ওয়াসিম আহমেদ : নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে পাঠদানের অনুমতির ক্ষেত্রে ১৩টি শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা আছে। এরমধ্যে প্রথমটিই হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব। পৌর ও শিল্প এলাকায় এক কিলোমিটার ও মফস্বল এলাকায় তিন কিলোমিটার দূরত্বে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শর্ত পূরণের বিধান রেখেছে সরকার। কিন্তু মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনে বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা নিরুবালা চৌধুরী একাডেমিকে পাঠদানের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের ৩০ ফুট ব্যবধানেই জ্যৈষ্ঠপুরা রমনীমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থান। অথচ শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদনে মফস্বলের এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দূরত্ব দেখানো হয়েছে এক কিলোমিটার।

২০১৮ সালে অক্টোবরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. আবু তাহের এ চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন দিয়েছেন। একই প্রতিবেদনে জনসংখ্যা ও জনসংখ্যা অনুপাতে প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা সম্পর্কেও মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। ২০০৪ সালে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বোয়ালখালীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা নাই জানানো হলেও প্রাপ্যতা রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে প্রতিবেদনে শিক্ষার্থী সংখ্যা, নিজস্ব জমির পরিমাণ, শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ও লাইব্রেরির শর্ত পূরণ না থাকায় সেগুলো পূরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর নিরুবালা একাডেমির পাঠদানে অনুমতি প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম। গত বছরের ২৩ মে জ্যৈষ্ঠপুরা নিরুবালা চৌধুরী একাডেমিকে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. আবু তাহেরের মুঠোফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে বর্তমানে শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই স্কুলের পাঠদানের অনুমতি দেয়া নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। এগুলো বলতে গেলে অনেক কথা।’
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, জ্যৈষ্ঠপুরা রমনীমোহন উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭১ সালে। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যাও আট শতাধিক। ২০১০ সালে জ্যৈষ্ঠপুরা নিরুবালা চৌধুরী কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে জ্যৈষ্ঠপুরা নিরুবালা চৌধুরী একাডেমিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করেন। এখন বিদ্যালয়ে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। শুধুমাত্র রমনীমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের উপর নাখোশ হয়ে অদুল চৌধুরী নামে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
জৈষ্ঠ্যপুরা রমনীমোহন উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন চৌধুরী বলেন, পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয় করার নির্দিষ্ট শর্ত আছে। ৩০ ফুটের মধ্যে একটি বিদ্যালয় থাকলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আরো একটি বিদ্যালয়কে পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। শিক্ষবোর্ডের দুর্নীতিবাজ এক কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন না করে এমন তথ্য দিয়েছেন। পাঠদানের অনুমতি পেয়ে এখন নানা প্রলোভনে অভিভাবকদের প্রভাবিত করে আমা।দের স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা এজন্য আদালতের ধারস্থ হয়েছি।
জ্যৈষ্ঠপুরা নিরুবালা একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রবীর চৌধুরী বলেন, দুটি বিদ্যালয়ের দূরত্ব কাছাকাছি। শিক্ষার্থী ৩৫০ জনের মতো আছে। পাঠদান অনুমতি দিতে প্রতিবেদন বোর্ড থেকে দিয়েছে। সমস্যা থাকলে ওরাই জানবে। নওফেল ভাই (শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল), হাছান ভাইও (তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ) বিষয়টি জানেন। এটা সেবার জন্য করা হয়েছে ব্যবসার জন্য নয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here