মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর কাছে সব হারিয়েও দমে যাননি বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী। আমৃত্যু মাথা উঁচু করে মানবতার কথা, স্বাধীনতার কথা বলে গেছেন। তার সংগ্রামী জীবন থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে। পাঠ্যবইয়ে রমা চৌধুরীর জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তরুণ প্রজন্ম পড়ে অনুপ্রেরণা পাবে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীর মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত রমা চৌধুরীর স্মরণানুষ্ঠানে বক্তরা এসব কথা বলেন। রমা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে রমা চৌধুরী স্মৃতি সংসদ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখন এমন একটি সময় চলছে- যেখানে সবাই পেতে চায়। তবে রমা চৌধুরী এ দলে ছিলেন না। তিনি অর্থকষ্টে থেকেও কারও কাছে হাত পাতেননি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা প্রস্তাবও হাসিমুখে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার জীবনী শুধু স্মরণ করলেই হবে না। এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে রমা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ‘চীরদ্রোহী অগ্নিশিখা’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন শহীদ জয়া মুশতারি শফি। পরে ভাস্কর ডিকে দাশ মামুনের তৈরি করা রমা চৌধুরীর আবক্ষ মূর্তির উন্মোচনও করেন তিনি।
রমা চৌধুরী নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, কবি ও লেখক বাদল সৈয়দ, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, অধ্যাপক রীতা দত্ত, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, সম্মিলিত আবৃত্তি জোট চট্টগ্রামের সভাপতি অঞ্চল চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফজল হোসেন, রমা চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহচর আলাউদ্দিন খোকন প্রমুখ।
২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন ‘একাত্তরের জননী’ রমা চৌধুরী। কোমরের আঘাত, গলব্লাডার স্টোন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
১৯৩৬ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন রমা চৌধুরী। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। চার ছেলে সাগর, টগর, জহর এবং দীপংকরকে নিয়ে ছিল রমা চৌধুরীর সুখের সংসার।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হাতে দুই ছেলেকে হারানোর পাশাপাশি নিজের সম্ভ্রমও হারান রমা চৌধুরী। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার ঘর-বাড়ি। তবুও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি এ বীরাঙ্গনা।
শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা। লিখে ফেলেন ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’ সহ একেএকে ১৮টি বই। এসব বই বিক্রি করেই চলতো তার সংসার।
বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীকে গণভবনে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে সরকারি সহায়তার প্রস্তাব দেন তিনি। তবে হাসিমুখে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রমা চৌধুরী। বলেছিলেন, কারও দানে বা সহায়তায় নয়- বই বিক্রি করেই জীবন চালাতে চান তিনি।