আলোকিত ডেক্স : ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম ওয়াসার বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে এই প্রকল্পের অধীনে। একনেকে অনুমোদনের পর দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ বিলম্বে প্রকল্পের ডিজাইন, ঠিকাদার নিয়োগও দীর্ঘায়িত হয়। অবশেষে প্রায় সাড়ে তিন বছর আজ সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উঠছে প্রকল্পটি। আজকের বৈঠকে ঋণচুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশের জন্য অনুমোদন দেয়া হবে।

ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প একনেক অনুমোদনের সাড়ে তিন বছর পর আজ উঠছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে

সরকারের ক্রয় সংক্রানত্ম কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর পরবর্তী কাজ কী হবে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যেহেতু বিদেশি ঋণের মাধ্যমে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়েছে। তাই কোন ঠিকাদারকে অনুমোদন দিবে তা সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আমরা ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেবো।’

সেই হিসেবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্যাদেশ দেয়ার এক মাসের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। সেই হিসেবে বলা যায় আগামী মাস থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারে।

কবে নাগাদ তা শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালে শেষ হতে পারে। এই পানি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ার শিল্পাঞ্চলে ব্যবহৃত হবে।

২০১৬ সালে একনেক হওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিন বছর পর তা সরকারের ক্রয় সংক্রানত্ম মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উঠছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে গত ১০ বছর ধরে প্রথমে চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘একনেক অনুমোদনের পর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া, মাঠ পর্যায়ে সার্ভে করা এবং নতুন নতুন এলাকা প্রকল্পের পানি সরবরাহের আওতায় আনায় তা দীর্ঘায়িত হয়েছে। একইসাথে ঋণদাতা সংস্থার শর্তও ছিল। সব মিলিয়ে সময় নষ্ট হয়েছে। তবে এখন আগামী তিন মাসের মধ্যে হয়তো পুরোদমে কাজ শুরু করা যাবে।’

এদিকে গত ডিসেম্বর এই প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হলেও ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী কোরিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে হবে। সেই হিসেবে দুটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিলেও তাইয়াং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড সর্বনিম্ন দর দিয়েছে। এতে এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পেতে পারে। দিনে ছয় কোটি লিটার পানি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। এক হাজার ১৯৫ কোটি টাকায় বাসত্মবায়িত হচ্ছে প্রকল্পটি। স্বল্প সুদে ৭৫৪ কোটি টাকা ৬৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

জানা যায়, প্রকল্পের অধীনে পানি শোধনাগার নির্মাণের জন্য ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গা বোয়ালখালীতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া পটিয়া ও আনোয়ারায় নির্মাণ করা হচ্ছে রিজার্ভার। এছাড়া ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনও স্থাপন করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার চলমান পানি সরবরাহ প্রকল্পগুলোর (মোহরা, কর্ণফুলী ও মদুনাঘাট) মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্প হতে পারে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প। জানতে চাইলে ওয়াসার একাধিক প্রকৌশলী জানান, ভান্ডালজুড়ির পানি যাবে বোয়ালখালী ও পটিয়ার শিল্পাঞ্চল, কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা, কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেডসহ কর্ণফুলী তীরের শিল্পাঞ্চল এলাকায়। এতে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বেশি থাকবে। আবাসিক সংযোগে ওয়াসার লাভ কম, কিন’ বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগে পানির মূল্য বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকছে। ওয়াসার অন্যান্য প্রকল্পের বেশিরভাগ পানি যায় আবাসিকে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here