আলোকিত ডেস্ক : বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা ইউনিয়নে লোকমান আজাদ নামের তরুণ উদ্যোক্তা পাহাড়ে ৯০ শতক জায়গায় গড়ে তুলেছে মিষ্টি স্বাদের মাল্টা, চায়না কমলা, থাই আম, ড্রাগন ফল, খেজুর সহ নানা রকম ফলজ গাছের বাগান। তার এই উদ্যোগ দেখে এলাকার আরো কিছু যুবক মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছে।
এই মাল্টা খুব মিষ্টি এবং রসালো। ফলে স্থানী ফল বিক্রেতাদের চাহিদা বেড়েছে পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায়ও বাজারজাত করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। লোকমান আজাদ এই বাগানে পরিক্ষামূলক আরো বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপন করেছে।
যদি সেই গাছগুলোর ফল ও স্বাদ ভালো হয় তাহলে তিনি বড় আকারে সেই গাছগুলো রোপন করবে। তখন এলাকার তরুণ যুবকদের উৎসাহিত করে এই ধরণের বাগান করার পরার্মশ দিবেন। বর্তমানে কিছু যুবক ও তরুণরা তার থেকে পরার্মশ নিচ্ছেন।
লোকমান আজাদ বলেন, তিনি ছোট বেলা থেকে গাছের প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। স্কুল জীবনে বাড়ীর উঠানে দেশীয় আম, জাম, পেঁপে, বড়ই সহ নানান গাছ রোপন করতো এবং স্বপ্ন ছিল বিদেশী ফলগুলোর চাষ করার। সেই হিসেবে গাছের প্রতি আমার দূর্বলতা রয়েছে। পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে মুরগীর খামারের মধ্য দিয়ে আমার পথ চলা। তার জৈষ্ঠ্যপুরা পাহাড়ে ৯০ শতক জায়গা ক্রয় করে মুরগী,গরুর খামার, লেবু ও অন্যান্য গাছের বাগান করি।
পরে মাল্টা চাষের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিলে তিনি আমাকে বলেন যেহেতু মাল্টা হলো লেবু জাতীয় ফল এবং এই এলাকাটি লেবু বাগানের জন্য বিখ্যাত সেহেতু মাল্টা এখানে চাষ করলে ফলন ভালো হবে। সেই হিসেবে আমি ২০১৭ সালের জুনে মাল্টা চাষ শুরু করি। আমি প্রথমে চারশত মাল্টা গাছ রোপন করে সুফল পেয়ে আরো একশত গাছ রোপন করলে মোট পাঁচশত মাল্টা গাছ হয়। এই গাছ গুলো আমি হাটহাজারী ফতেয়াবাদ নার্সারী থেকে প্রতিটি মাল্টার কলম গাছ ১২০ টাকা করে ক্রয় করি।
বর্তমানে এই গাছগুলোর বয়স তিন বছর। ২য় বছর থেকে ফল হলেও পুরোপুরি ৩য় বছর বাজারজাত করার যায়। একটি গাছে ৫শত মাল্টা ধরার কথা থাকলেও আমি আমার একটা গাছে দেড় থেকে ২শত মাল্টা পেয়েছি।
তিনি আরো জানান, ১ম বছরে ৫% ফল, ২য় বছরে ৪০% ফল ৩য় বছর অথাৎ চলতি বছরে ৫০% ফল আমি পেয়েছি, আশাকরি আগামী বছরে আমি ১০০% ফল পাবো। সামনে আমি আরো বড় আকারে এই চাষগুলো করার জন্য সরকারী ভাবে সহযোগীতা আশা করি। তাহলে আমি এই ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করতে পারবো। পাশাপাশি বেকারত্ব দুর করতে হলে বেকার যুবকদের সরকারী খাস জায়গাগুলো লিজ দিয়ে এই রকম ফলজ বাগানের দিকে আগ্রহী করার জন্য দাবী জানায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, গত ২/৩ বছর ধরে বোয়ালখালীতে বারি মাল্টার চাষ হচ্ছে। বেশ কয়েকজন চাষি মাল্টার চাষ করছেন। এর মধ্যে আমুচিয়া এলাকার লোকমান আজাদ ইতোমধ্যে মাল্টা চাষ করে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে যথাসাধ্য চাষিদের সহযোগিতার দেয়ার চেষ্টা করছি। যারা মাল্টা চাষে আগ্রহী তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চাষিদের মাঝে মাল্টার চারা বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত সিজনে লোকমান আজাদ ১৮শত কেজি মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৬শত কেজি মাল্টা উৎপাদন করেছে। চলতি বছর তার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তাই ভবিষ্যতে মাল্টা চাষিদের ফল বাজারজাত করতে পরিবহন ব্যবস্থা (পিকআপ ভ্যান) সহযোগিতা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
তাছাড়া মাল্টার ন্যায্য দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে বাজার তৈরীতে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করবে।-খবর পাঠক ডট নিউজ