দিনভর বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দিনটি পালন করে থাকলেও বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে এবার এ উৎসবটি অনারম্বর ভাবে উদযাপন করা হবে। শুধু বুদ্ধপূজা, মহাসংঘদান এর মত আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ খাকবে বলে এই ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন।

যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বুধবার সারা দেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন করছে।

বৌদ্ধ ধর্মমতে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এ তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতমবুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন নেপালের লুম্বিনী কাননে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বুদ্ধ পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম,বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই তিন ঘটনার স্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বিশ্বের সব স্থানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছেই বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।

বুদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমায় মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ নামে খ্যাত। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন । আবার ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়।

বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধরা বুদ্ধপূজা-সহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা এবং নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তাঁরা বুদ্ধানুস্মৃতি ও সংঘানুস্মৃতি ভাবনা করে। বিবিধ পূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিবিধ সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। বৌদ্ধবিহারগুলিতে বুদ্ধের মহাজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা-সহ ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়।

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে দিনটি সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন।

দিবসটি উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট মহামারির ফলে এ বছর বুদ্ধ পূর্ণিমা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হবে।

‘আমি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলকে নিজ নিজ ঘরে পরিবার পরিজনের সাথে এ উৎসব উদযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি,’ বাণীতে বলেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, দেশে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে সমুন্নত রাখতে বৌদ্ধ ধর্মের নেতাদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণে বর্তমান বিশ্ব বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ প্রেক্ষাপটে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে এবার বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বোয়ালখালীতে বুদ্ধ পূর্ণিমার উপলক্ষে বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন ওসি মোঃ আবদুল করিম
বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল করিম বলেছেন- মহামতি গৌতম বুদ্ধ অহিংসা ও শান্তির বাণী প্রচার করে গেছেন। এহেন মহামনিষীর জীবনলেখ্য অনুস্বরণের মধ্য দিয়ে সবাইকে উজ্বীবিত হতে হবে। তিনি আরো বলেন -এবার করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বোয়ালখালী থানা এলাকার সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সকল ধর্মীয় অনুশীলনাদি পালন করে সরকারের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা করবেন। ৫মে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা’২০ উপলক্ষে বোয়ালখালী সম্মিলিত বৌদ্ধ পরিষদের নেতৃবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি বাবু তপন বড়ুয়া, সহ সভাপতি বাবু মিলু বড়ুয়া, সাধারন সম্পাদক বাবু পল্টু কান্তি বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাবু উত্তম বড়ুয়া, সহ অরথ সম্পাদক বাবু রাহুল বড়ুয়া, সদস্য বাবু শ্যামল বড়ুয়া, বাবু পারিজাত বড়ুয়া, বাবু সনৎ বড়ুয়া ও পরিষদের প্রথম প্রতিষ্টা উদ্যোক্তা সাংবাদিক অধীর বড়ুয়া।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here