নিজস্ব প্রতিবেদক : বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ মাস বয়সী নিশা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছে শিশুটির স্বজনরা। পরিবারের দাবি হাসপাতালের অবহেলার কারণে শিশুটি মারা গেছে।
বুধবার (২৮ অগাস্ট) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। নিশা উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের সাদারপাড়ার জোবায়েদ আলীর মেয়ে।
শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে চিকিৎসায় অবহেলার প্রতিবাদে বিকেল থেকে সন্ধ্যায় সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত হাসপাতালে শিশুটির আত্মীয় স্বজনরা এ বিক্ষোভ করেছেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
শিশুটির মা নাজমা আকতার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভালো ছিলো। সে হাসছিল খেলছিল। বিকেল ৫টার দিকে ইনজেকশন দেওয়ার পর মেয়ের খিচুনি শুরু হয়। নার্সদের বারবার ডেকেও সাড়া পায়নি। এক পর্যায়ে মেয়ে আমার নিথর হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালে হাসপাতালের বর্হি বিভাগে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেয়েকে দেখে ভালো আছে বলেছিলো, অথচ বিকেলে ইনজেকশন দেওয়ার পর মেয়েটা আমার নিথর হয়ে গেলো।’
গত রবিবার (২৫ অগাস্ট) নিশাকে শ্বাসকষ্টের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিলো বলে জানান স্বজনরা। মেয়ে প্রায় ভালো হয়ে উঠেছিলো, তবে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সে মারা গেছে বলে অভিযোগ তাদের।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজেদা আকতার বলেন, ‘গত তিনদিন আগে নিউমনিয়ায় আক্রান্ত নিশাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার অবস্থা তেমন একটা সংকটাপন্ন না হওয়ায় জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়নি।’
সকালে হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নতুন করে কোনো ঔষধ দেননি ব্যবস্থাপত্রে। ফলে হাসপাতালের দেওয়া একই ঔষধ তিনদিন ধরে চলছে। যেহেতু এন্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে, তাই তার কোর্স অনুযায়ী বিকেলে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।’
হাসপাতালে আবাসিকে ভর্তি হওয়া অন্যান্য রোগীরা জানান, ডাক্তার একবারের জন্য দেখতে আসেনি। নার্সদের ডাকলেও সাড়া পাওয়া যায় না। এ অবস্থার মধ্যেই চলছে চিকিৎসা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তাঁর দায়িত্বে ইর্মাজেন্সী মেডিক্যাল অফিসার (ইএমও) রয়েছে। জরুরী বিভাগে চিকিৎসা ও আবাসিককে ভর্তিরত রোগীদের সকাল থেকে এক নাগাড়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজেদা আকতার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আড়াই মাসের একটা বাচ্চা নিউমনিয়ায় আক্রান্ত। তাকে নেবুলাইজ করার সময় মারা গেছে বলে জানতে পেরেছি। শিশুটির অভিভাবকদের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে।’
হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের পদটি শূণ্য রয়েছে। এর দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তিনিও প্রশিক্ষণে। এ অবস্থায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
বোয়ালখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন ফারুকী জানান, ‘উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’