নিজস্ব প্রতিবেদক : বোয়ালখালীতে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহের নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে।

গত ২৭ মে কেজি প্রতি ২৬ টাকা দরে এ ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. একরামুল ছিদ্দিক।

৫৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করার কথা ছিলো। তা গত ১৬ জুন রবিবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক শফিকুল আলম ভুঁইয়া।

তিনি বলেন বোয়ালখালীতে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫৬ মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে কেজি ২৬ টাকা দরে এ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

তবে প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ খাদ্য বিভাগের ঘোষিত সময়ের আগেই ধান সংগ্রহ হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের ধান নেওয়া হয়নি। তাই অনেকে ধান বিক্রি করতে এসে ফেরত গেছেন।

উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে পৌরসভার ৭ জন কৃষকের কাছ থেকে ১৩ হাজার ২শত কেজি, পোপাদিয়া ইউনিয়নের ২ জনের কাছ থেকে ৬ হাজার, সারোয়াতলী ইউনিয়নের ৩ জন থেকে ৯ হাজার, আমুচিয়া ইউনিয়নের ৬ জন থেকে ১৩ হাজার ৫শত ৬০ কেজি, আহলা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের ৪ জন থেকে ১০ হাজার ৩শত ৬০ কেজি, কধুরখীল ইউনিয়নের ১ জন থেকে ১ হাজার ও শাকপুরা ইউনিয়নের ১ জন কৃষকের কাছ থেকে ৮শত ৮০ কেজি ধান ক্রয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হয়েছে।

তবে শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কোন কৃষকের কাছ থেকে ধান নেওয়া হয়নি বলে জানান জ্যৈষ্টপুরা এলাকার প্রান্তিক কৃষক নিমাই দে, মো. ইছাক ও টিটু বড়ুয়া।

কানুনগোপাড়া এলাকার কৃষক তাহের চৌধুরী জানান গত ১১ জুন তিনি খাদ্য গুদামে ধানের নমুনা দেখিয়ে যান। এ সময় সোনালী ব্যাংকে হিসাব খোলার পরামর্শ দিয়ে যোগাযোগ করার জন্য বলেন খাদ্য পরিদর্শক। পরদিন সকল প্রক্রিয়া শেষে গুদামে গেলে খাদ্য পরিদর্শক তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে জানিয়ে ফেরত দেন। তাহের তিন টন ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করে উৎপাদিত ধান নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামের কৃষক ও স্কীম ম্যানেজার নিমাই দে বলেন ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে কোনোরূপ প্রচার প্রচারণা ছিলনা। খোঁজ নিয়ে ধান বিক্রি করতে গিয়েছি, তখন খাদ্য অফিস থেকে জানানো হয় ধান আর নেবে না। অথচ বেশিরভাগ বোরো চাষ হয় এ এলাকায়। প্রকৃত কৃষকও রয়েছে বেশি এলাকায়। এদের কেউ ধান বিক্রি করতে পারেনি।

ধান চাল ক্রয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রচার-প্রচারণা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্ত মাহবুব রাছুল জানান গত ২৭ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে সারাদেশে যেভাবে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সে অনুযায়ী বোয়ালখালীতে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলে।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন সরকার প্রতিবছর কৃষি খাতে বীজ, সার, বিদ্যুতে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা হিসেবে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। ব্যয়কৃত অর্থের সিংহভাগই চলে যায় প্রভাবশালী ও রাজনীতির সংঙ্গে জড়িত কৃষকদের কাছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা সরকারের দেওয়া এসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বাঁচাতে সরকার যে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সফল হবেনা। বরং ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে প্রান্তিক কৃষকরা।

এবি/ দেবাশীষ বড়ুয়া

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here