নিজস্ব প্রতিবেদক : বোয়ালখালী উপজেলার সামগ্রিক উন্নয়নে বড় বাধা জরাজীর্ণ একমুখী কালুরঘাট সেতু। উন্নয়নের সূর্য অস্তমিত হয়ে আছে এই একটি সেতুর কারণে। নতুন সড়কসহ রেল সেতু নির্মাণ না হওয়া অবধি বোয়ালখালী উপ-শহরে পরিণত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বোয়ালখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল।
প্রথম বোয়ালখালী পৌর নির্বাচনে এলাকাবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত এ কাউন্সিলর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই পারে এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের সূর্যকে উদিত করতে। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে এ প্রাণের দাবি নিয়ে তাকিয়ে আছেন চট্টগ্রামবাসী। আমরা বিশ্বাস করি তিনি এ ব্যাপারে অচিরেই সিদ্ধান্ত দেবেন।
বিগত ৫বছর আগে ভঙ্গুর রাস্তাঘাট আর খালের ভাঙনে বিপর্যস্ত পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডকে পৌর এলাকায় রূপান্তর করতে নবীন জনপ্রতিনিধি শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েলের কাঁধে ভার তুলে দিয়েছিলেন এলাকাবাসী।
সৃজনশীল মনোভাবের কারণেই এ ওয়ার্ডকে পৌর সুযোগ সুবিধার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এ এলাকায় যেসব সমস্যা রয়ে গেছে তা সমাধানে বিপুল পরিমাণের বাজেটের দরকার রয়েছে। যা পৌরসভার স্বল্প বাজেটে সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল একান্ত আলাপে আলোকিত বোয়ালখালীকে এসব কথা জানান। দীর্ঘ এ আলাপ আলোচনায় উঠে আসে ৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা ও নানান পরিকল্পনার কথা।
আলোকিত বোয়ালখালী : পৌরসভার ৩নং ওয়ার্র্ডকে আধুনিক এলাকায় রূপান্তর করতে আপনি কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন বা এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কি ছিলো ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : নবগঠিত পৌরসভার এ ওয়ার্ডকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে যে সব কাজের শুরুটা দরকার ছিলো, তা শুরু হয়ে গেছে। তবে পরিকল্পনা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা থাকলেও সময় আর সাধ্যে কুলোয়নি। অপ্রতুল বাজেট এর জন্য দায়ী। যেখানে কোটি টাকার দরকার সেখানে মাত্র লাখ টাকায় কাজ শুরু করতে হয়েছে যা রীতিমতো দু:সাহসের। তাও সম্ভব হতো না যদি এলাকাবাসী এতে সহায়তা না করতেন।
আলোকিত বোয়ালখালী : এ ওর্য়াডের সড়ক যোগাযোগে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে আপনার পদক্ষেপ কি ছিলো ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল: ৩নং ওর্য়াডের মূলত প্রধান সড়ক হলো শাহ্ পেতন আউলিয়া (রহ.) মাজার গেইট থেকে ঐতিহ্যবাহী মুরাদ মুন্সির হাট পর্যন্ত সড়কটি ও পূর্ব কালুরঘাট থেকে গোমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশন সড়কটি। পৌরসভার পক্ষ থেকে এ সড়কগুলোর বেশিরভাগ অংশের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া পৌর সদরের সিও অফিস থেকে কধুরখীল খোকার দোকান পর্যন্ত ডিসি সড়কের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সম্প্রতি তা দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।
এ সড়কগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার করা গেলে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানজট থাকবে না। পাশাপাশি যাতায়াতে লাগবে কম সময়।
আলোকিত বোয়ালখালী : উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং দুর্নীতি দূর করতে আপনার ভূমিকা কেমন ছিলো ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : ৩নং ওয়ার্ডের প্রতিটি কাজে একটাকাও দুর্নীতি করতে দেইনি কাউকে। প্রতিটি কাজ বুঝে নিয়েছি কড়াগণ্ডায়। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিলে এ এলাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন বলতে কিছুই থাকতো না। এতে নাগরিক মতামতকে দিয়েছি অধিক গুরুত্ব।
আলোকিত বোয়ালখালী : এ পৌর এলাকা নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : আমার এ নির্বাচনী এলাকায় তিন সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাস। সম্প্রীতি সৌর্হাদ্য মেলবন্ধন রয়েছে তাদের মধ্যে। তবে তারা খুবই সরল ও নিরীহ। ছন্দারিয়া খাল পাড়ের মানুষগুলো বাঁচে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে। ভাঙনে বিপর্যস্ত বসতভিটা। এ ক্ষেত্রে অসহায় বোধ হয়, অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবতার দৃশ্যপট ভিন্ন। খালের ভাঙনরোধে ব্যাপক সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পৌরসভার একক পদক্ষেপে সম্ভব নয়। খালের ভাঙনরোধ, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আলোক সজ্জা ও পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত আবাসিক এলাকায় পরিণত করায় আমার উদ্দেশ্য।
আলোকিত বোয়ালখালী : নাগরিকের মানবিক উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : পৌরসভা গঠনের পর এ ওয়ার্ডের ৮৩জন বয়স্ক মানুষকে সরকারি নিয়মানুযায়ী নিয়মিত ভাতা সুবিধায় আনা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ৯জন বিধবা, ১৫জন প্রতিবন্ধি ও ৩৬জনকে মাতৃত্ব ভাতা দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা আরো বাড়বে। নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ে সজাগ রয়েছি সর্বদা।
স্বপ্ন রয়েছে সংস্কৃতি ও বিনোদন চর্চায় নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি সামাজিক ও ক্রীড়া ক্লাব গঠন ও এলাকাভিত্তিক পাঠাগার তৈরির। এসব পাঠাগারকে ঘিরে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হবে।
এলাকাবাসীর সমন্বয়ে একটি অনুদান তহবিল প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন বহুদিনের। যা করা গেলে এর মাধ্যমে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায় এবং চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া যাবে।
আলোকিত বোয়ালখালী : আপনার এলাকায় খালের ভাঙন ও চাষের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, ফলে আবাদী জমির চাষাবাদ ব্যাহত হয়, এর থেকে পরিত্রাণে কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : ছন্দারিয়া খালের মুখে একটি স্লুইচ গেইট দেওয়া গেলেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া সড়কের জলাবদ্ধতা যাতে না হয় তার জন্য ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
আলোকিত বোয়ালখালী : স্বাস্থ্যসম্মত পৌরসভা গঠনে কি কি কাজ নেওয়া হয়েছে ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : উন্নত ও সুন্দর জীবনের অপরিহার্য অংশ হলো নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। মশার উৎপাত বন্ধে মশক নিধন কর্মসূচি চলেছে। ঐহিত্যবাহী মুরাদ মুন্সির হাটে উন্নতমানের শেড ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে পাশাপাশি হাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত বিষমুক্ত পণ্য ও তরতাজা কাঁচা পণ্য এ হাটে বিক্রি হয়। বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে এসব পণ্য নাগরিকরা যাতে কিনতে পারেন সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। তবে ঐতিহ্যবাহী এ হাটের বাইরে অস্থায়ী বাজার বসার কারণে ক্রেতা সমাগম কমে এসেছে অনেকাংশে। ফলে পৌরসভা ন্যায্য ইজারা পাচ্ছে না। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এ এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন সুলভে।
আলোকিত বোয়ালখালী : পৌর কাউন্সিলর হিসেবে নাগরিকদের যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত মনে করেন ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : প্রথম পৌর নির্বাচনে সর্বকনিষ্ট প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এলাকাবাসী ভোটের মাধ্যমে তাদের বিশাল দায়িত্ব কাঁধে তুলে দিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিটি পরিবারের দরজায় দরজায় গিয়েছি। তাদের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। তাদের সু-পরামর্শকে মাথায় রেখে কাজ করেছি। বলা চলে আমি এখনো শিখছি। বিগত ৫ বছর সেবা মূলক কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর সহযোগিতা ছিলো এবং পেয়েছি সব সময়। নয়তো এতো অপ্রতুলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। সামনের দিনগুলোতে আধুনিক পৌর এলাকা বিনির্মাণে আমি এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই।
আলোকিত বোয়ালখালী : সুশাসনে নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : এলাকাবাসীকে সবার আগে সচেতন হতে হবে। সামাজিক অপরাধ, বৈষম্য দূরীকরণে এর বিকল্প নেই। তবেই সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। পৌরসভা একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। নিজেদের অধিকার সর্ম্পকে জানা থাকলে তবেই তা আদায়ে সোচ্চার হওয়া যায়। ৩নং ওয়ার্ডে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসীকে সচেতন করতে সব সময় উদ্বুদ্ধ করেছি।
আলোকিত বোয়ালখালী : কি কারণে কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : সত্যি কথা বলতে গেলে, এলাকার মানুষগুলোর কথা চিন্তা করেই নির্বাচনে অংশ নেয়া। যাতে অযোগ্য ব্যক্তি যেন জনপ্রতিনিধি হয়ে উল্টো এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে না যায়।
আলোকিত বোয়ালখালী : আপনার এলাকায় কি কি উন্নয়ন কাজ বিগত ৫ বছরে করতে পেরেছেন বলে মনে করেন ?
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : বিগত ৫বছর এলাকাবাসীর সেবায় উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছি। যখন যেখানে তারা ডেকেছেন ছুটে গেছি শতকাজ ফেলে। আগামী নির্বাচনে যদি আবারো নির্বাচিত করেন, অসম্পূর্ণ যে কাজ রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে শেষ করবো।
আলোকিত বোয়ালখালী : ধন্যবাদ আপনাকে আলোকিত বোয়ালখালীকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
শেখ মো. আরিফ উদ্দিন জুয়েল : আলোকিত বোয়ালখালী পরিবারকে ধন্যবাদ। একই সাথে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আবো/দেবাশীষ/পিএস/রাজু