রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা, তাতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সমর্থন দিক, নইতো (সংস্থাগুলো) দেশ ছেড়ে চলে যাক।’

এর আগে, দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর গত ২২ আগস্ট রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘এবার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে কঠোর হবে সরকার। আর কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলমান এনজিও (দেশি-বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা প্রত্যাবাসনবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে বিরোধীতার পেছনের কারণ হচ্ছে, ভাসানচরে পাঁচ তারকার মতো কোনো অভিজাত হোটেল নাই। ওখানে তাদের (আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর কর্মী) থাকতে কষ্ট হবে, এখানকার (কক্সবাজার) মতো আরামে থাকতে পারবে না।’

এদিকে, ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমার মনে হয় রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানোর এখনই সময়। তবে ওই দ্বীপে সব রোহিঙ্গাকে পাঠানো সম্ভব নয়। আমরা মাত্র ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠাতে পারি। তাদের জোর করে পাঠাতে চাই না। আমরা আশা করেছিলাম, তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যাবে।’

‘দ্বীপে শরণার্থীরা অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে। কিন্তু কক্সবাজারে কাজ করা ত্রাণ সংস্থাগুলো ভাসান চরে যেতে চায় না। কক্সবাজারে তারা পাঁচ তারকা হোটেলে থাকতে পারেন, তাই তারা অন্য জায়গায় যেতে চান না।’

এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার মধ্যে যারা রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনীতিকরণ করতে চাইছে আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি৷’

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো আপনাদের পরিকল্পনা সমর্থন না করলেও আপনারা রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, সম্ভবত। আমরা অনেক লিফলেট, সিডি ও ভিডিও জব্দ করেছি, যেগুলোতে রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট কিছু দাবি না মানলে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কিছু দাবি মানতে রাজি হয়েছে, যেমন নিরাপত্তা দেওয়া ও চলাফেরার অনুমতি। তবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া, রোহিঙ্গাদের এথনিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ঘরবাড়িতে ফেরার অনুমতি দেওয়ার মতো দাবি মানা হয়নি।’

জাতিসংঘের সমর্থন ছাড়া কি বাংলাদেশ ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে সরাতে পারবে? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তা করতে পারবো। জাতিসংঘকে এই পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে, নয়তো তারা রোহিঙ্গাদের তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে। এই মানুষদের অনেকেই ইতিমধ্যে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা স্থানীয়দের প্রায় দ্বিগুণ। স্থানীয়রা নিয়মিত অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগ করছে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। সে কারণে আমরা তাদের ভাসান চরে যেতে বাধ্য করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র নয়। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র। এরপরও আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করেছি। এখন অন্যদের এগিয়ে আসতে হবে কারণ এটা শুধু আমাদের সমস্যা নয়। এটা একটা আন্তর্জাতিক ইস্যু। আমরা যদি তাদের নিরাপত্তা না দিতাম, তাহলে তারা গণহত্যার শিকার হতে পারতো।’

জাতিসংঘের বিরোধিতা করার সামর্থ্য কি বাংলাদেশের আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ আমাদের বেশি সাহায্য করছে না। তারা মিয়ানমারের রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারছে না। জাতিসংঘের এই সংস্থাগুলো কেন মিয়ানমারে কাজ করছে না? তাদের মিয়ানমারে যাওয়া উচিত, বিশেষ করে রাখাইনে। সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যা রোহিঙ্গারা ফিরতে সহায়তা করতে পারে। জাতিসংঘের কাছ থেকে আমরা যে কাজ প্রত্যাশা করি, তা জাতিসংঘ করছে না।’

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যদি আপনাদের পরিকল্পনা সমর্থন না করে তাহলে কি আপনারা তাদের তাড়িয়ে দেবেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, আমরা তাই করবো। ভাসানচর নিরাপদ। আমরা সেখানে সুন্দর বাড়ি ও বাঁধ নির্মাণ করেছি। আমরা যদি বাংলাদেশিদের সেখানে যেতে বলি তাহলে তারা নিশ্চয় যাবে।’

রোহিঙ্গারা যদি ভাসান চরে যায় তাহলে কি তারা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারবে, নাকি তাদের ওই দ্বীপেই থাকতে হবে? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় তারা ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করবে।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here