মাননীয় এমপি সকাশে…
বাঙালীর সংস্কৃতি সমৃদ্ধির সােপানের ইতিহাস বােয়ালখালী
তথ্য প্রযুক্তির যুগে অনেক কিছুই দৃশ্যমান প্রয়ােজন
-মো. তাজুল ইসলাম রাজু
মাননীয় এমপি মহোদয়, আপনি বোয়ালখালীর প্রাণের মানুষ। আপনার রাজনৈতিক জীবন থেকে বছরের ৩৬৫দিনই বোয়ালখালীর মানুষদের সুখে দুঃখে তাদের সাথে রয়েছেন । সুতরাং বোয়ালখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য আপনার কোনটি অজানা নয়। সময়ের পরিক্রমায় আপনি এখন বোয়ালখালীর উন্নয়নের ধারক- বাহক। আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যেও বোয়ালখালী ইতিহাস নিয়ে একটু ভাববেন সে পত্যাশায়-

প্রবাহমানকালের গতিশীল প্রেক্ষায় ইতিহাসের মনিজ্যেতিদীপ্ত পৃষ্ঠায় রচিত পবিত্র ধূলা এবং অনুপম সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের উজ্জ্বল পরিচয় বহন করে চলেছে বীর চট্টগ্রামের রত্নগর্ভা বােয়ালখালী অঞ্চল। দু’দুটো স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্ত-রঙ্গীন সময়গুলাের ধারাহিকতায় এ অঞ্চলের অতুলনীয় অবদান সর্বত্র সুবিদিত। বীরদের বাঁধন ছেঁড়ার সংগ্রামের আত্মদান, উপাধি ভূষিত রত্নগর্ভাদের মেধার মহিমা, কবি ভাস্করদের মােহনীয় কাব্য সংরচন, ধর্মানুরাগীদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সমাজপতিদের স্বদেশ হিতৈষণা এবং সমাজ তথা দেশ সেবার মহান আদর্শে উজ্জীবিত অসংখ্য সন্তানের সু-কৃতি ও সু-কর্মে এ অঞ্চল আলােকিত হয়ে আছে। এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমাদের বাঙালী জাতির সমৃদ্ধির সােপান। এই বােয়ালখালীর মানচিত্রের একপাশে রাউজান অন্য পাশে পটিয়া। বিশ্বের রাজনীতিতে মুক্তিকামী ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে রাউজানের মাস্টার দা সূর্য সেন, পটিয়ায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, এই দু’য়ের বিচরণসহ এদের সঙ্গী ছিল বােয়ালখালীতে ২১জন বিপ্লবী। ‘৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে ২৫ মার্চের কালাে রাতে হায়েনাদের আক্রমন প্রতিহত করার ঘােষণা বঙ্গবন্ধু থেকে যে ক’জন পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ডা: এম এ মান্নান অন্যতম। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘােষণা করেছিলেন ২৬ মার্চ। মুক্তিযুদ্ধকালীন “জেড ফোর্সের অধিনায়ক” প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম কিন্তু সেনা ব্যারাক ছেড়ে প্রথম আশ্রয় নিয়েছিলেন বােয়ালখালীতেই। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ বােয়ালখালী থেকেই কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি বিজড়িত আশ্রয়স্থল- জ্যৈষ্ঠপুরা দেবেন্দ্র লাল সেনের বাড়ী, জ্যৈষ্ঠপুরা লক্ষির বাপ তথা পরেশ মাষ্টারের বাড়ী, কধুরখীল মালেক ফকিরের বাড়ী, কধুরখীল জশােহরী মহাজন বাড়ী। একমাত্র টর্চার সেল- বর্তমান উপজেলা পরিষদের কার্যালয়। বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত স্থানগুলাের মধ্যে পূর্ব গােমদন্ডী রইস্যার মা’র ঘাট, পশ্চিম শাকপুরা নাচখানা, কধুরখীল দূর্গারাড়ী, কালুরঘাট ব্রীজের পূর্বপাড়, কানুনগােপাড়া কলেজ সম্মুখ, কড়লডেঙ্গার হাজির ভাঞ্জল। বােয়ালখালীর নামাংকৃত কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে শাহবু’আলী কলন্দারের আস্থানা। পীর মহিউদ্দীন (রহ:) স্বহস্তে লিখিত কোরান শরীফ । সৈয়দ নগর মন্ডলের স্বহস্তে লিখিত কোরআন শরীফ। খরণদ্বীপ দরবার শরীফে নবী করিম (সা:) এর কদম মােবারকের চিহ্ন সমৃদ্ধ পাথর আহলা দরবার শরীফে নবাব পরিবারের হযরত শেখ মােহম্মদ গৌরি ছাহেব কেবলা (র) মাজার ও প্রাচীন মসজিদ, জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ে এক্ষুতি ছড়া। মাইজভাণ্ডারী দর্শনের প্রবর্তক হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ কেবলা বাবার সুনির্দিষ্ট একজন প্রধান ও প্রথম খলিফাসহ সাতজন খলিফা, শ্রীপুর বুড়া মসজিদ, খরণদ্বীপ কালা মসজিদ, জ্যৈষ্ঠপুরায় এক্ষুতি ছড়া, পােপাদিয়া কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ী, উত্তর গােমদণ্ডীতে পুর্তগীজ আমলে নির্মিত খ্রীস্টানের গীর্জা। কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে চন্ডিতীর্থ মেধস আশ্রম। বৈদ্যপাড়ায় বুদ্ধগয়ার শিখরে বৌদি বৃক্ষ, ঐতিহ্যবাহী দত্ত পরিবারের একাদশ রত্ন, প্রাচীন স্যার আশুতােষ কলেজ, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম ইংরেজী মাধ্যম স্কুল সারােয়াতলী পিসি সেন স্কুল, প্রথম মাদ্রাসা বেঙ্গুরা সিনিয়র মাদ্রাসা। আমেরিকার ধর্মীয় গুরু শাকপুরার শ্রী চিন্ময় চৌধুরী। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত ড. সুচরিত চৌধুরী, একুশে পদক প্রাপ্তদের মধ্যে ২০০১ সালে বিনয় বাশী, ২০০২ সালে রমেশ শীল, ২০০৮ সালে শেফালী ঘােষ। স্কুল পর্যায়ে মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে কধুরখীল স্কুলে প্রথম অমর একুশের শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা- এতসব মিলিয়ে বােয়ালখালী অঞ্চল যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি ইতিহাসের ব্যপ্তিও অগুণিত, তাই এ ধারাবাহিকতায় এতদঞ্চলের ইতিহাসের পাতায় আরাে একটি অধ্যায় সূচিত হয়। উদ্যোগতা সাংবাদিক মাে. তাজুল ইসলাম রাজু ও নির্মাতা ভাস্কর ডি কে দাশ মামুনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে কাস্টিং পদ্ধতিতে নির্মিত ৮ ফুট লম্বা এই ভাস্কর্য একুশে পদক প্রাপ্ত বিনয় বাশী জলদাশের ভাস্কর্য । যা দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত।

এসব ইতিহাস তরুণ প্রজন্মদের কাছে পরিলক্ষিত না হলে ভবিষ্যতে তা অন্ধকারে থেকে যাবে। তাই এসব স্থানগুলােতে একটি করে পরিচিতি ফেস্টুন যদি টাঙ্গিয়ে দেয়া যায় তাহলে এ থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম বাঙালি, বাঙালিয়ানা সংস্কৃতির উৎস খুঁজে পেতে সহজ হবে। ফলে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন সাময়িকিসহ ব্যক্তিগত সংগ্রহে কাজ করার বিপুল পরিমাণ উপাদান পাবে। ফলে এই ইতিহাসগুলাে কোন না কোনভাবে সংরক্ষিত, পরিমার্জিত ও পরিপূর্ণতা পাবে।

-মো. তাজুল ইসলাম রাজু, সম্পাদক, আলোকিত বোয়ালখালী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here