সাপ্তাহিক ছুটির সকাল সামনে রেখে যারা বৃহস্পতিবার রাতে একটু বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে ছিলেন, বাসায় ফেরার উদ্যোগ নিতেই যেন আক্কেল গুড়ুম। শীতের তীব্রতা গত কয়েকদিনে কমে যাওয়ায় যে স্বস্তিটুকু ছিল, তা যেন উবে যেতে বসেছে। কারণ ততক্ষণে বৃষ্টির ফোটায় ভিজতে শুরু করেছে রাজপথ! রাতভর থেমে থেমে পড়েছে সেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোটা।

এদিকে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হলেও সেই ছুটি তো আর সবার জন্য ‘প্রযোজ্য নয়’। ফলে সকালে ‘ডিউটি’ থাকায় যারা আগের রাতে একটু আগেই বিছানায় গিয়েছিলেন, ঘুম ভাঙতেই যেন তাদের মাথায় বাজ! সারারাতের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ভোরের পর থেকে গতি পেয়েছে। সকালে রাজধানীর কোথাও কোথাও তা রীতিমতো মাঝারি বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে। কর্মসূত্রে ছুটির দিনের সাতসকালে রাস্তায় বেরিয়েও তাই দেখা মিলছে ছাতা হাতে পথচারীর। ফাঁকা সড়কের বুকে জমে থাকা পানি ছিটকে দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনকে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শীতে হানা দেওয়া এই বৃষ্টি কেবল ক্ষণিক ভোগান্তি নয়, বয়ে আনছে ধারাবাহিক দুঃসংবাদ। দেশের বেশিরভাগ এলাকাতেই এমন থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে আরও দুই দিন। তাতে করে গত কয়েকদিনে সূর্যের তাপে জেলায় জেলায় ওম ফিরে এলেও এবার খুব দ্রুত না হলেও নামতে থাকবে তাপমাত্রার পারদ। আর মূল ‘খারাপ’ খবরটি রয়েছে পরের অংশে— দেশজুড়ে আসতে পারে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ!

ঢাকা আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দেশের রংপুর অঞ্চলে শীতের এই বৃষ্টি কমে যাবে সবার আগে। আজকের দিনটা পেরোলেই এ অঞ্চলটিতে বৃষ্টির দেখা নাও মিলতে পারে। তবে দেশের বাকি অঞ্চলগুলোকে বৃষ্টি কমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে রোববার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ এলাকায় বৃষ্টির তীব্রতা একটু বেশি থাকবে। আর থেমে থেমে হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় রাতের তো বটেই, দিনের তাপমাত্রাও কমতে থাকবে দেশজুড়েই।

আবহাওয়া অফিসের আজ শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকালের তথ্য বলছে, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়— ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া এলাকাতেও। অন্যদিকে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দিন গড়াতে গড়াতে তাপমাত্রা যেমন কমবে, তেমনি বাড়বে শীতের তীব্রতা— সেটা সারাদেশেই। আর এরপরই রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, সারাদেশে খুব বেশি যে বৃষ্টি হবে, তেমন নয়। তবে থেমে থেমে বৃষ্টিটা চলতে থাকায় শীত অনুভূত হওয়ার মাত্রাটা বাড়বে। সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে থাকবে। এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকবে।

এদিকে, বৃষ্টির ভোগান্তি শেষ হতে না হতেই হানা দিতে পারে শৈত্যপ্রবাহ, সেটাও মাঝারি মাত্রার। অর্থাৎ রাতের তাপমাত্রা নেমে আসবে ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই হিসাবে, গেল বছরের শেষ সপ্তাহের শৈত্যপ্রবাহ যেভাবে ভুগিয়েছে গোটা দেশকে, ততটা তীব্র না হলেও আসন্ন শৈত্যপ্রবাহের মাত্রাটাও কম হবে না।

মনোয়ার হোসেন বললেন, মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করবে। মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ হবে এটি। চলবে কয়েকদিন। রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু অঞ্চলে শীতের তীব্রতা হবে অন্য এলাকা থেকে বেশি।

ডিসেম্বরের দুই দফা শৈত্যপ্রবাহের পর নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ— সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তুতিটা তো আমাদের সবারও নেওয়া প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here