আলোকিত ডেক্স : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথা এসেছে ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেনো? অবশ্যই টাকা আছে। তবে লুটে খাওয়ার জন্য টাকা নেই। আর যারা লুটে নিয়েছে তাদের আমরা চিনি।

সোমবার (১৭ জুন) সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাজেট বিষয়ে সংসদে ও বাইরে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সোমবার বিকেল তিনটার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট নিয়ে অযথা কিছু কিছু কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংসদে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর রোববার থেকে ২০১৮-১৯ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়ে গতকাল শেষ হয় এবং সম্পুরক বাজেট পাস হয়।

সম্পূরক বাজেট পাস ও মঞ্জুরি বরাদ্দসহ পাস হওয়ার আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট ও সংশোধিত বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা, অনেক কথা বাইরেও হচ্ছে, এখানেও হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন যে এই বাজেট কিছুই না। যারা এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে কথা বলছেন তাদের কাছে আমার এটাই প্রশ্ন, বাজেটই যদি সঠিকই না থাকে মাত্র দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এত উন্নতি করলো কিভাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ বলছেন, বাজেট দিয়েছেন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বাজেট বাস্তবায়নে একটা বিষয় আছে। আমরা বাজেট উপস্থাপন করছি জুন মাসে। এক বছর পর আবার বাজেট দেবো। এক বছরে আমাদের যে বাজেট, বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেট যেটা আমরা বস্তবায়ন করি। আমাদের একটা নিয়ম আছে মাঝামাঝি সময় একটা হিসাব নিই। পরিমার্জন সংশোধন করে থাকি, যাতে অর্থটা যথাযথভাবে কাজে লাগে। সেটাই সম্পূরক হিসেবে পরিবর্তিত উপস্থাপন করে থাকি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বলা হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারি না, সেটা যদি বলে, তাহলে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেয়েছিলাম ২০০৮ সালে। আজকে সেখানে আমরা বাজেট ৫ লাখ টাকার ওপরে চলে গেছি।এটা তাহলে করলাম কিভাবে, যদি আমাদের বাস্তবায়নের দক্ষতাই না থাকে। কাজেই আমি বলবো, উন্নয়নের সুযোগটা সবাই নিচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন যে, বিদ্যুত এত উৎপাদন হলো, তাহলে শতভাগ পায় না কেনো। বিদ্যুত প্রকল্পগুলো সবসময় চালু থাকে না। প্রত্যেক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংস্কার করতে হয়, বন্ধ থাকে। আজ ৯৩ ভাগ মানুষ কিন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশও হয়ে গেছে।’

আরেকটা কথা এসেছে যে, ব্যাংকে টাকা নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেনো। অবশ্যই টাকা আছে। লুটে খাওয়ার টাকা নেই। আর যারা লুটে নিয়েছে তাদেরকে আমরা চিনি। কেউ দেশান্তর হয়ে পড়ে আছে অথবা দুর্নীতির দায়ে কারাগারে বন্দী। অনেকেই ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে আর কোনদিন দেয়নি। এরকম বহু ঘটনা আছে। সময় আসলে এ ব্যাপারে আমরা আরও আলোচনা করতে পারবো।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই আজকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা অনেক উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। যা দেখে বিশ্ব অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। যেখানে যাই সেই কদরটা পাই, দেশবাসি সেই সম্মানটা পায়। অযথা কিছু কিছু কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। আমরা যদি কাজই না করতাম দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে কমে ২১ ভাগে নেমে আসতো না। ২১ ভাগ থেকে আরও নামাবো।’

প্রধানমন্ত্রী বাজেটকে উচ্চাবিলাসী আখ্যায়িত করে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘কোনো মানুষের যদি উচ্চাভিলাস না থাকে সে কোনো অর্জন করতে পারে না। উচ্চাভিলাস না থাকলে এসব অর্জন কোনভাবেই সম্ভব হতো না। তবে বিগত বছরসমূহে বাজেট বাস্তবায়ন, পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে আমাদের লক্ষ্য সমূহ সবসময় বাস্তবভিত্তিক ছিল।’

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো বাজেটে কিছুটা সংশোধন, সংযোজন এবং পরিমার্জনের প্রয়োজন হয় এবং আমরা প্রতিবছরই তা করে থাকি। এটা আমাদের দেশে বলে নয়, পৃথিবীর সব দেশে বাজেটে প্রস্তাবনা দেয়। যেমন আমি এ বছর যে প্রস্তাবনা নিয়ে আসছি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য। সেখানে আমরা একটা ধারণা করি যে, আমরা কত রাজস্ব আয় করবো। সেই সঙ্গে উন্নয়নের বাজেটটা আমরা ঠিক করি। কোন লক্ষ্যে পরিচালিত হবে সেটা সুনির্দিষ্ট করি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমরা যে বাজেটটা দিয়েছিলাম। সেটাতেই পরিবর্তন পরিমার্জন করে সংশোধনী বাজেটের প্রস্তাব আনা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গ্রস বরাদ্দ ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা এবং নিট বরাদ্দ ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নিট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ৩৭টি মন্ত্রণালয়ে অথবা বিভাগের গ্রস বরাদ্দ ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গ্রস বরাদ্দ ৩৬ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে নিট ২২ হাজার ৩৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে নিট ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ৩৭টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বিপরীতে সম্পূরক মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবি ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। তারমধ্যে দায়যুক্ত ব্যয় ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ১৪ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। তিনি মঞ্জুরি দাবিগুলো যেন পাস করে দেয় স্পিকারের প্রতি আহবান জানান, ‘যেটা খরচ হয়ে গেছে সেটার কিছুই করার নেই। সেটা যেন পাস করে দেন। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here