেরকে আপনার উপস্থিতি বুঝতে সাহায্য করে। তাই মশাদের সাথে লুকোচুরি খেলতে চাইলে প্রতিদিন পরিষ্কার জল দিয়ে ভালো করে স্নান করুন। সর্বদা হাত-পা-মুখ-ঘাড় পরিষ্কার রাখুন। পরিষ্কার জামাকাপড় পড়ুন। মশাদের আপনাকে খুঁজে পেতে সমস্যা হবে।
উপায়-২
মশার ভয়ে সরকারি অ্যাড দেখে হাত-পা পুরো ঢাকা পোশাক নিশ্চই পরছেন। ঠিকই করছেন। এরকম পোশাকই পরুন। তবে পোশাকের রঙটাও আপনাকে ঠিকঠাক রাখতে হবে। আসলে কালো, নীল, লাল, মেরুন এসব ডিপ রঙ মশারা খুব সহজে আর ভালোভাবে দেখতে পায়। তাই ডিপ রঙের পোশাক পরা মানে, ফ্রি মিলের জন্য মশাদেরকে উদার আমন্ত্রণ জানানো। ভুলেও ওটা করবেন না। পোশাক পড়ুন সাদা, হলুদ বা কোনো হালকা রঙের।
উপায়-৩
পায়ে সবসময় মোজা পরা অভ্যাস করুন। অনেক জাতের মশাই শরীরের নীচের দিকে, বিশেষ করে পায়ে বেশি কামড়ায়। মোজা মশাদের আক্রমণ থেকে আপনার সাধের পদযুগলকে বর্মের মতো রক্ষা করবে। শুধু খেয়াল রাখবেন এই মোজা যেনো যথেষ্ট পুরু এবং পরিষ্কার হয়।
উপায়-৪
পারফিউম, সেন্ট এসব কি আপনি খুব পছন্দ করেন? তবে জেনে রাখুন, এসবের গন্ধ মশারাও খুব পছন্দ করে। তাই মশাদের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে এসব উগ্রগন্ধী দ্রব্য বেশি ব্যবহার না করাই মঙ্গল।
উপায়-৫
আপনি কি অধিক চিনিযুক্ত খাবার ও বাজার থেকে কেনা প্রসেসড ফুড বেশি খান? তবে আপনার ডায়েটে সামান্য পরিবর্তন করলে সুফল পাবেন। অধিক চিনিযুক্ত খাবার ও প্রসেসড ফুড কম খান। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওগুলো বেশি খেলে মশারা বেশি আকর্ষিত হয়।
উপায়-৬
আপনি কি রসুন খুবই কম খান? এরপর থেকে রসুনটা একটু বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। মশারা রসুনের গন্ধ একেবারেই পছন্দ করেনা। রসুন থেতো করে তার রস হাতে পায়ে মাখলে আরো ভালো ফল পাবেন। (তবে সেক্ষেত্রে গন্ধের ঠেলায় মশাদের সাথে সাথে আপনার গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডও আপনাকে ছেড়ে পালাতে পারে!)
উপায়-৭
মাঝেমধ্যে তরল চলে নাকি? মানে ঐ বিয়ার-টিয়ার কিংবা মদ-টদ আরকি। ওসব খেলে কিন্তু মশারা আপনার প্রতি বেশি মনোযোগ দেবে। এটা পরীক্ষিত সত্য। অতএব মশার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে ওসব না খাওয়াই ভালো।
উপায়-৮
যে সময়টায় মশারা সবথেকে বেশি অ্যাক্টিভ থাকে সে সময়টায় সাবধান হোন। অর্থাৎ ভোরের ও সন্ধার দু ঘন্টা আগে থেকে পরে। এসময় বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। একান্ত বেরোতে হলে শরীর ভালোভাবে ঢাকা পোশাক পরে বেরোবেন। বাড়িতে থাকলে বাড়তি সতর্ক থাকবেন।

মশার হাত থেকে বাঁচার উপায় : সারকথা
এখানে দেওয়া মশার হাত থেকে বাঁচার উপায়গুলো খুবই সহজ, বাস্তবসম্মত, নিরাপদ ও কার্যকরী। আপনি নিশ্চই নিজের মতো করে মশাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। চালিয়ে যান আপনার লড়াই। তবে মশার বিরুদ্ধে লড়াইটা রাসায়নিক পদ্ধতিতে না করলেই ভালো। ওতে মশাদের থেকেও আপনার নিজের ক্ষতিটাই বেশি হয়। বরং বেশি করে কাজে লাগান মশারি ও মশারোধী জাল। এবং কাজে লাগান এখানে দেওয়া ৮টা মশা নিবারণের উপায়। দেখবেন, মশাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে আপনি অনেকটাই সফল হবেন। সঙ্গে আপনার বাড়তি লাভ হবে সুসাস্থ্য।