জনতা ব্যাংক১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ৮৬০ শতাংশ জমি নিলামে তুলেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ৮৬০ শতাংশ জমি নিলামে তুলেছে। ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ডাকা হয়েছে নিলাম। গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের কাছে এই টাকা অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ২০ নভেম্বর। জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা থেকে এই ঋণ নেওয়া হয়। সে শাখাতেই নিলাম ডাকা হয়েছে।

জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে এস আলম গ্রুপ জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। ব্যাংকটির চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখার দেওয়া ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি নিয়েছে গ্রুপটি। এই শাখায় এস আলম গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটিতে বন্ধক রয়েছে ২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকার জমি ও স্থাপনা। আপাতত গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের ঋণ আদায়ে নিলাম ডাকা হলেও ধীরে ধীরে বাকি ঋণের জন্য অন্য বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলা হবে।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘গত জুনে গ্রুপটির ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। এরপর পুনঃ তফসিল করা হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনাপত্তি মেলেনি। ফলে ঋণ নিয়মিত হয়নি। সে জন্য টাকা আদায়ে নিলাম ডাকা হয়েছে।’

ব্যাংক সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপের এ ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে ১ হাজার ৮৬০ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের জমিগুলোর অবস্থান পটিয়া, কর্ণফুলী, কোতোয়ালি, চান্দগাঁও ও বাকলিয়া উপজেলায়। এসব জমির বাজারমূল্য ৩৫০ কোটি টাকার মতো।

সাধারণত নিলামের মাধ্যমে জমি বিক্রি করে টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের হবে। এরপর গ্রাহকের অন্য সম্পদ বিক্রি করে টাকা আদায়ের সুযোগ রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য এবং নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসায়ে জড়িত।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের আমলে তিনি একাধারে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেন। এরপর এসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বের করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব ব্যাংকের গ্রাহকেরা এখন তাঁদের টাকা ফেরত পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে এস আলম গ্রুপের কবল থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ ও নিলামের বিষয়ে এস আলম গ্রুপের বক্তব্য জানার জন্য সাইফুল আলম ও গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তাঁদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here