সম্প্রতি প্রকাশিত ফলাফল এবং গত বছরের ফলাফল থেকে বিশেষজ্ঞ পরীক্ষায় অংশ নেয়া চিকিৎসকরা নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এ ধরনের ফলাফল দেখে, যে কারো মনে হতে পারে পরীক্ষায় অংশ নেয়া চিকিৎসকরা লেখাপড়া না করেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তবে তারা বলছেন, যারা পরীক্ষায় অংশ নেন, সবাই পড়ুয়া এবং খুবই ভালো রেজাল্ট সবার।
স্নাতকোত্তর কোর্সের অনেক চিকিৎসক নয়া দিগন্তকে জানান, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ দেখা গেছে, কোনো স্পেশালিটিতে অনেক মেডিক্যাল কলেজের এমনকি বিএসএমএমইউর একজন চিকিৎসকও কৃতকার্য হননি। এটা সবাইকে বিস্মিত করেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হলে হতেও পারে। কারণ এ দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি না হলে রোগীরা যেসব দেশে যাওয়া সুবিধা সেখানে যাবে। সেই সাথে চলে যাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশে বসে সেসব দেশের এজেন্ট হয়ে অনেকে কাজ করতে পারেন।
পরীক্ষায় পাস করেননি এমন চিকিৎসকরা বলছেন, আমরা সরাসরি বলতে চাই না আমাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফেল করানো হয়েছে, তবে পরীক্ষায় পাস করার মতো যোগ্যতা আমাদের ছিল। পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করেও ফেল করতে হয়েছে এটা আমাদের অবাক করেছে। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে তো ফেল করার কথা না, তাহলে কেন ফেল করার সংখ্যা বেশি? এমন প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন এমন স্নাতকোত্তর কোর্সের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত।
পরীক্ষায় শূন্য শতাংশ পাস করেছে এমন কিছু ফলাফল নয়া দিগন্তের কাছে এসেছে যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডা: মো: জিল্লুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বিষয়েই প্রার্থীদের ফলাফল শূন্য। যেমন বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিনের ফেইজ-১ পরীক্ষায় ৮ জন পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও একজন অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি ৭ জনের মধ্যে পাস করেছেন মাত্র একজন, অন্যরা ফেল করেছেন। তাদের পরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে চলতি মাসের ৮ তারিখে। একই তারিখের ইন্টারনাল মেডিসিনের ফেইজ-বি পরীক্ষায় ৫ জন পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করেননি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে অবস অ্যান্ড গাইনি বিষয়ে ৩ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাদের রেজাল্ট ৮ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে।
যেমন কার্ডিওলজিতে ডিপ্লোমা কোর্সে রংপুর মেডিক্যাল জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে শূন্য শতাংশ এবং এনআইসিভিডি থেকে মাত্র ১০ শতাংশ পাস করেছেন।
ইন্টারনাল মেডিসিন ফেইজ বি’তে পাসের হার ঢাকা মেডিক্যাল, বারডেম, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে শূন্য শতাংশ।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা: শাহীনুল আলম নয়া দিগন্তকে জানান, আগামীতে পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করা হবে। পরীক্ষার্থীর মূল্যায়ন যেমন শিক্ষকরা করবেন, পরীক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের মূল্যায়ন করবেন। যে ফল প্রকাশ হয়েছে সেগুলো আবারো খতিয়ে দেখা হবে। আমরা জানতে চেষ্টা করবো কেন শূন্য পাসের হার বেশি।
স্নাতকোত্তর পরীক্ষার্থীরা বলছেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পাসের হার শূন্য শতাংশ হওয়ায় জাতিকে একটি ভয়াবহ চিকিৎসা সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের পাসের হার বজায় থাকলে নতুন বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে না। এতে করে রোগীরা আরো বেশি সংখ্যায় দেশের বাইরে চলে যাবে, এই প্রবণতা রুখতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here