পৃথিবীর দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসা প্রকাণ্ড এক গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা, যার আকার চার কিলোমিটারেরও বেশি। বিজ্ঞানীদের হিসাবে, এক কিলোমিটার আকারের একটি গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানলেই মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে এর প্রায় চারগুণ আকারের পাথরখণ্ডটি মানবজাতির জন্য অনেক বড় হুমকি বলে মনে করছেন তারা।

সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি এক্সপেস জানায়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ (সিএনইওএস) ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার আকারের প্রকাণ্ড গ্রহাণুটির সন্ধান পায়। এর নাম দেয়া হয়েছে ৫২৭৬৮ (১৯৯৮ ওআর২)।

নাসার হিসাবে, গ্রহাণুটি প্রতি সেকেন্ডে ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার বেগে (ঘণ্টায় ৩১ হাজার ৩২০ কিলোমিটার) পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। এই গতিতে আসতে থাকলে ২০২৯ সালের এপ্রিলে পৃথিবীর সংস্পর্শে আসবে বিশাল পাথরখণ্ডটি।

জোর্তিবিজ্ঞানীদের মতে, মানবসভ্যতা ধ্বংস করার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রহাণু প্রতি ১০০ বছরে ৫০ হাজারবারের মধ্যে একবার পৃথিবীতে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জোর্তিবিজ্ঞানী ড. ব্রুস বেটস বলেন, কয়েক মিটার আকারের ছোট ছোট গ্রহাণু প্রতিনিয়ত আসছে, সেগুলো বায়মণ্ডলেই পুড়ে যায় এবং ক্ষয়ক্ষতি খুবই কম করে। চেলায়াবিনস্ক (রুশ শহর) আকারের গ্রহাণু- আকার ২০ মিটারের মতো, ২০১৩ সালে আঘাত করেছিল। এতে শকওয়েভ তৈরি হয়, যাতে জানালা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল এবং মানুষ হতাহত হয়েছিল।

‘টুঙ্গুসকা আকার- প্রায় ৪০ মিটারের গ্রহাণুটি ১৯০৮ সালে সাইবেরিয়ায় আঘাত করেছিল। এটি গোটা একটা শহর ধ্বংস করা বা সুনামি তৈরি করতে পারতো। বৃহত্তর গ্রহাণু, যা অনেকটা কমই আঘাত করে, সেগুলো আঞ্চলিক ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হতে পারে। এমনকি আরও কম আঘাত করা বড় গ্রহাণুগুলো বৈশ্বিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে।’

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনেও এ ধরনের প্রকাণ্ড গ্রহাণুর ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।

সিএনইওএসের প্রস্তুতি বিষয়ক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এক কিলোমিটারের কাছাকাছি বা এর চেয়ে বড় বস্তুগুলো বিশ্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। এগুলো ভূমিকম্প, সুনামি এবং এলাকায় তাৎক্ষণিক প্রভাবের চেয়েও বহুদূর বিস্তৃত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রভাব ফেলতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ১০ কিলোমিটার আকারের একটি গ্রহাণুর আঘাতেই পৃথিবী থেকে ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here