বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই কমিটি আগামী ১৫ নভেম্বর উপজেলার একই স্থানে-একই সময়ে পাল্টাপাল্টি সম্মেলন আহবান করেছে। দীর্ঘ ২২ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই সম্মেলনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সম্মেলনের দুই পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইতোমধ্যে উভয় পক্ষ সম্মেলনের তারিখ-সময় এবং স্থানসহ নির্ধারণ করে পোস্টার-ব্যানার ছাপিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ-এর বক্তব্য জানার জন্য ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ঢাকায় বৈঠকে মোছলেম ভাই (মোছলেম উদ্দিন আহমদ) বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উভয় পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
এদিকে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সম্মেলনকে সামনে রেখে দুইপক্ষের পোস্টার-ব্যানার এবং পত্র-পত্রিকায় পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের আর্শিবাদপুষ্ট উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এস এম সেলিমকে আর যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে রিদোয়ানুল হক টিপু ও শাহাদাত হোসেনকে। এই কমিটির সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
অপরদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আলহাজ এস.এম. আবুল কালাম গ্রুপের উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে আহবায়ক করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক এস.এন. হাসান উদ্দিন ও আবদুল ওয়াদুদ। এই কমিটির সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আলহাজ্ব এস.এম. আবুল কালাম। প্রধান অতিথি থাকবেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও বোয়ালখালী, বাঁশখালী, কর্ণফুলী, আনোয়ারা উপজেলার সম্মেলন নিয়ে গত ৭ নভেম্বর ঢাকায় দক্ষিণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হলে-জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান কেন্দ্রীয় নেতাদের জানান, বোয়ালখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও দুটি। এসময় জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ কেন্দ্রীয় নেতাদের জানান, ‘এটা আমার উপজেলা। আমি উভয়পক্ষের সাথে আলাপ করে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করবো।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকের পর ঐদিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের আর্শিবাদপুষ্ট উপজেলা কমিটি এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলনের সময়-স্থান ও অতিথিসহ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পত্রিকা অফিসে পাঠনো হয়। অপর পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি সম্মেলন করা হবে বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিলেও অপর পক্ষের কারো সাথে আলাপ না করে সম্মেলনের সময়-স্থান ও অতিথি ঠিক করে সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ায় একই স্থানে একই সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপ পাল্টা সম্মেলন আহবান করেছেন বলে জানান, ঐ গ্রুপের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আহমদ হোসেন, সাধারন সম্পাদক এমএ ঈসা এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক এস.এন. হাসান উদ্দিন ও আবদুল ওয়াদুদ।
৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঢাকার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল-ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মন্ত্রণালয়ের অফিসে। ঐ বৈঠকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও মফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন জানান, আমরা জন্মের পর থেকে যাদেরকে বোয়ালখালীতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে দেখেছি-এ রকম প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জেলার সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদন এবং স্বাক্ষরবিহীন ৯৩ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপজেলায় ঘোষণা করেছেন। যেটা সম্পূর্ণভাবে সংগঠন বিরোধী ও বেআইনী। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। এই কারণে উপজেলার দীর্ঘ-আন্দোলন-সংগ্রামের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা পাল্টা কমিটি গঠন করেছেন এবং সম্মেলনেরও তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। উভয় পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এই কারণে প্রবীণ-ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। উভয় পক্ষ একই সময়ে একই স্থানে সম্মেলনের আয়োজন করায় সম্মেলনকে ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলেও জানান তিনি