ডিমের দাম বাংলাদেশে কারা নির্ধারণ করে এবং কীভাবে?

বিবিসির সৌজন্যে

খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন একজন খামারী

বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে প্রতিদিন সকালে দাম নির্ধারণ করা এমন একটি পণ্য হল ডিম।

অনেকের সকালের নাস্তায় যেমন ডিম থাকে অনিবার্য, তেমনটা ডিমের বাজারে এই ডিম কত টাকায় বিক্রি হবে সেটাও ঠিক হয়ে যায় সকালেই।

ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ডিম সমিতি ‘তেজগাঁও ডিম সমিতি’র সদস্য নাহিদ হাসান বলেন “ঢাকায় মানুষ রাতে কেনাকাটা করে। রাতে আমরা বাজারের অবস্থা বুঝতে পারি। সেই অনুযায়ী পরের দিনের দাম নির্ধারণ করা হয়।”

তিনি বলেন সারা বাংলাদেশে যারা ডিমের ব্যবসা করে পাইকারি পর্যায়ে তাদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

“যখন বাজারে একটু টান পড়ে, তখন আমরাও একটু দাম বাড়িয়ে দিই। চাহিদা বেশি, দাম বেশি। কারণ ডিম তো রাখতে পারবো না। গরমে নষ্ট হয়ে যাবে,” বলেন মি. হাসান।

ডিমের দাম নির্ধারণের আরেকটা বড় জায়গা রাজশাহী।

ডিমের উপকারিতা নির্ভর করে ডিম কীভাবে রান্না করা হচ্ছে তার উপর

চাহিদা হিসাবে মূল্য

রাজশাহীর মোসলেমের মোড়ে ডিম আড়ত সমিতির সভাপতির দোকান রয়েছে।

সভাপতি জয়নাল আবেদিন বিবিসিকে বলেন, ডিমের চাহিদার উপর ডিমের দাম নির্ভর করে। তবে ঢাকার চাহিদা, স্থানীয় মার্কেটের চাহিদা এই সব কিছু হিসেব করে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়।

“সকাল আটটার দিকে বোঝা যায় দাম কেমন হবে। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে সব আড়তদারদের কাছে জানিয়ে দেয়া হয়”।

“যেমন গতকাল একশটা ডিমের দাম ছিল ছয়শ’ টাকা ৬০পয়সা। সাধারণ একটা ডিমের দাম ১০ পয়সার মত ওঠানামা করে। আজ শুক্রবার একশটা ডিমের দাম হবে ছয়শ’ টাকা ৮০পয়সা” বলেন তিনি।

রাজশাহীতে বড় আড়তদার আছেন ৩০জন। তারা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করেন।

ডিমের চাহিদা বেশি নাকি কম সেটা তারা জানান।

মি.আবেদিন বলেন “আমি তখন বাজার বিচার-বিবেচনা করে চাহিদা বেশি থাকলে একশটা ডিমের দাম ২০টাকা বাড়িয়ে দিই। চাহিদা কম থাকলে ২০টাকা কমিয়ে দিই”।

“ধরেন একশটা ডিম ছয়’শ টাকা ৬০ পয়সা করে আমরা আনি খামারিদের কাছ থেকে। এর পর আমরা ২০ পয়সা কমিশন রেখে পার্টির কাছে বেচি।”

তবে খুচরা পর্যায়ে যারা বিক্রি করেন তারা নির্ধারিত দামের সঙ্গে নিজেদের লাভ যোগ করে বিক্রি করেন।

“পুরো রাজশাহী বিভাগে আমি যে রেট ঠিক করে দেব সেই রেটে সবাই খামারিদের কাছ থেকে কিনবে। পরে তাদের যাতায়াত খরচ, অন্যান্য খরচ মিলিয়ে হয়ত ২০,৩০,৪০ পয়সা বেশিতে বিক্রি করবে”।

কিশোরগঞ্জ থেকেও ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। কিশোরগঞ্জের ডিম ব্যবসায়ীদের যে সমিতি সেখানকার একজন সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, সারা দেশে যেখান থেকে তারা কম দামে ডিম পান সেখান থেকেই ডিম সংগ্রহ করেন।

ডিম খাওয়া ভাল কী ভাল না এনিয়ে বিতর্ক বহুদিনের
ডিম খাওয়া ভাল কী ভাল না এনিয়ে বিতর্ক বহুদিনের

বাংলাদেশে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় ঢাকা, রাজশাহী এবং কিশোরগঞ্জ থেকে।

ডিম ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান বলেন, সব জায়গাতেই স্থানীয় পর্যায়ে ডিম সংগ্রহ করেন আড়তদাররা। কিন্তু এই তিনটা স্থানে সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করা হয় এবং ফলে মার্কেট পর্যালোচনা করা হয় এই তিনটি জায়গাতে।

“ঢাকা, রাজশাহী এবং কিশোরগঞ্জের আড়তদাররা কত টাকায় খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন সেটার একটা মূল্যায়ন করা হয়। আবার বাজারে চাহিদা কেমন আছে সেটাও দেখা হয়। এই দুইটা দিকে দেখে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়।”

তবে তিনি বলেন এই দামে গ্রাহকরা ডিম পান না। “কারণ তারা কেনেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের খরচ রেখে দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করেন।”

ডিমের উৎপাদন বাড়ছে

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪.২৪ কোটি এবং ২০১৯-২০ সালে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে।

৮ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম উৎপাদনের যে হিসাব দিয়েছে, সেই হিসাব অনুযায়ী ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ডিমের বার্ষিক উৎপাদন দাঁড়াবে প্রায় ৩২৯৪ কোটিতে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৪৬৪৯ কোটিতে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here