প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর ২০২০
-মোহাম্মদ আলী
মোহাম্মদ হোসেন লেদু বোয়ালখালীর ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আকুবদন্ডি ক্রীড়া সমিতি একাদশের সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়ার হিসেবে ষাটের দশকে মাঝামাঝিতে খেলার মাঠে তার আবির্ভাব। আকুবদন্ডি ক্রীড়া সমিতি ও কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেই ছিল তার ধ্যান বস্তু। কদাচিৎ তিনি এই মাঠে অনুপস্থিত থাকতেন। এই মাঠে এক সময়ে অশ্বিনী চন্দ গোল্ডশীল্ড টুর্ণামেন্টের খেলা বেশ জম-জমাট ছিল। শহরের বহু নামী-দামী ফুটবল ঠীম এ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করত। ক্রিকেট খেলা গ্রামাঞ্চলে শুরুই হয়নি। তাই ফুটবলই ছিল গ্রামের মানুষের প্রিয় খেলা।
উল্লেখ্য যে, এ গোল্ডশীল্ডে দু’একবার ব্যতিক্রম ছাড়া বেশীর ভাগই ফাইনালে যেতো আকুবদন্ডি ক্রীড়া সমিতি ও পূর্ব গোমদন্ডি পল্লী উন্নয়ন ক্লাব (অধুনালুপ্ত)। এই ক্লাবের অবস্থান ছিল অলী বেকারী সংলগ্ন একটি মাটির গুদাম ঘরে। মূলতঃ মুফ্তি পাড়া ও দত্ত পাড়ার ক্রীড়ামোদি মানুষেরাই এই ক্লাবের চালিকা শক্তি ছিল।
কথিত আছে মুফ্তি পাড়ার জনৈক ক্রীড়ামোদী আবদুল সোবহান তাঁর হাল-চাষের গরু বিক্রি করে খেলার টাকা জোগাড় করেছিলেন। এই খেলা ছিল দুই গ্রামের মানুষের মর্যাদার লড়াই। তাই তাঁরা যাতে নিজ দলে শহরের নামী-দামী টিমের খেলোয়ারদের যুক্ত করা যায় তার জন্য সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা করতো।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো এই ক্লাবের তিনজন খেলোয়ারই ছিল একই পরিবারের। দত্ত পাড়ার প্রয়াত অনিল চৌধুরী, মিলন চৌধুরী ও অজয় চৌধুরী। দুই ভাই অনিল ও অজয় রক্ষণভাগে এবং মিলন গোলকীপারের দায়িত্ব পালন করতেন দক্ষতার সাথে। তিন ভাই’ই রেলওয়ে একাদশে খেলতেন। আর আকুবদন্ডী ক্রীড়া সমিতি একাদশের উল্লেখযোগ্য খেলোয়ার ছিলেন মাঝমাটে পরিমল রায়, এস এম আবু নাসের , এস এম হাসান, আর রক্ষণ ভাগে খেলতেন লেদু , মনির, মুন্সী, খোরশেদ, এস এম ইউসুফ, এস এম ফারুক প্রমুখ।
স্বাধীনতাত্তোরকালে লেদুর নেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের খেলোয়ারদের নিয়ে পুণর্গঠিত হয়। আকুবদন্ডী ক্রীড়া সমিতির ফুটবল দল ‘এ’দলে উল্লেখযোগ্য খেলোয়ার ছিলেন চন্দন, মাবুদ, কবির, মুসলিম, পার্থ, কায়সার, আবু প্রমুখ। এই দলটিকে নিয়ে লেদু চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে ‘বি’ ডিভিশনের খেলায় অংশগ্রহণ করে এবং রাঙ্গুনিয়ার শীলক মাঠে গোল্ডশীল্ড খেলায় অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়।
লেদুর জন্ম ১৯৩৯ সালে আকুবদন্ডী গ্রামে। পিতা-আবদুল হক। তিনি বন্দরে চাকরী করতেন। সে সুবাধে লেদু চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরী পান। তবে চট্টগ্রাম বন্দর টীমের খেলোয়ার হিসেবে ‘এ’ ডিভিশনে খেলার সুযোগ হওয়ায় তিনি সুপারভাইজার হিসেবে পদোন্নতি পান। বন্দরের খেলোয়ার হিসেবে খ্যাতি লাভ করায় তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। গ্রামের অনেক ছেলেকেই তিনি খেলোয়ার হিসেবে বন্দরে চাকরী দেন।
মোহাম্মদ হোসেন লেদু চাকরী থেকে অবসর নিলেও ফুটবল থেকে তিনি কখনো অবসর নেননি। আমৃত্যু তিনি ক্রীড়া সমিতির কোচ হিসেবে নতুন দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে ১৭ অক্টোবর দীর্ঘ এক বছর দুরারোগ্যে ক্যান্সার রোগে ভোগার পর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী ১ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান । তিনি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বোয়ালখালী ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, আকুবদন্ডী ক্রীড়া সমিতির উপদেষ্টা ছিলেন।
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া লেদুর বেশী ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পাড় না হতেই তাঁকে জীবিকার টানে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়। লেদুর জীবন থেকে আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই জীবনের সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি নয়। তাই ছেলে-মেয়েদেরকে শুধু মাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে ক্রীড়া সংস্কৃতি সব কিছুইতেই সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ আপনার ছেলে-মেয়েরা সাকিব, সালাউদ্দিন বা সালাম হবে না কে জানে! লেদুর কৃতিকর্ম আজীবন ক্রীড়ামোদিদের মনে গেঁথে থাকুক সে প্রত্যাশা রইল।