উম্মুল ওয়ারা সুইটি
আজ ১৬ ডিসেম্বর। গৌরবের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আজ মহান বিজয় দিবস। পরাধীনতার শেকল ভেঙে ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিজয় এসেছে এই দিনে। বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নিয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ৩০ লাখ বাঙালি। আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে সম্ভ্রম হারিয়েছেন দুই লাখ নারী। বিজয় অর্জনের পরও থেমে থাকেনি এই জাতি। তিল তিল করে দীর্ঘ ৫০ বছরে গড়ে তোলা বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র।
এর মধ্যেও এসেছে বিপর্যয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা একদিনও থেমে থাকেনি। এখনো নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আবারও চেয়েছিল মুক্তির আনন্দ মিছিল থমকে দিতে। বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
স্বাধীনতার মাত্র আড়াই বছরের সোনার বাংলার স্বপ্ন দ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ায় স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো জাতি। অপেক্ষা সেই নাবিকের, যে এসে আবার হাল ধরবেন। ১৯৮১ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে এসে হাল ধরলেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর প্রথম দফায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন করলেন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার ক্ষমতায়। এর মধ্যেই দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সেই বিদ্রুপ থেকে মুক্তি দিলেন। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
বিজয়ের ৫০ পেরোনোর এই ক্ষণকে সমৃদ্ধ এবং নতুন প্রজন্মের জন্য আরও আগুয়ান করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশ। বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী আরও গৌরবের হয়েছে একই সঙ্গে দেশ উদযাপন করছে জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকী। আর সেই গৌরবে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বিজয় দিবস উদযাপন। গতকাল থেকেই উৎসবের আমেজ সারা দেশে। বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে কোটি বাঙালি নানা আয়োজনে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে।
বিজয় দিবস ও মুজিব জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে আজ থেকে দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন আজ অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টায় এবং অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় থাকবে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নেবেন। শপথগ্রহণ শেষে আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং স্বাগত বক্তব্য দেবেন মুজিবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মানীয় অতিথিকে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধাস্মারক প্রদান করবেন।


জাতীয় পর্যায়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৮টায় ধানম-ির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া ১৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানম-ির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন।
এ ছাড়া বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সাজিয়েছে নানা আয়োজন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ফলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় প্রতিরোধ। স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর কবজা থেকে স্বাধীন করতে লড়াই শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এদিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। শুরু হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা। সেই থেকে বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে ১৬ ডিসেম্বর।
লাল সবুজের ঝলকে বোয়ালখালী উদ্ভাসিত।
বোয়ালখালী পৌর মেয়র মো. জহুরুল ইসলাম জহুর এর নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লাল সবুজ রং ও বাতি দিয়ে আলোকিত করা হয়েছে। যা বোয়ালখালীর ইতিহাসে এক বর্ণিল আয়োাজন হিসেব সমগ্র বোয়ালখারীবাসীর নজর কেড়েছে।



