পূজন সেন :

চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে প্রতিদিনই আসছে কোনো না কোনো দুঃসংবাদ। জীবনধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। তাই বলে রুদ্ধ হয়ে আসা জীবনযাত্রায় বসে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয় করার লোক নন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের আমীর হোসেনের ছেলে মো. আজিম। তিনি সরকারি চাকুরীজীবি।

গত ৩ মাস আগে উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকলিয়া মৌজার কানুনগোপাড়া-শ্রীপুর বুড়া মসজিদ সড়কের পাশে থাকা নিজের ১০ শতক জমিতে করেছেন পেঁপে বাগান। এছাড়াও বাগানে বেগুনসহ নানান শাক-সবজির পাশাপাশি রোপণ করেছেন বিভিন্ন জাতের লেবু, কলা, পেয়ারা, আম গাছ। তার সবজি বাগানে উৎপাদিত ফসল পরিবার পরিজনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝেও বিলিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

মো.আজিম জানান, গত মার্চের মাসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে সড়কের পাশে অনাবাদি পড়ে থাকা নিজের ১০ শতক জমিতে শখের বশে বাগান করার পরিকল্পনা মাথা আসে। যেই ভাবনা ওই শুরু। অথচ উপজেলা যাতায়াতের প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় পরিত্যক্ত ওই জায়গায় গাড়ীর গ্যারেজ গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অনেকেই। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বাগান গড়ে তুলেন তিনি।

তিনি বলেন, ১০ শতক জমিতে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ১শত পেঁপে চারা রোপণ করেছি। এতে প্রায় ১১হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি পেঁপে গাছে মণের ওপরে ফলন এসেছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি উপযোগী পেঁপে বিক্রি করে ২০-২৫ টাকা কেজি ধরে ৮০-৯০ হাজার টাকার মতো আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি। অন্যান্য শাক-সবজি পরিবার, পরিজন ও পাড়া প্রতিবেশীর মাঝেও বিতরণ করেছি। এতে এক ধরণের তৃপ্তি রয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আরও ব্যাপক আকারে পেঁপে বাগান গড়ার কথা জানান তিনি।

সাপ্তাহিক সরকারি বন্ধের দিন নিয়মিত বাগানে সময় দিয়ে বাগানের পরিচর্যা করেন তিনি এখন। ইতিমধ্যে কাঁচা পেঁপে কিনতে আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁপে বিক্রি করে তিনি লাভবান হবেন বলে আশাবাদী ।

একই এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত বলেন, আজিম শিক্ষিত যুবক, সরকারি চাকুরীও করেন। বাগান করার কথা দূরে থাক, এখনকার দিনের ছেলেমেয়েরা গ্রামের বড় হলেও চাকরী পেলে শহরে বাসা নিয়ে চলে যায়। তবে আজিম ব্যতিক্রম। সে বাগানে সবজি উৎপাদন করছে। আমরাও তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছি। আজিমের পেঁপে চাষ দেখে আশেপাশের অনেকেই এখন অনাবাদি পরিত্যক্ত জমিতে পেঁপে চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

আজিমের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে ছোট বড় অসংখ্য কাঁচা পেঁপে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দূর্গাপদ দেব জানান, মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিগুনসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। স্বল্প খরচে পেঁপে চাষ অধিক লাভ হওয়া যায়।

তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে সকলে আজিমের মতো এগিয়ে আসলে দেশ উপকৃত হবে। এধরণের শাক-সবজি বাগান পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here