আজাদী’র সৌজন্যে

সংসারের পেছনে যে মানুষটি দিন-রাত পরিশ্রম করে যান কোনো প্রাপ্তি ছাড়া, তিনি বাবা। নিজের জন্য নয়, সন্তানের জন্য উপার্জন উৎসর্গ করেন। প্রত্যেক সন্তানের সাফল্যের পেছনে আছে বাবাদের নীরব গল্প। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। আজকের দিনে তিনজন সফল বাবাকে নিয়ে সফল সন্তানেরা ব্যক্ত করেছেন তাদের অনুভূতি।

বইয়ের পাতা থেকেই উঠে আসা অসাধারণ আলোকিত বাবা
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন ডা. এল এ কাদেরীর মেয়ে ড. সনিয়া কাদেরী। তিনি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে। এই তড়িৎ প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী কাজ করেন টু-সিঙ ইনকর্পোরেটেডে। বাবাকে নিয়ে অনুভূতি তুলে ধরেছেন তিনি।
বাবা ডাকটি ছোট্ট, কিন্তু এর পরিব্যাপ্তি কি বিশাল! বাবা আমার কাছে আকাশের মতন উদার, সূর্যের মতন দ্যুতিময় এক অস্তিত্ব। পেশাগত জীবনে প্রখর সাফল্যের অধিকারী নিউরোসার্জন হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত। তিনি মমতাময় বাবা এবং অসাধারণ একজন মানুষ হিসেবে তার সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করেছেন স্বাধীন চেতনায় বেড়ে ৬ষ্ঠ কলাম
উঠতে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী যেখানে এমন আকাশচুম্বী সফল চিকিৎসক বাবার সন্তানদের পেশা অনুস্মরণ করাটাই স্বাভাবিক, বাবা সেখানে আমাদের শিক্ষাগত এবং পেশাগত সিদ্ধান্তগুলো নিজেদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন গভীর ভালোবাসা আর আস্থায়।
ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে পেয়েছি বই পড়ার অভ্যাস। শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটির দিনগুলোতে বাবার হাত ধরে বইয়ের দোকানে গিয়ে নতুন সব বই কেনা আমার প্রিয় সুখ স্মৃতি। বাবার কাছেই শিখেছি পাঠ্যপুস্তকের চেয়ে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস আর প্রবন্ধ পড়া কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বইয়ের পাশাপাশি সব ধরনের সাপ্তাহিক পত্রিকা যেমন আনন্দমেলা, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, কিশোর ভারতী, রিডার্স ডাইজেস্ট, দেশ নিয়মিত সংগ্রহ করে আনতেন আমাদের জন্য।
‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’ এ কথাটির যেন জলজ্যান্ত প্রমাণ আমার বাবা, যিনি আমাদের অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো করার পুরস্কারস্বরূপ আমেরিকা থেকে বিশেষভাবে অর্ডার করে উপহার দিয়েছিলেন সমগ্র এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার ৩৩টি খণ্ড, যার আবেদন একদমই আগের মতন, এমনকি এই ওয়েবের যুগেও। এসএসসি থেকে শুরু করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন অব্দি অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি এই এনসাইক্লোপেডিয়ার পাতায়।
এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে আমি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম ও সম্মিলিতভাবে ১৩তম হয়েছিলাম। স্নাতক পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিঙ বিভাগ থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছিলাম ফ্যাকাল্টিতে সেরা ফলাফলের জন্য। আমার প্রত্যেকটি ফলাফলের পেছনে সবচেয়ে বড় উৎসাহ বাবা আর মা। আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছেন, মেয়ে হলেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা যায়। ছেলেমেয়ে সবাই সমান।
আমার এই গুণী বাবার সম্পর্কে আরেকটি কথা বলতেই হয়। একজন লেসার সায়েন্টিস্ট হিসেবে আমার পেশাগত অভিজ্ঞতার সাথে চিকিৎসা শাস্ত্রের মিল নেই বললেই চলে। অথচ আমার দৈনন্দিন গবেষণা এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে বাবার অকুণ্ঠ আগ্রহ এবং সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা যেন তার বিজ্ঞানমনস্ক আর জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিত্বের চমৎকার বহিঃপ্রকাশ। আমার বইপ্রেমী বাবা যেন তাই বইয়ের পাতা থেকেই উঠে আসা এক অসাধারণ আলোকিত বাবা, যার তুলনা উনি নিজেই।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here