আধা বোতল মদ ও ১৫০ গ্রাম গাঁজা রাখার অপরাধে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। যদিও তার বাসা থেকে এসব উদ্ধার করা হয়নি। এজন্য কুড়িগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কারা সরবরাহ করেছিল সেই ১৫০ গ্রাম গাঁজা ও আধা বোতল মদ।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়ির গেট ও ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মারধর করতে করতে সাংবাদিক আরিফকে তুলে আনে একদল সাদা পোশাকধারী। পরে তাকে ডিসির অফিসে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মাদক পাওয়ার অভিযোগ এনে সাজা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র আবদুল জলিল বলেন, ‘ডিসি সুলতানা পারভীন একজন চরম মিথ্যাবাদী ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি। তিনি রাজা-বাদশা আমলের মতো কুড়িগ্রামকে তার তালুক মনে করেন। আমাদের তার প্রজা মনে করেন। তিনি ভুলে গেছেন, তিনি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। গণতান্ত্রিক সরকারের মাঠ প্রশাসনের প্রতিনিধি।’
তিনি বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম একজন চৌকশ সাংবাদিকই নন, তিনি একজন আদর্শ শিক্ষকও। ডিসির অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার সংবাদ প্রকাশ করায় তাকে মারাত্মক ভয় পেয়ে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে।’
মদ কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে? কারা সরবরাহ করেছে, কার নির্দেশে এসব সংগ্রহ করে সাজায় ব্যবহার করা হয়েছে? এসব উদঘাটন করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে মানুষের মাঝে একটি ভুল বার্তা যেতে পারে। তাই সরকার, দেশ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই তা খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
কুড়িগ্রামের আপামর মানুষের জনপ্রতিনিধি হিসেবে সবার মতোই আমারও কথা একটাই, আরিফুল ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে একজন সজ্জন মানুষ হিসেবে চিনি ও জানি। তাকে কেন এভাবে তুলে নিয়ে অসম্মান করা হলো? তিনি একজন কলেজ শিক্ষক। এভাবে কি সাজা দেওয়া এবং মারধর করা যায়? দেশে কি আইন নেই?’
প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সফি খান বলেন, ‘একজন বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ সাংবাদিক হিসেবে আরিফুল ইসলামকে চিনি। আমরা একসঙ্গেই কাজ করি। তার কোনও ধরনের নেশা দেখি নাই। এমনকি তিনি পানও খান না। আরিফের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণই মাস্টার প্ল্যান করে করা হয়েছে। আমরাও বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারছি। এখন ঘটনা যেটাই হোক, সবার আগে আরিফুলকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এটা কুড়িগ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলী বলেন, ‘আপনারা আমাকে কোনও প্রশ্ন করবেন না। যে ঘটনা কুড়িগ্রামবাসী জেনেছে ও দেখেছে, আমিও তাদের মধ্যেই একজন। শুধু এতটুকু বলবো, চোখের জল ঝরে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আপনারা গোটা কুড়িগ্রামের প্রশাসন সম্পর্কে জানুন, কে সঠিক?’
ব্যবসায়ী ও কুড়িগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সমাজের প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। কারা মাদক সরবরাহ করলো এবং পরিকল্পিত সাজা দেওয়া হলো, সেসব ষড়যন্ত্রকারীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
কুড়িগ্রাম সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস বলেন, কারা মাদক সরবরাহ করেছে, কার নির্দেশে এই মাদক আনা হয়েছে, কারা দিয়েছে, তা খতিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। আরিফকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার তদন্ত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেন দেশে এই ধরনের খারাপ নজির না আসে।