অনলাইন ডেস্ক : প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ভেজালবিরোধী অভিযান শুরু করেছে বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু বছরের বাকি ১১ মাস তাদের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। তাই তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা দুটি সারা বছর কী করে, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
শুনানিতে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে আদালত বলেন, তারা বড় বড় অফিস নিয়ে বসে আছে। তাদের কাজটা কি? তারা দায়িত্ব পালন করতে না পারলে অফিস ছেড়ে দিক। বিএসটিআই একটি বিশেষ সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য ধরা পড়লো, এরপর শুধু শোকজ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ? তাদের ওইসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
আদালত আরো বলেন, রোজা এলেই বিএসটিআই পণ্যের মান পরীক্ষা করে। রোজার সঙ্গে এর সম্পর্ক কি? তারা (বিএসটিআই) অন্য সময় কি করে?
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেন, ‘আইনে তাদের সব দেখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কি করছে? তারা কাজ করতে না পারলে অফিস ছেড়ে দিক। আমরা কেন এসব দেখতে যাবো?’
আদালত আরও বলেন, প্রতি সপ্তাহে একটি করে জনস্বার্থমূলক বিষয় আমাদের সামনে আসছে। এগুলো দেখার দায়িত্ব সরকারের। বিভিন্ন ভেজাল পণ্যে বাজার ভরে গেছে। এসব দেখে আমরা বসে থাকবো, তা হয় না। কিন্তু এসব যদি আমরা দেখি তাহলে আমাদের সমালোচনা করা হয়।
বিএসটিআইয়ের চিহ্নিত ৫২টি পণ্যের তালিকা দেখে আদালত বলেন, এসব পণ্য বাজারে আছে কিনা তা তাদের (বিএসটিআই) কাছ থেকে জানা দরকার। এখানে রূপচাঁদা, প্রাণ কোম্পানির পণ্য দেখছি। যেসব পণ্যের তালিকা দেখছি তা ঘরে ঘরে মানুষ ব্যবহার করে। কোনো কোম্পানিই বাদ নেই। অনেক বড় বড় কোম্পানির পণ্য বিদেশ রপ্তানি হয়। যাদের নিয়ে আমাদের গর্বে বুক ভরে যায়। অথচ তাদের পণ্য নিম্নমানের, ভেজাল? এ কি অবস্থা!
পরে আদালত বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আগামী রোববার আদালত হাজির হওয়ায় আদেশ দেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রমাণিত নিম্নমানের ও ভেজাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য জব্দ ও উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান।
শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী বলেন, জাতীয় জীবনের বড় একটি সমস্যা নিয়ে আমি এসেছি। আমি-আপনি, আমার-আপনার পরিবার, আমাদের বাচ্চারা যে প্রতিনিয়ত খাবারগুলো খাই, এই খাবারগুলোতে প্রতিনিয়তই দেখি যে ভেজালের বিষয়। তবে আমি সুনির্দিষ্টভাবে একটি তালিকা নিয়ে এসেছি। আবেদনে পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনও যুক্ত করে দিয়েছি।
এর আগে, গত ২ মে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বিএসটিআই একটি সংবাদ সম্মেলন করে। তারা জানান, রমজান মাস উপলক্ষে বাজার হতে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা ক্রয় করে বিএসটিআই’র ল্যাব পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩৩১টির পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫২টি পণ্য পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।
এদিকে, মানহীন খাদ্য রুখতে না পারায় বিএসটিআই’র কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ। নিরাপদ দুধ নিশ্চিত করতে বিএসটিআই’র কাউন্সিল ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কাউন্সিলের কার্যপরিধি কি তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাস্তুরিত তরল দুধের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দায়ের করা পৃথক একটি রিটের শুনানিকালে বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ২৪ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসান এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম।
গত ৬ মে বিএসটিআই কর্তৃক বাজারে এসব পণ্যে ভেজাল ধরা পড়ার পরও ওই জব্দ না করা, সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা না নেওয়ায় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে আইনি নোটিশ পাঠান ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে জবাব না পাওয়ায় আজ এ রিট দায়ের করা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে গত ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে। এরপর গত ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।