ঘণ্টাব্যাপী বোয়ালখালী উপজেলার একটি এলাকায় অবরুদ্ধ করে প্রচার প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ কর্মী সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে বোয়ালখালী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নবাব আলী সওদাগর বাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বোয়ালখালী পৌরসভার বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র হাজী আবুল কালাম আবু।

হাজী আবুল কালাম আবু বলেন, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমদ খানসহ নবাব আলী সওদাগর বাড়ি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন  লাটিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আমরা মানুষের বাড়ি ঘরে আশ্রয় নিই। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকার পর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ওই এলাকা ত্যাগ করি। নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়া বিএনপির কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষদের মারধর করে আহত করেছে তারা।

আবু সুফিয়ান জানান, ‘পূর্বনির্ধারিত সময়ে পশ্চিম গোমদণ্ডীর মনসুর আউলিয়ার মাজার জেয়ারত শেষে আমরা যখন গণসংযোগ শুরু করি, তখন সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা আমাদের মিছিলে পেছন থেকে হামলা করে। স্থানীয় জনগণ এবং আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়।’

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল তালুকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোনাফ ও পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি কাজী রাসেলের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী এই হামলা অংশ নিয়েছে।’

মোস্তাক খান দাবি করেন, এই হামলায় উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রবিউল ইসলাম ইকবাল, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস, যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম, মনু, ছাত্রদল নেতা সিদ্দিক আজাদ রিয়াদসহ প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।

তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আবু সুফিয়ান আজ যে এলাকায় গণসংযোগ করেছেন সেটা মোরশেদ খানের প্রভাবিত এলাকা। মোরশেদ খানের অনুসারীদের সাথে তাদের ঝামেলা হয়েছে। আমরা হামলা করিনি। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে আমাদের একটা নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন ছিল। আমরা তাতে ব্যস্ত ছিলাম।’

কোন্দলের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের মাঝে কোন কোন্দল নেই। কোন্দলে বিপর্যস্ত ওরা। গতকালও তাদের রক্তারক্তি হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা যখন সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ করেছে তখন তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।’

স্থানীয়রা জানায়, সকালে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ঘরে ঘরে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করতে আসলে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থকরা তাদের ঘিরে ফেলে এবং অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রচারণা না চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করার জন্য বলেন। এ  সময় ধানের শীষের কয়েকজন কর্মী সমর্থককে চড় থাপ্পরও মারেন। পরবর্তীতে তারা প্রচারণা না চালিয়ে চলে যান। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিএনপির প্রার্থীসহ কর্মী সমর্থকদের অবরুদ্ধ করে রাখার খবরে পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বোয়ালখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ফারুকী জানান, এই ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দুইটি এলাকায় দুই প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের নিয়মিত টহল জোরদার রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন বলেন, বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পৌর প্যানেল মেয়র এসএম মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনী শান্ত ও সুন্দর পরিবেশকে বিনষ্ট করার লক্ষ্যে বিএনপি গুজব সৃষ্টি করছে। জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে এই ধরণের আজগুবি গল্পকাহিনী প্রচার করছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here