পূজন সেন :

বোয়ালখালীতে এনজিও সংস্থার ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এই মানুষগুলোর বেশিরভাগই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। এছাড়া রয়েছেন পোশাক কারখানা, শিল্প কারখানার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

বেশ কয়েকজন ঋণ গ্রহীতা জানান, গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে মে মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ছিলো। আয় রোজগারের পথ ছিলো বন্ধ। এরই মাঝে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ সহায়তা এবং নিজেদের হাতেপাতে থাকা অর্থ দিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।

ঋণ গ্রহীতা পোশাক শ্রমিক আরতি, ফেরদৌসী বেগম বলেন, গত সপ্তাহ থেকে কিস্তি আদায়ের লোকজন বাড়িতে এসে বসে থাকছে, কিস্তি দিতে না পারলে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। তাদের বলেছি হাতে টাকা পয়সা একদম নেই জুন মাসের বেতন পেলে দেবো। তারা তা মানছেন না।

একই অভিযোগ করে সুমন দে বলেন, এই দুঃসময়ে তারা একপ্রকার চাপ সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে মানুষের বাড়ি বাড়ি পাড়ার মহিলাদের একত্রিত করে কিস্তি দাবী করছেন। অনেকে ধান বিক্রি করতে পারেনি, টাকা যোগাড় না হওয়া পর্যন্ত কিস্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিউটি পার্লারের মালিক প্রিয়া চৌধুরী বলেন, গত দুই মাস পার্লার বন্ধ রাখতে হয়েছে। এখন খোলার চেষ্টা করছি। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়ে গেছে। জমানো টাকা শেষ। পার্লার খুলেও লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় কাজ শিখে এ ব্যবসায় এসেছিলাম। বিয়েসহ সামাজিক আনন্দ আয়োজনে যা কাজ ছিলো তা বন্ধ হয়ে গেছে করোনার প্রাদুর্ভাবে। কাজ না থাকলে খাবো কি সেই চিন্তায় রয়েছি। এর মধ্যে কিস্তি ওয়ালার চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানি না।

এপ্রিল মাসে এনজিও সংস্থাগুলো কিস্তি আদায় বন্ধ রাখলেও মে মাস থেকে মুঠো ফোনে চাপ দিতে থাকে। চলতি জুন মাসের শুরু থেকে পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের লোকজন ঘুরছেন।

তবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি সুনির্দিষ্ট নিদের্শনায় বলা হয়েছে ‘ জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত কিস্তি আদায়ে চাপ সৃষ্টি বা বাধ্য করা যাবে না। উল্লেখিত সময়ে কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিস্তি প্রদান করেন তা গ্রহণ করা যাবে।’ এছাড়া কিস্তি না দিলে তা বকেয়া অথবা খেলাপী হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

নিদের্শনা থাকা স্বত্বেও এনজিওর লোকজন পুলিশে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বোয়ালখালী উপজেলা প্রশাসন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফেসবুক আইডিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির নিদের্শনা তুলে ধরেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, মালিক পক্ষের চাপে পড়ে চাকুরী বাঁচাতে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে কিস্তি আদায়ে গ্রামে গ্রামে যেতে হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন বলেন, জুন মাস পর্যন্ত কিস্তি আদায়ে ঋণ গ্রহীতাদের বাধ্য করা যাবে না। স্বেচ্ছায় কেউ ঋণ পরিশোধে কিস্তি প্রদান করলে নিতে পারবে এনজিও সংস্থাগুলো। না দিলেও তা বকেয়া বা খেলাপী হিসেবে গণ্য করতে পারবে না। এ সংক্রান্ত নিদের্শনা সংশ্লিষ্ট দপ্তর দিয়েছে। সংস্থাগুলোকে সরকারি নির্দেশনা মানার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here