উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। আগামী ২০ জুলাইয়ের পর ধাপে ধাপে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে বহিষ্কারাদেশের চিঠি পাঠানো হবে কেন্দ্র থেকে।
দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলার পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে ফটিকছড়ি ও লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুজন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন।
শুধু আওয়ামী লীগের নয়, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেসব নেতা উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না—তা জানতে চেয়ে পাঠানো হবে কারণ দর্শানোর নোটিশ।
গত ১২ জুলাই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেই মূলত এই কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। এছাড়া নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে যেসব মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা কাজ করেছেন, তাদেরও কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দর্শানো কারণের জবাব যথার্থ না হলে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হতে পারেন অভিযুক্তরা।
শাস্তির মুখোমুখি হতে যাওয়া নেতারা
চট্টগ্রামে দলীয় পদে থাকার পরও সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় শাস্তির মুখোমুখি হতে যাওয়া নেতারা হলেন চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। বাঁশখালী উপজেলায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম। বোয়ালখালীতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল কাদের সুজন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের এডহক কমিটির সহ সভাপতি শ্রমিক নেতা এসএম নুরুল ইসলাম।
এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় কোনও পদে না থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন পটিয়ায় সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন। চন্দনাইশে এলডিপি থেকে এসে আওয়ামী লীগে ফুল দিয়ে যোগ দিলেও আনুষ্ঠানিক কোনো পদে না থাকা নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার।
অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও কোনও পদে নেই উপজেলা নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন। তবে তাদের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তাদেরও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করছেন নেতারা।
বিদ্রোহীদের বিষয়ে গত ১২ জুলাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো জেলা পর্যায়ে এসব বিদ্রোহীদের বিষয়ে কোনও নির্দেশনা আসেনি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যত তথ্য উপাত্ত কেন্দ্র থেকে চাওয়া হবে আমরা তা দিতে বাধ্য।’