মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থার কারণে বিশ্ববাজারে হঠাৎ বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দাম। এ পর্যন্ত বেড়েছে ৪ শতাংশ। তবে তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও তেলের দাম বাড়ানো হবে কি না সে গুঞ্জনের মধ্যে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান। তিনি বলেছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লেও দেশে বাড়ানো হবে না।

ইরাকে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেমানি। এ ঘটনায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ইরান পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করা হবে।

এ অবস্থায় ইরাকও আর চাচ্ছে না মার্কিন সেনা তাদের দেশে থাকুক। এ বিষয়ে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও পাস করেছে তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেছেন, ইরাকের জন্য যাত টাকা খরচ হয়েছে তা ফেরত না দিলে তিনি সৈন্য প্রত্যাহার করবেন না।

ফলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে প্রভাব ফেলেছে এ ঘটনা।

জানা গেছে, ইরাকে মার্কিন হামলায় সোলেমানি নিহত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী তেলের দাম  ৪ শতাংশ বেড়ে গিয়ে প্রায় ৭০ ডলারে পৌঁছেছে। এই দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, জেনারেল কাসেম সোলেমানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের দীর্ঘ দিনের বিরোধ আরও জোরালো হতে পারে। এর প্রভাব জ্বালানি তেলের ওপরে পড়বে। বিশ্বে ব্যবহৃত প্রায় ৫ ভাগের এক ভাগ তেল হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত হয়। এই হরমুজ প্রণালীর উত্তর উপকূলে ইরানের অবস্থান। ইরান এই প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহনে বাধা দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ কমে গেলে, আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনাই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ বিষয়ে বলেন, আমাদের যে আমদানি ব্যয় হয়, তার বড় একটি অংশই তেল আমদানির কারণে ব্যয় করতে হয়। সুতরাং তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব অনেক বেশি হবে। তেলের সাথে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অন্যান্য শিল্প কারখানা জড়িত, তেলের দাম বাড়লে এগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বাড়লে আমদানি রপ্তানি ব্যয় বৈষম্যও বাড়বে। তেলের দাম বাড়লে এর সর্বোপরি প্রভাব জনজীবনের ওপর পড়বে।

অন্যদিকে বিশ্ববাজারে বাড়লেও বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়বে না বলছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের ঘটনার বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়লেও বাংলাদেশে ভোক্তা পর্যায়ে তেলের দাম বাড়বে না। ২০১৬ সালে সরকার জ্বালানি তেলের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, এখনো সেই মূল্যই আছে। এরপরে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কয়েকবার তেলের দাম ওঠানামা করলেও আমরা দাম পরিবর্তন করিনি। তেলের মূল্য বৃদ্ধি হলে বিপিসিকে ভর্তুকি বেশি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও ভোক্তা পর্যায়ে তেলের দাম বাড়ানো হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here