‘বৃষ্টি আশীর্বাদ; বৃষ্টি পৃথিবীকে করে প্রসন্ন; বৃষ্টি ছাড়া, কোন জীবন বাঁচে না।’ পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী বিখ্যাত আমেরিকান সাহিত্যিক জন আপডাইক পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য বৃষ্টিকে আশীর্বাদ বলতেই পারেন। কিন্তু ক্রিকেটের জন্য বৃষ্টি যেন ঘোরতর শত্রু। ২২ গজের লড়াইয়ে বৃষ্টি কেমন শত্রু তা আরেকবার প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে ২০১৯ ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপে।
ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাকর লড়াইয়ের চার বছরের সমস্ত অপেক্ষা, উদ্দীপনা, উত্তেজনা ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। প্রতিযোগিতায় ‘পরিত্যক্ত’ শব্দটি হয়ে উঠেছে মূল প্রতিপক্ষ। শিরোপা জয়ের জন্য এশিয়া-আফ্রিকা-উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলের দশ দেশ লড়াই করতে এসেছে ক্রিকেটের তীর্থস্থান ইংল্যান্ডের ভূমিতে। কিন্তু ক্রিকেটারদের সমস্ত আগ্রহ-লড়াকু উদ্দীপনা নিস্তেজ করে দিচ্ছে বৃষ্টি। দর্শকরাও এরইমধ্যে চলমান বিশ্বকাপকে নাম দিয়েছে ‘বৃষ্টি কাপ।’
এখন পযর্ন্ত দু’ সপ্তাহের লড়াইয়ে চার ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টিতে। তারমধ্যে তিন ম্যাচে টস-ই হয়নি। ১০ জুন, টস হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ডে ২৭ রান যোগ হতেই নেমে আসে বৃষ্টির হানা।
গত তিন দিনে ম্যাচ বাতিল হয়েছে দু’টি। ১৩ জুন, ভারত-নিউজিল্যান্ড এবং ১১ জুন, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বাতিল হয় ভারী বৃষ্টির শিকারে। এর আগে, বিশ্বকাপে প্রথম বৃষ্টির রোষানলে পড়ে ৭ জুন, পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি।
অবস্থা এমন যে, লঙ্কানদের ম্যাচ মানে যেন বৃষ্টি। ৪ জুন, আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বৃষ্টির হামলায় পড়ে তারা। অবশ্য সেই ম্যাচে ফল নির্ধারিত হয় ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে। অন্যান্যরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বৃষ্টিতে একমাত্র লাভবান দল এখন পযর্ন্ত শ্রীলঙ্কা। ৪ ম্যাচে (১ জয়, ১ হার এবং ‘পরিত্যক্ত’ ২ পয়েন্ট) ৪ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে তালিকার পঞ্চম স্থানে। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ১ জয় ও ১ পরাজয়ের পাশাপাশি টাইগারদের ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে একটি।
তবে টেবিলে ৪ ম্যাচে (৩ জয় ও এক পরিত্যক্ত ম্যাচ) ৭ পয়েন্ট নিয়ে নিউজিল্যান্ড শীর্ষে থাকলেও মূলত সিংহাসনে বসেছে বিশ্বকাপের ১১তম দল বৃষ্টি। ৪ ম্যাচ জিতে তাদের পয়েন্ট ৮!
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে আগে কখনো এত ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়নি। এবারই প্রথম তিন ম্যাচে টস হয়নি। এর আগে প্রথমবারের মতো ১৯৭৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে (প্রুডেন্সিয়াল কাপ) ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে টস হয়নি। ২০১৫ বিশ্বকাপে টস হয়নি অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশ ম্যাচে। তবে টস হলেও পরে বৃষ্টির কারণে দু’টি করে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে ১৯৯২ ও ২০০৩ বিশ্বকাপে।
২০১৯ বিশ্বকাপে সামনের ম্যাচগুলোতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রকট। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, আরও একটা ম্যাচে বৃষ্টি হতে পারে। রাউন্ড রবিনের লড়াইয়ে কোন রিজার্ভ ডে রাখেনি আইসিসি। কেবল সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের জন্য আছে একদিন রিজার্ভ ডে।
অবশ্য তখনও যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরবে না তার কী বিশ্বাস? কারণ ইংল্যান্ডের আকাশ তখনও থাকবে গ্রীষ্ম ঋতুর অধীনে। যার স্থায়ীত্ব জুন থেকে আগস্ট পযর্ন্ত। যে সময় ভারী বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে যায় হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস।
বৃষ্টির জন্য সেই ম্যাচ ভেস্তে যেতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে নতুন নতুন ট্রল। বৃষ্টির জন্য বারবার ম্যাচ ভেস্তে যাওয়া নিয়ে ইতোমধ্যেই সমালোচনায় পড়েছে আইসিসি। আর সেসব সমালোচনা ছাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন জন পোষ্ট করতে শুরু করেছেন মজার মাজার বিদ্রুপাত্মক ওয়ালপেপার, মিমি, ট্রল।
বেশ কয়েকটি ট্রল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে একটি নিয়ে বেশ উৎসাহিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
ওই ছবিতে দেখা যায়, মাঠ ভরে রয়েছে পানিতে। সেই পানির মধ্যেই রান নিচ্ছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। আর নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা পানির মধ্যেই আউট করার চেষ্টা করছেন তাকে। পানি ভর্তি সেই মাঠে ডাইভ মেরে রান আউট থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন কোহালি।
আর একটি ট্রলে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে ছাতা মাথায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফির। আর তার নিচে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘বিশ্বকাপ ২০১৯ এর নতুন লোগো’। এছাড়াও বিভিন্ন সিনেমা, গানের লাইন ধার করে বৃষ্টির জন্য ম্যাচ ভেস্তে যাওয়া নিয়ে পোস্ট বানাচ্ছেন অনেকেই। তারপর তা পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।