নগর প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম পরীর পাহাড়ের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত-অনুমোদনহীন স্থাপনাসমূহ অপসারণের জন্য সরকারি ২৫টি দফতর থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে চিঠি দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতক সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পরীর পাহাড়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক ০১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে অবৈধভাবে ২টি ভবন নির্মাণের অপচেষ্টার পরিপ্রেক্ষতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত পত্রানুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উক্ত ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে নতুন কোন ভবন নির্মাণ না করা এবং ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক অবৈধভাবে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নতুন দৃুটি ভবন নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান জেলা প্রশাসন ও আইনজীবীরা। জেলা প্রশাসন ও বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদগণ বলছেন, প্রস্তাবিত ভবন দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুমোদনহীন।

আইনজীবী সমিতি বলছেন, অনুমোদন নিয়েই ভবন করছেন আইনজীবীরা। এর পর থেকে শুরু হয় জবাব পাল্টা জবাবের। এর পর থেকে একে একে সরকারের ২৫ টি দফতর পরীর পাহাড় থেকে অবৈধ ও অনুমোদনহীন স্থাপনা সরাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে দফায় দফায় চিঠি প্রদান করে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে পরীর পাহাড়ে ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত ফাঁকা জায়গায় দুটি বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণে পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহবান করলে এ দ্বন্দ্বের সুত্রপাত হয়।আইনজীবীদের দরপত্র আহবান বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী সমিতির সদস্যদের গাত্রদাহ শুরু হয়।
চিঠি দেয়া সরকারি দফতর গুলো হলো ঃ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা চট্টগ্রাম, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৯, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও পুলিশ অধিদফতর। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো বলেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত ও অনুমোদনহীন স্থাপনাসমূহ অপসারণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দানের জন্য অনুরোধ করেছেন। ভূমি মন্ত্রণালয় বা সরকারি কোন সংস্থার অনুমোদন ব্যতীত ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরিকল্পিত অবৈধ স্থাপনা না গড়তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ভুমি মন্ত্রণালয় পরীর পাহাড় এলাকায় সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় শ্রেণির জমিতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি যেন পুনঃরায় অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি দখল না করতে পারে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ ও ভুমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘেœর আশঙ্কা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। পরীর পাহাড় এলাকায় সরকারি ভবন ও স্থাপনাসমূহ ব্যতীত জেলা প্রশাসকের অনুমোদনপত্র ছাড়া কোন প্রকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান না করার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুরোধ করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর মন্ত্রীপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে ১ক শ্রেণির কেপিআই প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রামর সার্বিক নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে নির্মিত আইনজীবী ভবন সরানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগ চউককে আইনজীবী ভবন অপসারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে এবং পাশাপাশি কিভাবে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে অনুমোদন দেয় তার কারণ দর্শানোর জন্যে ব্যাখ্যা চায়। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সরকারী বিভিন্ন দপ্তরগুলো আইনজীবী ভবন অপসারণের জন্যে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরীর পাহাড়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় প্রায় ১৩০ বছর আগে। বর্তমানে এখানে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন, আইনজীবীদের অবৈধ পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে। এগুলো ছাড়াও এর চারদিকে অপরিকল্পিত ও অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পরীর পাহাড়ে মানুষের ভীড়, রাস্তার দুই পাশে গাড়ি পার্কিং, বিভিন্ন দোকানপাট, খাবার হোটেল, কম্পিউটার দোকান, এমনকি কাঁচাবাজার ও শুঁটকির দোকান পর্যন্ত রয়েছে। নানারকম দোকানপাট ও স্থাপনা মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ অবৈধ স্থাপনা আছে পরীর পাহাড়ে। এসব স্থাপনা পরীর পাহাড়ের সৌন্দর্যকে ম্লান করছে। নষ্ট করছে পরিবেশ। চট্টগ্রা জেলা প্রশাসন বর্তমানে পরীর পাহাড়ে গড়ে উঠা এসব জঞ্জাল ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও আইনজীবীরা নানামুখী বাধা সৃষ্টি করার কারণে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারছেনা ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা শ্রেণির জমির কোনো রূপ পরিবর্তন করা যাবে না। এটা আইনি বাধ্যবাধকতা। বাঁশখালী, মিরসরাই, লোহাগাড়াতে অনেক পাহাড় কাটা বন্ধ করেছি। চট্টগ্রামের অবৈধ ১৫৬টি ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে পাহাড় শ্রেণির জমিতে হওয়াতে। পরীর পাহাড়ে ওঠার পথে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন লাগোয়া পথের পাশে আইনজীবী সমিতি ভবন। সেখানে পরপর এনেক্স-১, এনেক্স-২, শাপলা ও দোয়েল ভবন। পাঁচ ভবনের কোনোটিতে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তার উপর আবার আরও দুটি নতুন ভবন নির্মাণ। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ও ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা যায়, আইনজীবীদের অবৈধ পাঁচটি ভবনে মোট সাড়ে তিন হাজার আইনজীবীর চেম্বার। বর্তমানে সমিতির ভোটার ছয় হাজার। এমন অবস্থায় নতুন করে আরও দুটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সমিতি। সে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুমোদনহীন বলছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই পরীর পাহাড় নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তর পরীর পাহাড় নিয়ে তাদের দেয়া রিপোর্টে আইনজীবীদের অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৫টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।যারফলে পরীর পাহাড়ে যে কোন সময় অগ্নিকান্ড, পাহাড় ধ্বস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে তাদের দেয়া রিপোর্টে উপস্থাপন করেছেন।
প্রস্তাবিত নতুন ভবন দুটির নামকরণ করেছে আইনজীবী সমিতি। একটি হলো ‘একুশে ভবন’ অন্যটি শাপলা ভবনের পাশে প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’। নামকরণের ক্ষেত্রেও তারা কোন কতৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি।বৈধতা দেয়ার জন্যেই এ দুটি নাম ব্যবহার করা হয়েছে ।ভবন দুটিতে মোট ছয়শ চেম্বার হবে। এ জন্য ৩ মাস পূর্বে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চেম্বার বরাদ্দ দিতে তারা আবেদন আহ্বান করে ও প্রতিটি চেম্বারের জন্যে দুই লক্ষ টাকা বুকিং মানি নির্ধারণ করে ।
জেলা প্রশাসক বলছেন, যেহেতু ভবন দুটির জায়গাও পাহাড় শ্রেণির জমি। তাই চাইলেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করতে পারবেনা। এখানে ভূমিকম্প, ভূমিধস বা অগ্নিকান্ডের মত কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যপক প্রাণহানির আশঙ্কা আছে, যা ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের রিপোর্টে উঠে এসেছে। তাই সবাই যেন সচেতন থাকে এবং ভবিষ্যতে কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে যাতে কেউ এড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনার কারণে পরীর পাহাড়ের উঠানামার রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় অগ্নিকান্ডসহ যেকোন দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধারকারী টিম ও যানবাহন দ্রুততার সাথে এ স্থানে আসতে পারেনা সেজন্যেই সকলকে সতর্ক করতে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে। পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের চিহ্নিত ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়, কালেক্টর, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি।
উল্লেখ্য যে,আইনজীবী সমিতির নির্মিত ০৫টি বহুতল ভবনের সবগুলোরই নকশা অনুমোদিত নয় এবং ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সামরিক শাসনামলে আইনজীবী সমিতিকে ১৪৮৮৮ নং যে লীজ দলিলমূলে ০.১২৯০ একর তথা ১২.৯০ শতক জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয় সে একই লীজ দলিল ব্যবহার করে ০১টি ভবনের স্থলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) আইনজীবী সমিতিকে বিভিন্ন সময়ে পরপর ৫টি বহুতল ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন প্রদান করে। সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমির লীজ দেয়ার প্রথম শর্তেই দেয়া আছে নকশা অনুমোদন করতে ও ভবন নির্মাণে জেলা প্রশাসককে অবিহিত করে অনুমতি নিতে হয় যার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সিডিএ এসব অবৈধ স্থাপনার অনুমোদন দেয়, আর সেজন্যেই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিডিএকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্পষ্টতই শুধু লীজ দলিলের ভিত্তিতে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। আবেদনকারীর মালিকানার স্বপক্ষে কোন খতিয়ান, রেকর্ড, নামজারী খতিয়ান কিংবা ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের কোন রসিদ চউক যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করেনি অথবা সচেতনভাবেই মালিকানা প্রমাণের এ সকল দলিলাদি/কাগজপত্রাদি উপেক্ষা করেই নকশা অনুমোদন করা হয়েছে।
পরীর পাহাড় পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামসর্বস্ব মিনার ও জিরোপয়েন্ট সংস্কারসহ পরীর পাহাড়ের আঙ্গিনাকে চমৎকার সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।

সৌজন্যে- নিউজ চাটগাঁ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here