করোনার কারণে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে আগামী ৩ বছরে কীভাবে দেশের মানুষকে তা থেকে রক্ষা করা হবে, সেই পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের শুরুতে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী। করোনার এই পরিস্থিতিতে দল বা মতাদর্শ বিচার না করে অসহায়-দুঃস্থদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর নির্দেশ দেন তিনি।
অসহায় হতদরিদ্রদের জন্য আরো ৫০ লাখ অতিরিক্ত রেশনকার্ড দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রাণ পৌঁছাতে হবে সঠিক মানুষের হাতে। রমজানে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান। করোনা আক্রান্তদের প্রতি মানবিক আচরণ করারও আহ্বান জানান তিনি।

করোনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভিক্ষের আভাস আসছে পৃথিবীতে। তাই দেশে তিন অর্থবছর পর্যন্ত সহায়তার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, একটা অদৃশ্য শক্তি। এমন একটা ভাইরাস, যাকে কেউ চোখে দেখতে পারে না। কিন্তু তারই প্রভাবে সারাবিশ্ব যেন আজকে একটা জায়গায় চলে এসেছে। এই ভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সারাবিশ্ব, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে। এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় আছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে রক্ষা করা বা এই ধরনের দুর্ভিক্ষ বা অর্থনৈতিক মন্দা যদি হয়, তা থেকে দেশকে আমরা কীভাবে রক্ষা করব, এ কথা চিন্তা করে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা, আসলে প্রায় বলতে গেলে এক লাখ কোটি টাকার মতো একটা প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরি করেছি। তা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। কোনোরকম মন্দা আসলে আমি যেন তা মোকাবিলা করতে পারি। সেটা শুধু এখনকার জন্যই না, আগামী ৩ অর্থবছরে আমরা কীভাবে দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষা করব, সেই পরিকল্পনাও আমরা নিচ্ছি।

তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথা এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হবে এবং কাজ করতে হবে, কাজ ছাড়া তো হবে না। যে কাজগুলোয় খুব বেশি লোকের সঙ্গ না হয়, একটু দূরে থেকে করা যায়, সেই কাজগুলো করা যাবে। যে কারণে দেশের শিল্প-কারখানা, ওষুধের শিল্প বা অন্যান্য শিল্প – এগুলো একটা আলোচনার মাধ্যমে তারা চালাতে পারেন। কিন্তু সেখানেও যারা কাজ করবেন, সেখানেও নিজ নিজ সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষি কাজ থেমে থাকলে চলবে না, যেহেতু কৃষি কাজটা খোলা মাঠে হয়, এই সূর্যের তাপ, খোলা বাতাস – এটা কিন্তু আমাদের এই করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি দেয়।
তিনি বলেন, যেহেতু সবকিছু এখন বন্ধ। অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে। যারা দিনমজুর কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী, এমনকি নিম্নবিত্তদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমরা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। সবাইকে সহযোগিতা করব। এমনকি এটা আমরা শুরু করেছি। মানুষের কাছে হাত পাততে পারে না যারা, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আরও ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড করে দেব। ১০ টাকার ওএমএস চাল নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এটা স্থগিত করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছিলাম কিন্তু করোনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কিছুটা ধাক্কা আমাদের দেশে আসে আসে। এজন্য আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান বাতিল করি। জনসমাগম বাদ দিতে এসব করেছি আমরা।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলায সব থেকে বেশি আক্রান্ত। অন্যান্য জেলায়ও কিছু আছে কিন্তু ঢাকা এবং এর আশপাশে ভাইরাস কেন এত বেশি হলো, এটি নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চাই। এ রোগে এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি আমি। যারা এখন চিকিৎসারত আছেন তারাও দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক, এটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ, কোস্টগার্ড যে যেখানে আছে প্রত্যেকে কিন্তু অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩ জেলার এবং ১২ এপ্রিল বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৬ জেলার করোনা সম্পর্কিত খোঁজ এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here