বেতন বাড়ানোর দাবি পূরণ না হলে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের অনড় অবস্থানের কারণে সমাপনী পরীক্ষাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাতে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, যথাসময়ে সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করবে তারা। প্রয়োজনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
এর আগে, প্রধান শিক্ষকদের দশম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন না করা হলে ক্লাসরুমে তালা লাগিয়ে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক নেতাদের পক্ষ থেকে সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দিতে আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসছি। এ দাবিতে আমরা আসন্ন সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছি। দাবি আদায় না হলে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাব না।
তবে শিক্ষকদের এমন ঘোষণার বিপরীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে তাদের। প্রয়োজনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা।
মন্ত্রণালয়টির সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, সামনের সমাপনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। তারা যে দাবি জানিয়েছেন, সেটি প্রক্রিয়াধীন। বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এত দ্রুত নেওয়া যায় না— এটা শিক্ষকদেরকে বুঝতে হবে। তাদের উচিত শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হওয়া। মন্ত্রণালয় তাদের দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছে।
আন্দোলন থেকে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সচিব আকরাম আল হোসেন।
এদিকে, আন্দোলন থামাতে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বসতে চান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। প্রয়োজন হলে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, দাবি থাকলে আলোচনা হবে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। কিন্তু আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া যাবে না। আমরা যথাসময়ে সমাপনী পরীক্ষা আয়োজন করব।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়।
পরদিন ১৫ অক্টোবর দুই ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস এবং ১৭ অক্টোবর সারাদিন কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।