আলোকিত ডেস্ক : রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামের এক নারীকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (২০ জুলাই) রাতে বাড্ডা থানায় গণপিটুনিতে মৃত ওই নারীর ভাগ্নে নাসির উদ্দিন এই মামলা করেন। বাড্ডা থানার এসআই মাসুদ আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এসআই মাসুদ আলম বলেন, ‘মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে অতর্কিতভাবে ওই নারীকে স্কুলের অভিভাবক, উৎসুক জনতাসহ আরও অনেকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০জন অজ্ঞাত ব্যক্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাড্ডা থানার এসআই সোহরাব হোসেন এই মামলার তদন্ত করবেন।’
এর আগে শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ওই নারীকে শনাক্ত করেন তার ভাগ্নে ও বোন রেহানা। তারা জানায়, নিহতের নাম তসলিমা বেগম রেনু। তার ১১ বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। বছর দুয়েক আগে তার স্বামী তসলিম উদ্দিনের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মহাখালী ওয়ারলেস এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি।
মৃত ওই নারীর ভাগ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, রেনু মানসিক রোগে ভুগছিলেন। চার বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তিনি এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে ঘুরছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি বাড্ডার ওই স্কুলটিতে যান। কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারণে তার আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। এজন্য স্কুলের অনেকেই তাকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করছিল। প্রধান শিক্ষক তার সাথে কথা বলার জন্য অফিসকক্ষে নিয়ে গেলেও স্কুল প্রাঙ্গণে তার অস্বাভাবিকতা দেখে অনেকেই তাকে অফিসকক্ষ থেকে বের করে মারধর করতে চাইছিলেন। প্রধান শিক্ষক রেনুকে বাইরে বের না করলে স্কুলের অভিভাবক ও বাইরে থেকে আসা উৎসুক জনতা রুমের গেট ভেঙে তাকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে মারধর করতো না।
এদিকে, শনিবার বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গুজবে কান দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল। এছাড়া গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যা ফৌজদারি অপরাধ। এসব থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনায় পুলিশ সদর দফতর সম্প্রতি জানায়, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে- একটি মহল এমন গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্নস্থানে গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি একটি ফৌজদারি অপরাধ। আইন নিজের হাতে তুলেন নেবেন না।’
গণপিটুনির ঘটনা তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।