আলোকিত প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ স্কাউটস হলো বাংলাদেশের জাতীয় স্কাউট সংগঠন। এই অঞ্চলে স্কাউটিং কর্মকান্ড শুরু ১৯১৪ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের ব্রিটিশ ভারতীয় শাখার অংশ হিসাবে। পরে পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত এখানে স্কাউটিংয়ের কার্যক্রম চলে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্কাউট এসোসিয়েশন নামে জাতীয় পর্যায়ে স্কাউটিংয়ের সংগঠন গড়ে উঠে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক স্কাউট আন্দোলনের সদস্য হয়। পরে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ স্কাউট এসোসিয়েশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। ২০১৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশে মোট স্কাউটের সংখ্যা ১,৪৭৪,৪৬০ জন।

বাংলাদেশ স্কাউটস
বাংলাদেশ স্কাউটস.svg
প্রধান অফিস ৬০, অঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম রোড, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ
অবস্থান ২৩°৪৪′১৫.৪০″ উত্তর ৯০°২৪′৩৮.৫০″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠিত ১৯৭২
Defunct সরকারি
সদস্য ১৪,৭৪,৪৬০
প্রধান স্কাউট আব্দুল হামিদমহামান্য রাষ্ট্রপতি

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

প্ৰধান জাতীয় কমিশনার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খাঁন
অন্তর্ভুক্তি বিশ্ব স্কাউট সংস্থা
ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ স্কাউটস
 স্কাউটিং প্রবেশদ্বার

আধুনিক বাংলাদেশে স্কাউটিং আন্দোলন শুরু হয় স্কাউট এসোসিয়েশনের ব্রিটিশ ভারতীয় শাখার অংশ হিসেবে। ভারত বিভাগের পরে পাকিস্তান বয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত এখানে স্কাউটিংয়ের কার্যক্রম চলে।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তান বয় স্কাউটের দ্বিতীয় জাতীয় জাম্বুরী ৪০০০ স্কাউট সদস্য নিয়ে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান বয় স্কাউটের পঞ্চম জাতীয় জাম্বুরীতে মৌচাকে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউট এর নতুন ট্রেনিং সেন্টারের মাঠ ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ বয় স্কাউট অ্র্যাসোসিয়েশন করা হয়। ১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারাদেশের স্কাউট নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ঐ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ১১১ নং অধ্যাদেশ বলে উক্ত সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে প্রবীণ স্কাউটার সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ২২মে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসোসিয়েশন

বিশ্ব স্কাউট সংস্থা (WOSM) ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় পুনরায় এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস মেয়েদের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিল ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ একাদশ সভায় বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে গার্ল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশে।

কার্যাবলি

স্কাউট ধাপসমূহবাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলন প্রধানত তিনটি শাখায় বিভক্ত।

   কাব স্কাউটস - ৬ থেকে ১১ বছর।
   স্কাউটস - ১১ থেকে ১৭ বছর।
   রোভার স্কাউটস - ১৭ থেকে ২৫ বছর।

তবে রেলওয়ে, নৌ এবং এয়ার অঞ্চলের চাকরিজীবিদের জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্কাউট ধাপসমূহ

বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলন প্রধানত তিনটি শাখায় বিভক্ত।

  • কাব স্কাউটস – ৬ থেকে ১১ বছর।
  • স্কাউটস – ১১ থেকে ১৭ বছর।
  • রোভার স্কাউটস – ১৭ থেকে ২৫ বছর।

তবে রেলওয়ে, নৌ এবং এয়ার অঞ্চলের চাকরিজীবিদের জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে।[৩]

পারদর্শিতা ব্যাজ

স্কাউটদের পারদর্শিতার বিষয় বিবেচনা করে তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার পারদর্শিতা ব্যাজ প্রদান করা হয়ে থাকে।এর মাধ্যমে একজন স্কাউট কতটুকু পারদর্শী তা বোঝা যায়।

স্কাউট অঞ্চলসমূহ

মোট ১৩ টি অঞ্চল –

  • ঢাকা অঞ্চল
  • রাজশাহী অঞ্চল
  • চট্টগ্রাম অঞ্চল
  • সিলেট অঞ্চল
  • খুলনা অঞ্চল
  • বরিশাল অঞ্চল
  • কুমিল্লা অঞ্চল
  • দিনাজপুর অঞ্চল
  • ময়মনসিংহ অঞ্চল
  • রেলওয়ে অঞ্চল
  • নৌ অঞ্চল
  • এয়ার অঞ্চল
  • রোভার অঞ্চল

স্কাউটদের প্রার্থনা সংগীত

স্কাউটদের প্রার্থনা সংগীত তিনটি।[৬]

বাদশা তুমি দ্বীন দুনিয়ার

বাদশা তুমি দ্বীন ও দুনিয়ার

হে পরওয়ারদেগার….

সেজদা লওহে হাজারবার আমার,

হে পরওয়ারদেগার…

চাঁদ সুরুজ আর গ্রহ তারা,

জ্বীন ইনসান আর ফেরেস্তারা

দিন ও রজনী গাহিছে তারা

মহিমা তোমার

হে পরওয়ারদেগার…

তোমারই নূরের রওশনি পরশে

উজ্জ্বল হয় যে রবি ও শশী..

রঙিন হয়ে ওঠে বিকশি…

ফুল সে বাগিচার…

হে পরওয়ারদেগার।।

বিশ্ব ভুবনে যা কিছু আছে

তোমারই কাছে করুনা যাচে

তোমারই মাঝে মরে ও বাঁচে

জীবনও সবার

হে পরওয়ারদেগার।।

বাদশা তুমি দ্বীন ও দুনিয়ার

হে পরওয়ারদেগার।।।

প্রার্থনা

অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি

বিচার দিনের স্বামী।

যত গুণগান হে চির মহান

তোমারি অন্তর্যামী।

দ্যুলোক-ভূলোক সবারে ছাড়িয়া

তোমারি চরণে পড়ি লুটাইয়া

তোমারি সকাশে যাচি হে শকতি

তোমারি করুণাকামী।

সরল সঠিক পূণ্য পন্থা

মোদের দাও গো বলি,

চালাও সে-পথে যে-পথে তোমার

প্রিয়জন গেছে চলি।
যে-পথে তোমার চির-অভিশাপ যে-পথে ভ্রান্তি, চির-পরিতাপ

হে মহাচালক,মোদের কখনও

করো না সে পথগামী।

হে খোদা দয়াময়

হে খোদা দয়াময় রহমান রহীম,

হে বিরাট, হে মহান, অনন্ত অসীম।

নিখিল ধরনীর তুমি অধিপতি,

তুমি নিত্য সত্য পবিত্র অতি।।

চির অন্ধকারে তুমি ধ্রুব জ্যোতি,

তুমি সুন্দর মঙ্গল মহামহিম।

তুমি মুক্ত স্বাধীন বাঁধা বন্ধন হীন,

তুমি এক, তুমি অদ্বীতিয় চিরদিন।।

তুমি সৃজন,পালন, ধ্বংসকারী,

তুমি অব্যয় অক্ষয় অনন্ত আদিম।

আমি গুনাহগার মম পথ অন্ধকার,

জ্বালো নূরের আলো নয়নে আমার।।

আমি চাইনা বিচার রোজ হাশরের দিন,

আমি চাই শুধু করুনা, ওগো হাকীম।।

স্কাউট আইন

বাংলাদেশের স্কাউটদের এর ৭টি আইন মেনে চলতে হয়, এগুলো হলো –

  1. স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী,
  2. স্কাউট সকলের বন্ধু,
  3. স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত,
  4. স্কাউট জীবের প্রতি সদয়,
  5. স্কাউট সদা প্রফুল্ল,
  6. স্কাউট মিতব্যয়ী,
  7. স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল।

মূলমন্ত্র

বাংলাদেশ স্কাউটসের মূলমন্ত্র :

  • কাব স্কাউটের মূলমন্ত্র: যথাসাধ্য চেষ্টা করা
  • স্কাউটের মূলমন্ত্র: সদা প্রস্তুত
  • রোভার স্কাউটের মূলমন্ত্র: সেবা

স্কাউট প্রতিজ্ঞা

আমি আমার আত্মমর্যাদার উপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে,

  • স্রষ্টা ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে
  • সর্বদা অপরকে সাহায্য করতে
  • স্কাউট আইন মেনে চলতে

আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

মূলনীতি সমূহ

স্কাউটিং এর মূলনীতি তিনটি –১. স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালন (Duty to God)

২. অপরের প্রতি কর্তব্য পালন (Duty to Others)

৩. নিজের প্রতি কর্তব্য পালন (Duty to Self)

ইউনিফর্ম

বাংলাদেশ স্কাউটসের ইউনিফর্ম

যে কেউ স্কাউট আন্দোলনের শপথ নিলেই তাকে স্কাউট ইউনিফর্ম পরিধান করতে হয়। ইউনিফর্ম গণতন্ত্ৰের চিহ্ন এবং একাত্ববোধের পরিচয় বহন করে। কাব স্কাউটস, স্কাউটস, রোভার স্কাউটস এবং প্ৰশিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্ৰ ইউনিফর্ম রয়েছে। ছেলেদের জন্য ছাঁই রংয়ের শার্ট এবং গাঢ় নেভি ব্লু রংয়ের ট্ৰাউজার; মেয়েদের জন্য ছাঁই রংয়ের জামা, গাঢ় নেভি ব্লু ট্ৰাউজার এবং ওড়না। মহিলা প্ৰশিক্ষক ছাঁই রংয়ের শাড়ি এবং গাঢ় নেভি ব্লু ব্লাউজ পরিধান করে থাকেন। প্ৰত্যেক স্কাউটকে কালো সু, নেভি ব্লু ক্যাপ এবং স্বতন্ত্ৰ স্কার্ফ পরিধান করতে হয়। সকল স্কাউট এর দলীয় স্কার্ফ পরিধান বাধ্যতামূলক।

প্ৰেসিডেন্ট'স স্কাউট পদক, বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক
প্ৰেসিডেন্ট’স স্কাউট পদক, বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

জাতীয় স্কাউট প্ৰশিক্ষণ কেন্দ্ৰ (NSTC) গাজীপুরের মৌচাকে অবস্থিত। এখানে ২০০৭সালের নভেম্বর মাসে স্কাউট জাদুঘর প্ৰতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০টি আঞ্চলিক স্কাউট প্ৰশিক্ষণ কেন্দ্ৰ রয়েছে। এগুলো হলোঃ

নাম স্থান ছবি
বাহাদুরপুর (রোভার স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র), গাজীপুর বাহাদুরপুর রোভার পল্লী
মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
কাপ্তাই, রাঙামাটি
দশমাইল, দিনাজপুর
সিলেট আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।, লক্ষণাবন্দসিলেট বাংলাদেশ স্কাউটস সিলেট আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
রুপাতলি, বরিশাল
লালমাই, কুমিল্লা
পুলেরহাট, খুলনা
নওদাপুর, রাজশাহী
নওদাপাড়া, বগুড়া
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here