বাজেট বাস্তবায়নে মূল্যনীতি এবং ভর্তুকির মধ্যে সামঞ্জস্যের আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ভর্তুকির কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের খুচরা মূল্য নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। না হলে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ পড়বে।

তিনি বলেন, খাতওয়ারি বরাদ্দের দিক থেকে বাজেট ভারসাম্যহীন ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা শীর্ষক এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাজেটে স্বচ্ছল ও উচ্চবিত্তকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক মানুষের জন্য রয়েছে প্রান্তিক সুবিধা।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ধনীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এটা অপশাসনের সুবিধাভোগীদের পক্ষে গেছে। অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোকে বাজেটে তুলে ধরা হয়নি এবং সমাধানের কোনও আভাসও নেই। ব্যাংক খাতের সমস্যা নিয়ে বাজেটে আলোচনা আছে, কিন্তু কর্মপরিকল্পনা নেই। ব্যাংকিং খাতের সমস্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সরকারি টাকায় অবকাঠামো নির্মাণ করে জিডিপি বাড়ানোর চেষ্টা প্রাগৈতিহাসিক ধারণা। এটা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করছে।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, বাজেট নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী হয়নি। তথ্য ও উপাত্তের গরমিল রয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক যে চাপ চলছে বাজেটে তার কোনও স্বীকৃতি নেই। বাজেট দেওয়ার সময় যে অভিনব কায়দা ছিল, বাজেটের তথ্য উপাত্তে তা পাওয়া যায়নি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে সম্পদ কর আইন কার্যকর নেই। সম্পদ করের পরিবর্তে ব্যক্তিশ্রেণির বিত্তশালী করদাতা, তাদের প্রদেয় আয়করের একটি নির্দিষ্ট হারে সারচার্জ দিয়ে থাকেন। গত কয়েক বছর যাবত এ বিধানটি কার্যকর আছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, অনেক বিত্তশালী করদাতার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তরা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না। ফলে প্রদেয় আয়কর কম হওয়ায় তাদের তেমন কোনো সারচার্জও প্রদান করতে হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ কোটি বা তার অধিক নিট সম্পদ রয়েছে এমন করদাতাদের নিট সম্পদের ওপর দশমিক ১ শতাংশ অথবা প্রদেয় করের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করছি।

অন্যদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা আগের বছর একই ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ব্যবসায়িক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি করা হয়েছিল,- উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here