বিভাগের সম্পাদক

হজ্ব নামাজ, রোজা ও যাকাতের ন্যায় ইসলামের একটি বিশিষ্ঠ রোকন এবং ফরজে আইন এবাদত। উহা সারা জীবনে একবার প্রত্যেক এমন ব্যক্তির উপর ফরজ, যাহাকে আল্লাহ তা‘য়ালা এই পরিমাণ সম্পদ দান করিয়াছেন যে, নিজ দেশ হইতে মক্কা মোকাররম পর্যন্ত যাতায়াত করিতে সক্ষম এবং হজ্ব হইতে ফিরিয়া আসা পর্যন্ত আপন পরিবারবর্গের আবশ্যকীয় ব্যয় বহন করিতে সমর্থ। হজ্ব ফরজ হওয়ার বিষয়টি কোরআন, হাদিস, ইজমা এবং যুক্তি দ্বারা প্রমানিত।

পবিত্র কোরআন এর মাধ্যমে হজ্ব ফরজ হওয়ার প্রমাণ :-
হজ্ব ফরজ হওয়ার বর্ননা পবিত্র কোরআন এর বিভিন্ন আয়াতে বিদ্যমান রহিয়াছে। যেমন:-
১। মানুষের উপর আল্লাহর এই অধিকার রহিয়াছে যে যাহারা তাঁহার ঘর (বাইতুল্লাহ্ শরীফ) পর্যন্ত পৌছিবার সামর্থ রাখে তাহারা যেন উহার হজ্ব সমাপন করে। বস্তুত: যাহারা এই নির্দেশ পালন করিতে অস্বীকার করিবে (তাহাদের জানিয়া রাখা উচিত যে) নিশ্চই আল্লাহ্ সমগ্র সৃষ্টিজগতের কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন। আয়াত : ৯৭, সূরা আল-ইমরান
২। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব ও উমরা পূর্ন কর। আয়াত : ১৯৬, সূরা বাকারা
৩। নিশ্চয় মানবজাতীর জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল তা তো বক্কায় (মক্কা); তা বরকতময় ও বিশ্ব জগতের দিশারী। এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রহিয়াছে। যেমন মাকামে ইবরাহীম। আর যে ব্যাক্তি তাতে প্রবেশ করিবে সে নিরাপদ। আয়াত : ৯৬-৯৭ সূরা আল-ইমরান
৪। মানুষের নিকট হজ্ব এর ঘোষনা করিয়া দাও, তাহারা তোমার নিকট আসিবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্র সমূহের পিঠে চড়িয়া তাহারা আসিবে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করিয়া। আয়াত : ২৭ সূরা হজ্ব

পবিত্র হাদীস এর বানী :
১। হযরত আবু সাঈদ (রা:) হইতে বর্নিত রহিয়াছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা:) আমাদের সম্মুখে ভাষন দিতে যাইয়া বলিলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরজ করিয়াছেন। সুতরাং তোমরা অবশ্যই হজ্ব পালন করিবে। মুসলিম শরীফ
২। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা:) রাসূলুল্লাহ্ (সা:) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি বলিয়াছেন, ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। যথা: (১) আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল- এই সাক্ষ্য প্রদান, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) বায়তুল্লাহ্ শরীফের হজ্ব পালন করা এবং (৫) রমযানে রোজা পালন করা। বোখারী ও মুসলিম শরীফ
৩। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বর্ননা করেন, রসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করিয়াছেন, একটি উমরা হজ্ব অপর উমরা হজ্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী সমুদয় গুনাহর জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। আর হজ্বে মাবরুর বা মকবুল হজ্বের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নহে। বুখারী ও মুসলিম শরীফ
৪। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হইতে বর্নিত আছে যে, নবী করিম (সা:) কে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, কোন আমল সবচাইতে উত্তম? তিনি বলিলেন, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের (সা:) প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন। আবার জিজ্ঞাস করা হইল: ইহার পর কোন কাজটি সবচাইতে উত্তম? তিনি বলিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল: ইহার পর আর কোন কাজটি সবচাইতে উত্তম? জবাবে তিনি বলিলেন, ‘হজ্বে মাবরুর’ অর্থাৎ মকবুল হজ্ব। বুখারী ও মুসলিম শরীফ
৫। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হইতে বর্নিত আছে যে, রাসূলল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্ব পালন করিবে এবং হজ্ব সমাপনকালে স্ত্রী সহবাস কিংবা তৎসম্পর্কিত আলোচনা এবং কোন প্রকার গুনাহর কাজে লিপ্ত হইবে না, সে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হইয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফ
৬। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হইতে বর্নিত রহিয়াছে যে, রাসূলল্লাহ্ (সা:) এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি হজ্ব সমাপনের ইচ্ছা রাখে, সে যেন উহা যথাশীঘ্রই আদায় করিয়া নেয়। আবু দাউদ শরীফ

এবি/ টিআর ৪-৮-২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here