অনলাইন ডেক্স: ভারত থেকে প্রতিনিয়ত আসছে গরুর চালান। সিলেট সীমান্ত দিয়ে আসা এসব চালানে মারা যাওয়া দু’চারটি গরু ফেলে রাখা হয় চারণ ভূমিতে। আর আশ্চর্য হলেও সত্য, এসব মরা গরুতে মুখ দেয় না জীবজন্তুও।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অতিরিক্ত এন্টিডোজের কারণে গরুগুলোর দেহে বিষক্রিয়ায় পশু-পাখি কিংবা জীবজন্তুর মুখ দিচ্ছে না। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদেরও।

এ ধরনের গরুর চালান চোরাই পথে দেশে প্রবেশ করছে অহরহ। খাবারের মধ্যে গরুর মাংস কম-বেশি সবার কাছেই প্রিয়। বিয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গরুর মাংস থাকাটাই যেনো নিয়মের অংশ।

প্রতিনিয়ত সিলেট নগরের বিভিন্ন মাংসের দোকানে শত শত গরু কেটে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অবিক্রিত বা বাসি মাংস দিনের পর দিন রেখেও বিক্রি করা হয়। পাচার হয়ে আসা গরু যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না, তেমনি অধিকাংশ গরু জবাই করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয় না। ফলে এসব গরুর মাংসই মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একেতো চর্বিযুক্ত গরুর মাংস মানুষের হার্টের জন্য ক্ষতির কারণ, তাতে রুগ্ন গরুকে ধারাবাহিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে মোটাতাজা করে বাজারে বিক্রি করা হয়। এসব গরুর মাংস খেয়ে মানবদেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গরুর দেহে ব্যবহৃত হাইডোজ এন্টিবায়োটিক ছড়াচ্ছে মানবদেহেও।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন এমন ভয়াবহ তথ্য দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, গরুর দেহে প্রয়োগ করা এন্টিবায়োটিকের মেয়াদ থাকে সপ্তাহ থেকে ১০ দিন। এরমধ্যেই গরু কেটেকুটে মাংস খাওয়া হয়। ফলে হাইডোজ এন্টিবায়োটিক মানবদেবে প্রবেশ করে। আর রোগ জীবাণু আক্রান্ত হলেও এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। এজন্য ভয়াবহতার আগেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় বলেন, পাচার হয়ে আসা গরুগুলো স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়াই আসছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। আর বাজারে বিক্রিত মাংস স্বাস্থ্যসম্মত কিনা- এক্ষেত্রে বাস্তবজ্ঞান কারোরই নেই। সামনে কোরবানির ঈদ, সীমান্ত হয়ে হাজার হাজার গরু আসছে, এক্ষেত্রে এখনই আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। আমদানিকালে সীমান্তেই গরুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা উচিত।

তবেই মানুষ সন্তুষ্টচিত্তে মাংস কিনে খেতে পারবে। অবশ্য ইদানীং উচ্চ আদালতসহ সরকারের উচ্চ মহল বিষয়টি নজরে আনছেন, এটা সুখবর বটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আসা হাজার-হাজার গরু স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়াই দেশে প্রবেশ করছে। এসব গরুর চালান ছড়িয়ে যাচ্ছে সিলেট নগরীসহ সারা দেশে। মোটাতাজাকরণে এসব গরুর দেহে ধারাবাহিক অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন বেপারীরা। আর মাংসের দোকানে বিক্রির আগে গরুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও তা কেবল লোক দেখানো।

প্রাণিবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আরো বলেন, এখন ১৫ দিনের বাচ্চার দেহেও এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না। কারণ সে তার মায়ের কাছ থেকে হাইডোজ এন্টিবায়োটিক পেয়ে গেছে আগেই। কিছুদিন আগে একজন ওয়ার্কারের দেহে ৮ ধরনের এন্টিবায়োটিক দিলেও কাজ করেছে মাত্র একটি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। ফার্মেসিগুলোর এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।

তিনি বলেন, গরু মরার পরও দেহে দেহে বিদ্যমান কেমিক্যাল ও হাইডোজের উপস্থিতি থাকায় জীবজন্তুরাও খায় না। শুধু গরুতেই নয়, সব জায়গায় এমন অবস্থা। এসব কারণে বিদেশে যেতে হলে বিমানবন্দরে আমাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা দিতে হয়। নিতে হয় ভ্যাকসিন।

সিসিকের তথ্যমতে, নগরীর একটিমাত্র সরাইখানা নগরের বাগবাড়িতে। নামেমাত্র গরু একশ টাকা হারে সিল মেরে জবাই করে দেন মাস্টাররোলে নিযুক্ত ইমাম। স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নেই সিসিকের স্থায়ী ভেটেরিনারি চিকিৎসক। সিলেট পশু হাসপাতালের একজন মাত্র চিকিৎসক দিয়ে চলে গরু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যক্রম। তা দেখাশোনা করতে একজন মাত্র সরাইখানা পরিদর্শক ও মাংসে সিল মারার জন্য একজন সহায়ক রয়েছেন।সরেজমিনে সরাইখানা ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরাইখানায় সিল মারা গরু মাংস বিক্রেতারা ভাগাভাগি করে নিয়ে টাঙিয়ে রাখেন দোকানে। ওটা কেবলই শো হিসেবে রেখে ধারাবাহিক রুগ্ন গরু পরীক্ষা ছাড়াই দোকানের মধ্যে জবাই করে বিক্রি করেন। আর ক্রেতাদের দেখানো হয় সিসিকের সিল মারা ঝুলিয়ে রাখা অংশ। কখনো ওই অংশ বিক্রি হয়ে গেলে দোকানি নিজেরাই সিল মেরে রাখেন। অবশ্য এজন্য ঝামেলায় না পড়তে তদারক দলকে নিয়মিত ৩শ টাকা করে দিতে হয় দোকানপ্রতি, এমন অভিযোগ মিলেছে।

গত ২৬ মে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়াই সিলেটের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি করার অপরাধে এক মাংস দোকানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সিসিকের জবাইখানা পরিদর্শক মুহিবুর রহমান জানান, নগরে মাংসের দোকান রয়েছে ৮৯টি। সরাইখানায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে গরু জবাই হয় ২৫ থেকে ২৮টি। এসব গরু সিল মেরে জবাই করেন নিযুক্ত ইমাম। কসাইরা সিলমারা গরু ভাগাভাগি করে নিয়ে যান। লোকবলের অভাবে পুরোপুরি তদারকি সম্ভব হয় না। আর অধিকাংশ দোকানি গরু নিয়ে আসেন না।

সুত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here