পাহাড় ঘেরা পবিত্র নগরী মিনায় হাজার হাজার তাঁবুর নিচে অবস্থান করা হাজিরা ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে আরাফাতের ময়দানে এসে ইসলাম ধর্মের দিকনির্দেশনামূলক খুতবা শুনেছেন। আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেন ড. মুহাম্মদ বিন হাসান আল-শাইখ। খুতবায় মুসলিম জাহানের সকলের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থানের পর মুজদালিফায় হজের নির্দিষ্ট কিছু পর্ব শেষে আবার মিনা হয়ে মক্কায় যাবেন। সেসব স্থানে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি আর কাবা শরীফ তাওয়াফ করে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন।

ইসলাম ধর্মের নানা দলিল অনুসারে, হজের রয়েছে নানা রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক তাৎপর্য। ইসলাম ধর্মকে প্রেম ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের ধর্ম বলে উল্লেখ করা আছে। জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের দিকনির্দেশনাসহ বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে। এছাড়া হজকে পরকালের সফরের একটি মহড়াও বলা হয়ে থাকে। মৃত্যুর পর বান্দা সাদা কাপড়ে আবৃত হয়। কবরের জীবনের পরে হাশরের ময়দানে সবাই সমবেত হয় ভেদাভেদহীনভাবে। হজের ইহরামের সাদা কাপড় পরিধান, আরাফা, মুযদালেফায় সমবেত হওয়া তারই প্রতিচ্ছবি। ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের পরে মৃত্যুর পরে দীর্ঘমেয়াদি যে জীবনের উল্লেখ রয়েছে ধর্মগ্রন্থে, হজ সেই দর্শনকেই মনে করিয়ে দেয়।

হালালভাবে উপার্জিত সম্পদ বা অর্থ ব্যয় করে হজে যাবার প্রস্তুতিও হজের যাবার আগের সময়ের একটি পরীক্ষা। যা সারাবছর বা সারাজীবন একজন মানুষকে একজন শুদ্ধ মানুষ হিসেবে তৈরি হতে সাহায্য করে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হজের এই দর্শন ঠিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলমানসহ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা, তা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে লোক দেখানো হজ বা ওই লাখ লাখ টাকা কীভাবে উপার্জিত, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

এছাড়া হজের সময়ে হাজিরা পশু কোরবানি করেন, হজের পরে পবিত্র ইদুল আযহার উপলক্ষে সারাবিশ্বের মুসলমানরাও কোরবানি করে থাকেন। সেই পশু কোরবানিরও রয়েছে ধর্মীয় ইতিহাস ও দর্শন। কোরবানির সেই বোধ ও দর্শনও বেশিভাগসময় মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে দেশের মুসলমানদের। ঈদ উৎসবের সঙ্গে কোরবানি করা কিন্তু ধর্মীয় একটি পর্ব, যার রয়েছে ত্যাগ ও সংযমের আদর্শ। কিন্তু পশু ক্রয় নিয়ে সমাজে একটি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব কাজ করে, আর দান না করে ভোগ করার ভুলে পা দিচ্ছেন অনেকে। এ বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে ঈদকে কেন্দ্র করে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও প্রতিবেশীসহ দুর্গত মানুষদের কল্যাণে অবস্থাসম্পন্নরা এগিয়ে আসতে পারেন। আমরা মনে করি, লোক দেখানো প্রতিযোগিতায় না নেমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাজ করা উচিত। পবিত্র হজ ও কোরবানির ভাবাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে আদর্শ, শান্তিপূর্ণ ও মানবিক সমাজ গড়ে উঠবে, এই আমাদের প্রত্যাশা।

এবি/ টিআর -১১-৮-২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here